নিউমোনিয়া, ফুসফুসের প্রদাহ

Pneumonia & its homeopathic cure (নিউমোনিয়া, ফুসফুসের প্রদাহ):-

ঈদ উপলক্ষে সেদিন বেড়াতে গিয়েছিলাম শ্বশুরবাড়িতে। সকালে শুনলাম ওদের এক প্রতিবেশীর দুতিন বছরের একটি ছেলে মারা গেছে। নিজের দুই বাচ্চাকে নিয়ে দেখতে গেলাম। ঐ বাড়ির এক মুরব্বী শিশুটির মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দেখার সুযোগ করে দিলেন। মৃত শিশুটির নিষ্পাপ মুখটি দেখে মুহূর্তের মধ্যে মনটি বিষাদে ভরে উঠল। একবার ভাবলাম এই শিশুটির মতো আমার বাচ্চাদের এই অবস্থা হলে আমার মনের অবস্থা কেমন হতো ? ভেতরের রুম থেকে শিশুটির মায়ের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ আসছিল। এতো বড়ো শোক কী সহ্য করার মতো ? শুনেছি আল্লাহ্‌ এই শিশুদেরকে তাদের পিতা-মাতার চাইতেও শতগুণ বেশী ভালোবাসেন। তাহলে এই নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যু কি তাকে ব্যথিত করে না ? মনে হয় করে না। কারণ মৃত শিশুরা মা-বাবার চোখের আড়ালে চলে গেলেও আল্লাহর চোখ থেকে আড়ালে যেতে পারে না। বরং তারা আল্লাহর আরো অধিকতর নিকটেই চলে যায়। পাপ-পঙ্কিলতায় জড়িত হওয়ার সুযোগ না পাওয়ার কারণে এসব শিশুরা বিনা হিসাবে বেহেশতে চলে যাবে বলে কোরআন-হাদীসে বলা হয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এসব শিশুরা তাদের পাপী মাতা-পিতাকে দোযখে রেখে নিজেরা বেহেশতে যেতে অস্বীকার করবে বলে, মহান আল্লাহ শিশুদের সন্তুষ্টির জন্য দয়াপরবশ হয়ে তাদের পিতা-মাতাকেও দোযখ থেকে মুক্তি দিয়ে একসাথে বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন।

শোনলাম শিশুটির পিতা রংপুরের কৃষি ব্যাংকে চাকরি করেন। ঢাকা এসেছিল ঈদ করার জন্য। শিশুটি হয়ত জান্নাতে চমৎকার ঈদ করবে কিন্তুতার মা-বাবার ঈদকে একেবারে মাটি করে দিয়ে গেলো। মুরব্বীর কাছে জানতে পারলাম যে, শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছিল। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশগুলোতে একশটি শিশু মারা গেলে দেখা যায় তার পঁচানব্বই জনেরই মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়ার মূল লক্ষণ হলো ঘনঘন শ্বাস নেওয়া এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। সাথে জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, বুকে ব্যথা, ভীষণ শীত বোধ করা ইত্যাদি থাকে। শিশুদের শ্বাস নিতে কষ্ট হলে প্রত্যেক পিতা-মাতাকে অবশ্যই বিষয়টিকে একটি ইমারজেন্সী সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এই রকম বিপজ্জনক অবস্থায় শিশুকে অবশ্যই সুদক্ষ, নামডাকওয়ালা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন- তা সে এলোপ্যাথিক ডাক্তার হউক আর হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হোক। নিউমোনিয়া রোগটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় খুব সহজেই সারানো যায়, এমনকি এলোপ্যাথিক চিকিৎসায়ও সারানো যায়।

তবে নিউমোনিয়ার এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় যে-সব হাই পাওয়ারের ভয়ঙ্কর বিষাক্ত এন্টিবায়োটিক শিশুদের খাওয়ানো হয়, তাদের বিষাক্ত ছোবলে শিশুদের স্বাস্থ্য চিরস্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কেউ কেউ কয়েক বছরের জন্য এবং কেউ কেউ সারাজীবনের জন্য কঙ্কালে পরিণত হয়ে থাকে। যেহেতু অধিকাংশ শিশুই এসব তিতা সিরাপ খেতে চায় না অথবা খেলেও বমি করে ফেলে দেয়, সেহেতু এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা তাদেরকে ইনজেকশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেহেতু অধিকাংশ শিশুরই শরীরে মাংশ কম, ফলে ইনজেকশান নিতে এই নিষ্পাপ শিশুদের যে অবনর্ণীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, তা স্বচক্ষে না দেখলে কেউ অনুভব করতে পারবেন না। অথচ হোমিওপ্যাথিতে কেবল মিষ্টি মিষ্টি ঔষধ মুখে খাওয়ানোর মাধ্যমে খুব সহজেই নিউমোনিয়া এবং টাইফয়েডসহ শিশুদের অধিকাংশ জটিল ইমারজেন্সী রোগ সারিয়ে দেওয়া যায়। এমনকি ঔষধ খাওয়াও লাগেনা, কেবল জিহ্বার ওপরে রাখতে পারলেই চলে। তাছাড়া খরচও এলোপ্যাথিক চিকিৎসার তুলনায় অন্তত একহাজার গুণ কম। আর সময় ? যদি রোগীর সমস্ত লক্ষণের সাথে মিলিয়ে সঠিক হোমিও ঔষধটি রোগীকে দেওয়া যায়, তবে রোগমুক্তি হবে অন্য যে-কোন চিকিৎসার চাইতে অন্তত দশগুণ দ্রুত গতিতে। পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ? বিষক্রিয়া ? এসব হোমিও ঔষধের ক্ষতিকর কোন প্রতিক্রিয়া তো নাই-ই ; বরং এগুলো একই সাথে শরীরের জন্য ভিটামিনের কাজও করে থাকে।

Bryonia Alba : ব্রায়োনিয়া ঔষধটি নিউমোনিয়ার জন্য আল্লাহ্‌র একটি বিরাট রহমত স্বরূপ। সাধারণত নিম্নশক্তিতে খাওয়ালে ঘনঘন খাওয়াতে হয় কয়েকদিন কিন্তু (১০,০০০ বা ৫০,০০০ ইত্যাদি) উচ্চশক্তিতে খাওয়ালে দুয়েক ডোজই যথেষ্ট। হ্যাঁ, অধিকতর জটিল কেইসের ক্ষেত্রে কয়েকদিন খাওয়ানো লাগতে পারে। আপনি যদি বড়িতে উচ্চশক্তির এক ড্রাম ব্রায়োনিয়া কিনে আনেন এবং তা থেকে একটি বড়ি আধা বোতল পানির সাথে মিশান এবং তা থেকে এক চায়ের চামচ পানি করে রোগীকে রোজ ৩ বার করে অথবা আরো ঘনঘন খাওয়ান ; এভাবে দুইদিন, চারদিন অথবা ছয়দিন পর যখন নিউমোনিয়া সেরে যাবে,
Ranunculus bulbosus : রেনানকুলাস বালবুসাস ঔষধটিও নিউমোনিয়ার আরেকটি শ্রেষ্ট ঔষধ।
Antimonium tartaricum : এন্টিম টার্টের প্রধান লক্ষণ হলো কাশির আওয়াজ শুনলে মনে হয় বুকের ভেতর প্রচুর কফ জমেছে কিন্তুকাশলে কোন কফ বের হয় না।রেগে গেলে অথবা খাওয়া-দাওয়া করলে কাশি বেড়ে যায়। জিহ্বায় সাদা রঙের মোটা স্তর পড়বে, শরীরের ভেতরে কাঁপুনি, ঘুমঘুম ভাব এবং সাথে পেটের কোন না কোন সমস্যা থাকবেই। কাশতে কাশতে শিশুরা বমি করে দেয় এবং বমি করার পর সে কিছুক্ষণের জন্য আরাম পায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার কারণে নাকের পাখা দ্রুত উঠানামা করতে থাকে।
Ipecac : ইপিকাক শিশুদের নিউমোনিয়ার অারেকটি জরুরি ঔষধ। ইহার প্রধান লক্ষণ হলো (যে-কোন রোগই হোক না কেন,তার সাথে)বমিবমি ভাব থাকে এবং জিহ্বা পরিষ্কার থাকে।এই ঔষধটি শিশুদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কারণ শিশুদের পেটের অসুখ এবং কাশি-নিউমোনিয়া বেশী হয় আর ইপিকাক এইসব রোগে দারুণ কাজ করে।
Phosphorus : নিউমোনিয়া বা এই জাতীয় বিপদজ্জনক রোগে আমাদেরকে অবশ্যই কথা মাথায় রাখতে হবে।ফসফরাসের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো রোগী বরফের মতো কড়া ঠান্ডা পানি খেতে চায়,মেরুদন্ড থেকে মনে হয় তাপ বেরুচ্ছে, হাতের তালুতে জ্বালাপোড়া,একা থাকতে ভয় পায়, অন্ধকারে ভয় পায় ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে সেটি আপনার চোখে ছানি সারিয়ে দিবে।
Sulphur : সালফার হলো বহুমুখী গুণাবলীসম্পন্ন ঔষধগুলোর একটি। নিউমোনিয়াতে যদি সালফারের লক্ষণ পাওয়া যায়, তবে সালফার প্রয়োগ করতে হবে। কোন রোগীকে সালফার দিতে হবে, তা চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, দেখবেন রোগী শরীরে যত ছিদ্র আছে সেখানকার রঙ টকটকে লাল হয়ে যাবে। যদি দেখেন যে, রোগী মুখের ভেতরটা, নাকের ভেতরটা, পায়খানার রাস্তা অথবা প্রস্রাবের রাস্তার রঙ টকটকে লাল হয়ে আছে, তবে তাকে নিশ্চিন্তে সালফার দিতে পারেন। সালফারের অন্য কোন লক্ষণ না থাকলেও চলবে। সে যাক, সালফারের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, রোগ রাতে বৃদ্ধি পাওয়া,রোগ গরমে বৃদ্ধি পাওয়া, মাথার তালু-পায়ের তালুসহ শরীরে জ্বালাপোড়া,গরম লাগে বেশী, শরীরে চুলকানী বেশী, সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, মাথা গরম কিন্তুপা ঠান্ডা, গোসল করা অপছন্দ করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে কোন খেয়াল নাইইত্যাদি।

Baptisia tinctoria : (ব্রায়োনিয়া বা রেনানকুলাস ব্যবহারে) মোটামুটি নিউমোনিয়ার ‍অবস্থা যথেষ্ট উন্নতি হলে অথবা নিয়ন্ত্রণে এসে গেলে তখন এন্টিবায়োটিক হিসাবে ব্যাপটিশিয়া ব্যবহার করতে পারেন।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইটwww.zamanhomeo.com

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
 ফেসবুক পেইজে লাইক দিন  https://web.facebook.com/zamanhomeohall/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *