নারীদেহের নীরব ঘাতক এক ক্যান্সার!!!

996500_599209866777379_471382922_n
পৃথিবীতে যেসকল ক্যান্সার রোগ বিস্তার লাভ করেছে তার মাঝে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার (সাধারণত জরায়ু ক্যান্সার নামে পরিচিত) বা Cervical Cancer সারাবিশ্বের অকালে নারীমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত ১৫-৪৫ বছরের নারীদের শরীরে এই ক্যান্সারের ভাইরাস আক্রমন করে, কিন্তু লক্ষন প্রকাশের আগে ২ থেকে ২০ বছর এই ভাইরাস নারীদেহে সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে,এজন্যে এই ভাইরাসকে নীরব ঘাতক বলা হয়।আবার এই ভয়ানক ভাইরাস একই শরীরে একাধিকবারও আক্রমণ করতে পারে!!!

হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে Cervical Cancer এর কারণে প্রতি ২মিনিটে ১জন নারীর মৃত্যু ঘটে। প্রতিবছর ৫০ লক্ষের বেশি নারী নতুনভাবে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ৮০% নারীর জীবনে কোন না কোন সময়ে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুকি রয়েছে । এ ক্যান্সার ভয়াবহ হলেও সঠিক সময়ে রোগটি ধরতে পারলে কিন্তু এ ক্যান্সার থেকে সহজেই মুক্তি মেলে। এটা একমাত্র ক্যান্সার যেটা প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করতে পারলে পুরোপুরি ভাল হয়ে যায়।

বিশ্বব্যাপি বিস্তার1-11

জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ১২তম সবচেয়ে পরিচিত রোগের নাম। নারীদের জন্য ৫ম প্রাণঘাতী রোগের নাম জরায়ুমুখ ক্যান্সার। প্রতিবছর লাখে ১৬ জন নারী এই রোগে আক্রান্ত হন। যাদের ৮জনই মৃত্যুবরন করেন। আনুমানিক ৮০শতাংশ উন্নয়নশীল দেশের নারীরা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী ৪৭৩,০০০ টি জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঘটনা জানা যায়। ২৫৩,০০০ জনের প্রতিবছরে মৃত্যু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে ৮ম কমন রোগ। ১৯৯৮ সালে ১২,৮০০ মার্কিন নারীর মধ্যে ৪,৮০০ জন মৃত্যুবরন করেন।২০০৮ সালে ৩,৮৭০ জন মার্কিন নারী এই রোগে মারা যায় বলে ধারনা করা হয়।1604424_594459220622158_1199811470_n

দক্ষিণ এশিয়া মূলত জরায়ু ক্যান্সারের জন্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।বাংলাদেশে প্রতিবছর সাড়ে ৬ হাজারের বেশি নারী জরায়ু ক্যান্সারে মারা যায়,(গড়ে প্রতিদিন ১৮ জন) আর প্রতিবছর আরও ১৩ হাজার নারী নতুন করে জরায়ু-ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। প্রতিদিন গড়ে সারাদেশে ১৮ জন নারী মারা যাচ্ছেন জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ থেকে সর্বশেষ প্রকাশ করা প্রতিবেদনমতে, ২০০৫ সালে পাঁচ হাজার ৪১১ জন মোট ক্যান্সার শনাক্ত রোগীর মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬১ জন।এ ক্যান্সারে আক্রান্ত ৫৬১ জনের মধ্যে ২১৩ জনেরই বয়স ছিল ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সের মধ্যে। আর ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে ছিল ২৬ জন।

সংক্রমণtumblr_me8c2fMjbI1qeo1dvo1_400

জরায়ুমুখ ক্যান্সার ১৫-৪৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে দেখা যেতে পারে, কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশের প্রায় ২ থেকে ২০ বছর আগেই একজন নারী এ রোগের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন।২০ বছরের কম বয়সীদের নিচে এ রোগ সাধারণত হয় না। আক্রান্তরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন। ৬০ বছরের পরও এ রোগ হতে পারে, তবে সংখ্যা তুলনামূলক কম।

হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (HPV) জরায়ুমুখের ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ, তবে এটি একমাত্র কারণ নয়। যৌন সংযোগে এর সংক্রমণ ঘটে। সংক্রমণের এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জরায়ুমুখের স্বাভাবিক কোষ পরিবর্তিত হতে থাকে এবং একসময় তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। এযাবৎ (প্রেক্ষিত ২০১০) ১০০ ধরণের এইচপি ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই জরায়ু ক্যান্সারের জন্য অতোটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে এইচপিভি-১৬, এইচপিভি ১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু প্রায়ই এইচপি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এতে কোনো উপসর্গ থাকে না বা শারীরিক পরীক্ষায় কোনো চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যায় না। এর জন্য কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাবলে ১৮-২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু প্রায় সব এইচপি ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যায়। জরায়ুতে এইচপি ভাইরাস দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, জরায়ু কোষে পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়।

পেপস স্মেয়ার টেস্ট1

পেপস স্মেয়ার টেস্ট বা প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট, এজাতীয় ক্যান্সার সনাক্তকরণের একটি সহজ পরীক্ষা। জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ক্যান্সার, ক্যান্সার হওয়ার পূর্বাবস্থা ও জরায়ুমুখের অন্যান্য রোগ যেমন প্রদাহ (ইনফ্লামেশন) সনাক্ত করা যায়। এটি একটি ব্যথামুক্ত ও সাশ্রয়ী পরীক্ষা পদ্ধতি। সাধারণত বিবাহিত নারীদের ২১ বছরের পর থেকে এ পরীক্ষা শুরু করা যেতে পারে এবং দুই বছরে একবার করে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত, যাদের ফলাফল তিনবার ‘স্বাভাবিক’ এসেছে, তাঁরা প্রতি তিন বছর পর পর এই পরীক্ষা করা উচিত।তবে চিকিৎসকের পরামর্শে এ রুটিনের পরিবর্তন হতে পারে।

প্রতিরোধক
সাধারণত ১০ বছর বয়সের পর থেকেই জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধক টিকা নেয়া যায়। মোট তিন ডোজ টিকা নিতে হয়।প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজের ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে হয়। টিকা গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত পরীক্ষা করালে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের আক্রমণ হার কমিয়ে আনা যায়। ভাইরাস এইচপিভি-১৬, এইচপিভি-১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১-এর প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নিয়মানুযায়ী নয় থেকে ২৫ বছর বয়সে এ টিকা কার্যকর হয়। গর্ভাবস্থায় এ টিকা প্রদানের অনু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *