নারীদের স্তন-রোগের সনাক্ত করা সম্পর্কে

rupcare_dysmenorrhea2
স্তন রোগ দীর্ঘকাল ধরে বিপুল সংখ্যক নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে স্তন-হাইপারপ্লাসিয়া ও স্তন ক্যান্সার এমন একটি নারী ব্যাধি যা বেশি দেখা যায় । এটা নারীদের দৈহিক ও মানসিক অবস্থার জন্যও বিরাট হুমকি প্রদর্শন করে। স্তন রোগের মধ্যে বেশির ভাগের প্রথম লক্ষণ হলো ফোলা আকারের । ফোলা হলো স্তন রোগ পার্থক্য করা ও সনাক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকের স্বাস্থ্যের সন্ধানে স্তন রোগের সাধারণ লক্ষণ—স্তন ফোলা পার্থক্য করা ও সনাক্ত করা সম্পর্কে কিছু বলা হবে।
স্তন রোগ এমন একটি প্রচলিত রোগ যা নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করার এক প্রধান ব্যাধি, যার জন্য নারীদের অতি দুঃখ ও বেদনা ভোগ করতে হয় । স্তন-প্রদাহ, স্তনের হাইপারপ্লাসিয়া ,স্তন ফাইব্রেমা, স্তন-পূয এবং স্তন ক্যান্সার সহ পাঁচ ভাগে স্তন রোগ বিভক্ত ।যথাসময় বা সঠিকভাবে চিকিত্সা না হলে এর বিরূপ পরিবর্তন হতে পারে এবং যে কোনো সময় প্রাণহানি হতে পারে।
স্তন রোগের প্রধান অভিব্যক্তি হল স্তন-স্তূপ । এক-তৃতীয়াংশেরও কম রোগীর স্টিঙ ব্যথা বা মৃদু ব্যথাঅনুভূত হয় । তাছাড়া এক স্তনের নিপল থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে এবং অ-স্তন্যদানকালীন নারীদের মধ্যে এটা বেশি হয়।
ভাল ফলাফল পেতে চাইলে আগেভাগে সনাক্ত করা ও যথাসময় চিকিত্সা করা দরকার। প্রত্যেক নারীকে স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং নিজেই স্তন পরীক্ষা করা শিখে নিতে হবে । এভাবে আগেভাগে স্তন রোগ আবিস্কার করা সম্ভব ।
SANYO DIGITAL CAMERA
উদাহরণ, স্তনের হাইপারপ্লাসিয়া ও স্তন ক্যান্সার নারীদের স্তনে দেখা দেয়া দুধরনের প্রচলিত ব্যাধি । এ ব্যাধি দুটির অভিব্যক্তি দুই-ই স্তন-ফোলা হলেও এদের প্রকৃতি একেবারে ভিন্ন এবং চিকিত্সার পদ্ধতিও ভিন্ন । তাই যখন স্তনে কোনো ফোলা আবিস্কার করা হয় তখন যথাসময় হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা করাতে হবে । যাতে সঠিকভাবে সনাক্ত করা ও চিকিত্সা করা যায়। এ সম্পর্কে প্রফেসর লি হুইপিং বলেন, ফোলা আছে কিনা তা টিউমার সনাক্ত করার এক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ ।কিন্তু ফোলা মানেই টিউমার তা নয় । বিশেষ করে যুববয়সী নারীর স্তনের হাইপারপ্লাসিয়া হওয়ার সুযোগ বেশি । তাই কিভাবে স্তন পরীক্ষা করা হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।01
স্তনের হাইপারপ্লিআসিয়া এন্ডোক্রাইন ইমব্যালেন্সের কারণে সৃষ্টি হয় , যা প্রদাহ নয় এবং টিউমার নয় এমন ব্যাধির এক নাম মাত্র। এটা সহজে ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে হয়। চীনে ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেশি হয়। এটা টিউমার না হলেও আংশিক রোগীর মধ্যে এটা টিউমারে এবং অল্পসংখ্যক রোগীর মধ্যে ক্যান্সারে পরিবর্তনের আশংকা রয়েছে। বয়স বৃদ্ধির সাথেসাথে ক্যান্সারে পরিবর্তনের সুযোগও বেড়ে গিয়ে রোগটি মানুষ দেহে এক সুপ্ত হত্যাকারীতে পরিণত হয়।
সাধারণত স্তনের হাইপারপ্লাসিয়ার ফোলা স্তনে ফিউনিকিউলার,ম্যাসিভ বা সিসটিক নডিউলস আকারে দেখা যায়। এসব ফোলা নরম, এতে চাপ দিলে ব্যথার অনুভূতি লাগে। সীমারেখা স্পষ্ট এবং মানসিক অবস্থার সাথেসাথে এগুলোর পরিবর্তন হয় , কিন্তু এগুলোর আকার অল্পসময়ের মধ্যে বেড়ে যাবে না । কিন্তু ক্ষতিকর টিউমারের আকার অনিয়মিত ।
ফোলাগুলো সময়ের সাথেসাথে বেড়ে যাবে। বড়টা দশ-বারো সেনটিমিটার হতে পারে এবং ছোটটা ০.৫সেনটিমিটার হতে পারে। যে টিউমারগুলো ০.৫ সেনটিমিটারের সময় ধরা পড়ে সে টিউমারগুলোর বেশির ভাগ ক্যান্সারের প্রথম ধাপ।
সাধারণত চিকিত্সাবিদ্যার দিক থেকে ফোলার আকার অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ফোলার সময় সনাক্ত করা যায়। তবে ব্যতিক্রমও আছে ।যেমন স্তনের সিম্পল পূযের মধ্যে কোনো কোনো পূয অল্প সময়ের মধ্যে স্পষ্টভাবে বেড়ে যেতে পারে এবং পাশাপাশি স্পর্শ করলে ব্যথার অনুভূতি হতে পারে। আর কোনো কোনোটা বড় হলেও স্পষ্ট ব্যথা নেই এবং সহজে ভুল করে একে ক্ষতিকর টিউমার হিসেবে সনাক্ত করতে পারে।
কেন স্তন রোগ বিপুল সংখ্যক নারীর মধ্যে ঘনঘন হয়?বংশগত কারণ ছাড়া মন্দা অভ্যাসের সঙ্গে এ সম্পর্কিত বলে প্রফেসর লি মনে করেন । তিনি বলেন,আরেকটা কারণ হল স্বাস্থ্যকর খাদ্যের ওপর মানুষদের অতিরিক্ত চাহিদার বৃদ্ধি। যেমন অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও অতিরিক্ত স্বাস্থ্য বজায় রাখা । বিশেষ করে পাশ্চাত্যকায়নের খাদ্য-প্রনালীর ফলে স্তন ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি পাবে। প্রোটিনপূর্ণ,চবিপূর্ণ এবং ক্যালরিপূর্ণ খাদ্যের সবচেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাব রয়েছে।
বংশগত কারণ ও খাদ্যের মন্দ অভ্যাস ছাড়া স্তন রোগে আক্রান্তের বিপজ্জনক উপাদানের মধ্যে আরও রয়েছে,অবিবাহিতা , অল্পবয়সে রজঃস্রাব হয় এবং অপেক্ষাকৃত আগে রজোনিবৃত্তি হয় এমন নারী । তাছাড়া স্তন রোগের স্তন ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি। এক স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়লে অন্য স্তনটির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যাবে।2
প্রফেসর লি নারী বন্ধুদের জানান, পরীক্ষা করা স্তন রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে যে রেডিওগ্রাফিক পরীক্ষা প্রয়োজন হয় তার মধ্যে রয়েছে এক্স রে পরীক্ষা,আল্ট্রাসনিক পরীক্ষা,তাপইমিজ পরীক্ষা,সিটি পরীক্ষা ও চৌম্বক অনুনাদ ইমিজিং এবং গবেষণাগার পরীক্ষা। বাইয়পসির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে স্তন ক্যান্সার চিহ্নিত করতে হবে।
স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করার পর ডাক্তার রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিত্সার পদ্ধতি তৈরি করেন। যথাসময় এন্ডোক্রাইন পুনর্গঠিত হওয়ার পর স্তনের ফোলা ও ব্যথা কমে যাবে । ওষুধ ব্যবহারের পর জরুরী স্তন প্রদাহের ব্যথাও প্রশমিত হতে পারে। প্রতিরোধের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রফেসর লি বলেন, বাচ্চা হওয়ার পর মায়েরা বাচ্চাকে নিজের দুধ খাওয়াবেন বলে আমি আশা করি । কারণ মায়ের দুধ বাচ্চা এবং মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী । তাছাড়া খাদ্যপ্রনালীর ভারসাম্যতা বজায় রাখতে হবে। বিশেষ করে যৌবনান্তকালীন নারীরা অন্ধভাবে এস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিবেন না।index
স্তন রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে বলতে গেলে প্রফেসর লি বিশেষভাবে স্তনের হাইপারপ্লাসিয়ারউদাহরণ করে দেন। কারণ রোগটিতে আক্রান্তের হার অত্যন্ত উচ্চ। প্রায় ৯০শতাংশ নারী ভিন্ন পর্যায়ের স্তন হাইপারপ্লাসিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। কিভাবে রোগটির ক্যান্সারে পরিনত হওয়াকে প্রতিরোধ করা যায়? মনোবিদ্যাগত দিক থেকে চিকিত্সা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী বন্ধুদের সঠিকভাবে রোগটি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।অতিরিক্ত উদ্বেগ,উত্কন্ঠা ,দুঃখ ও বেদনা এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে এবং সবসময় আনন্দের মনোভাব পোষণ করতে হবে। তাছাড়া স্থূলত্ব প্রতিরোধে তেলে ভাজা জিনিস, প্রাণীজচবি ও মিষ্টি কম খাবেন ।শাকসব্জি ও ফল, মোটা আঁশের খাদ্য, কালো সোয়াবিন, কালো তিল,ছত্রাক বেশি খাবেন । নিয়মিতভাবে শরীরচর্চা ,জীবনযাপন এবং পরীক্ষা করাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *