জন্মের পর থেকে পূর্ণ ছয় মাস (১৮০ দিন) বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য শুধু মায়ের দুধই যথেষ্ট। মায়েরা একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন রোজার মাস এলে। মায়েরা ভাবেন রমজান মাসে রোজা রাখলে বিশেষ করে বিকাল বেলা ইফতারের আগে মা যখন ক্ষুধার্ত থাকেন তখন মায়ের দুধ কমে যাবে বা দুধ একেবারেই হবে না, এমন ভুল ধারণা পোষণ করেন। তাই অনেক মা রমজান মাসে তার ছয় মাসের কম বয়সি শিশুকে কৌটার দুধ বা অন্যান্য খাবার দেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর পর প্রথম ৪০ দিন ইসলামী বিধান মতো মায়েদের রোজা রাখার প্রয়োজন নেই, যদি প্রসব পরবর্তী ৪০ দিনের মধ্যে রমজান মাস থাকে, তবে মায়েরা স্বাভাবিক খাবার খাবেন এবং শিশুকে শুধু মায়ের দুধ দিলে কোনো সমস্যা হওয়ার আশংকা নেই। রোজা রাখলে বিকালে মায়ের দুধ বিশেষ করে ইফতারের আগে কিছুটা কমে গেলেও দুধ তৈরি হওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয় না। দৈনিক ২৪ ঘণ্টায় পর্যাপ্ত পরিমাণ মায়ের দুধ তৈরি হবে, মা যদি সেহেরি ও ইফতারের সময় নিজের খাবারের প্রতি যত্নবান হন এবং দিনে শারীরিক পরিশ্রম বেশি না করে বিশ্রাম নেন এবং নিজেকে মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখেন, তবে সব সুস্থ মায়ের পক্ষে প্রত্যেক সুস্থ শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত যে কোনো বয়সী শিশুকে শুধু মায়ের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করানো সম্ভব। সেহেরির সময় মাছ, গোশতের সঙ্গে শাকসবজি, ডাল খাবেন। খাবার শেষে এক গ্লাস দুধ বা দুধের তৈরি কোনো খাবার এবং যে কোনো একটি মৌসুমি ফল খাবেন। সবশেষে পরিমিত পানি পান করবেন। ইফতারের সময় ভাজাপোড়া না খেয়ে টাটকা মৌসুমি ফল, সবজি বা মুরগির সুপ, খেজুর, প্রচুর শরবত, দই, পায়েস, পুডিং ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন। তবে ইফতারির সময় সারা দিন রোজা রাখার পর পেট ঠেসে ভরে খেতে হবে, এমন মানসিকতা পরিহার করতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার ধীরে ধীরে খাবেন। মাঝে মধ্যে পানি পান করবেন। খাবারের প্রতি যত্নবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিুলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ করুন। যেমন-
* দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় যতবার শিশু মায়ের দুধ চাইবে ততবার মায়ের দুধ টানতে দিতে হবে।
* ছয় মাস বয়স পর্যন্ত যে কোনো বয়সী শিশু যদি শুধু মায়ের দুধ পান করে এবং দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ছয়বার বা তার অধিকবার ভালো পরিমাণে প্রস্রাব করে তবে বুঝতে হবে শিশু পর্যাপ্ত মায়ের দুধ পাচ্ছে।
* মায়ের দুধ খেয়ে পেট ভরে গেলে শিশু নিজ থেকে দুধ ছেড়ে দেবে, খেয়াল করে দেখবেন আপনার শিশুর মধ্যে একটা তৃপ্তি এসেছে। দুধ খাওয়া শেষে জেগে থাকলে হাসিখুশি থাকবে, হাত-পা নেড়ে খেলবে অথবা শান্তভাবে ঘুমিয়ে পড়বে।
রমজান মাসের আগে শিশুর ওজন নেয়া থাকলে রমজান মাসে সম্ভব হলে প্রতি সাত দিন অন্তর ওজন নিন, যদি ওজন বাড়ে তাহলে ধরে নিন মায়ের দুধ শিশু পর্যাপ্ত পাচ্ছে। যদি ওজন একই রকম থাকে তাহলে অপেক্ষা করে সাত দিন পর আবার ওজন নিন। যদি দেখেন শিশুর ওজন কিছুটা হলেও কমে গেছে তবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এসব বিষয় লক্ষ রাখলে দেখবেন সত্যিই পূর্ণ ছয় মাস (১৮০ দিন) পর্যন্ত যে কোনো সুস্থ মা রোজা রেখেও পর্যাপ্ত পরিমাণে শিশুকে মায়ের দুধ পান করাতে পারবেন। লক্ষ্য রাখতে হবে মায়ের যেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয়। মানসিক দুশ্চিন্তা বা শারীরিক পরিশ্রম যেন বেশি না হয়। মায়ের দৃঢ় মনোবল তৈরি করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে মানসিক সহায়তার প্রয়োজন।
যদি কোনো শিশুর বয়স রমজান মাসে ছয় মাসের (১৮০ দিনের) অধিক হয়, তবে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য সহায়ক খাবার যেমন নরম খিচুড়ি, মৌসুমি ফল, ডিম, সুজির হালুয়া ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। কারণ শিশুর বয়স ছয় মাসের ঊর্ধ্বে হলে শুধু মায়ের দুধ শিশুর যথাযথ বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়।
★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন।
( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall