বয়ঃসন্ধিকাল

 ডাঃ এস.জামান পলাশ 

মেয়ে তুমি সুস্থ থাকোশরীর ও মনে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে বয়ঃসন্ধিকালে। বিশেষ করে মেয়েদের েেত্র পরিবর্তনটা হয় ব্যাপক। এ সময় মায়ের মতো কাউকে বন্ধু হিসেবে পাওয়া 545930_580861118599600_1160193261_nজরুরি। মা পারেন মেয়ের ভয় দূর করতে, মেয়েকে সুস্থ থাকার মন্ত্রণা দিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১১ থেকে ১৮ বছর বয়স হলো বয়ঃসন্ধিকাল। এ সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মনোদৈহিক পরিবর্তন ঘটে। মেয়েদের মাসিক শুরু হয়, স্তনের বৃদ্ধি হয়, গলার স্বর পরিবর্তিত হয়, যৌনাঙ্গের পূর্ণতা সাধিত হয়, নাভির নিচে এবং বগলে চুল হয়, শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে চর্বি জমা হতে শুরু করে এবং পুরুষদের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় বয়ঃসন্ধিকালে। অথচ এই সময়টায় মেয়েদের যেতে হয় নানা কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে। সংকোচ আর ভুল ধারণার কারণে শিকার হতে হয় স্বাস্থ্যগত বহু সমস্যার, যার ফল বহন করতে হয় সারা জীবন।
কেন এমন হয়?
কুসংস্কারের পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিকালে অপরিপক্ব বিষয়বুদ্ধির কারণে কিশোরীরা নিজ স্বাস্থ্যসমস্যার ব্যাপারে উদাসীন থাকে।
অনেক েেত্রই পরিবার বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের সমস্যা সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। এ সময়ের স্বাস্থ্যসমস্যাকেও পরিবার বা সমাজ স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। উদাহরণস্বরূপ ব্রণ, আয়রনের (লৌহ) অভাবহেতু রক্তস্বল্পতা, মানসিক উদ্বেগ ইত্যাদি।

প্রায় অর্ধেক নারী বয়ঃসন্ধিকালে কোনো না কোনোভাবে মাসিকের সমস্যায় ভোগেন; কিন্তু যথাযথ সহায়তা পান না চারপাশের মানুষগুলো থেকে।
কারণ প্রচলিত ধারণা এমন যে মাসিক শুরুর প্রথম কয়েক বছর মাসিকের সমস্যা হবেই।
আবার আর্থ-সামাজিক অসচ্ছলতা, মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ বা পারিবারিক মনোমালিন্য ইত্যাদি বিভিন্নভাবে বয়ঃসন্ধিকালের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। সব কিছু মিলে বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের মধ্যে যে ধরনের মনোদৈহিক সমস্যা দেখা যায়, তা সংেেপ আলোচনা করা হলো।
অপুষ্টি
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের শরীরের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। এ জন্য তাদের প্রয়োজন বাড়তি খাদ্য। এ খাদ্য অবশ্যই হতে হবে সুষম। খাদ্যতালিকা হবে পরিপূর্ণ। সব ধরনের ভিটামিন, খনিজ লবণ, আঁশজাতীয় খাবারসহ শর্করা, আমিষ এবং চর্বিজাতীয় খাবার থাকবে তাদের খাদ্যতালিকায়। অথচ কন্যাশিশুরা প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুসারে নিগৃহীত। ফলে অপুষ্টি এবং অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে তাদের আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজের অভাব থাকে বলে পরবর্তী সময়ে যখন গর্ভধারণ করে নিজেরাও সুস্থ থাকতে পারে না, সুস্থ সন্তানও জন্ম দিতে পারে না।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীায় দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে বয়ঃসন্ধিকালীন ৫০ শতাংশ শক্তি আসে ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবার থেকে। এটা কোনো অবস্থায়ই সুস্থ শরীরের জন্য কাম্য নয়। একই সঙ্গে কিশোরীদের খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম, লৌহ ও আঁশের অনুপস্থিতি ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্যের অন্তরায়। এ জন্য চর্বিনির্ভর ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড ইত্যাদির পরিবর্তে তাদের প্রয়োজন বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।

ওজনজনিত সমস্যা

ফাস্টফুড কিংবা অধিক মাত্রায় শর্করাজাতীয় খাদ্য (যেমন ভাত) গ্রহণ স্থূলতার জন্য দায়ী। এ কারণে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাসিকের সমস্যা, হাইপোথাইরয়ডিজম, বন্ধ্যত্বসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এর বিপরীত চিত্রও কিন্তু সুখকর নয়। কেউ কেউ আবার ডায়েটিংয়ের নামে এমন কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খান যে তাঁরা আক্রান্ত হন অপুষ্টিতে।
খাদ্যসংশ্লিষ্ট কিছু রোগ
অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা (ওজন হারানো, খাদ্যগ্রহণে অনীহা, একসঙ্গে প্রচুর মদপান করা অথবা পাতলা পায়খানার মাধ্যমে, অতিরিক্ত ব্যায়াম বা ওষুধ ব্যবহার করে ওজন কমানোর ফলে অপুষ্টি ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়া), বুলিমিয়া নারভোসা (সাধারণত ওজন ঠিক থাকে; কিন্তু মুটিয়ে যাওয়ার প্রতি এই রোগীদের অসম্ভব ভয় থাকে। তাই পানাহার করলেও এরা ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার বমি করে খাবার ফেলে দেয়। ফলে শরীরে লবণের অসমতা, হৃদরোগ, কিডনিরোগ ইত্যাদি দেখা দেয়।) রোগগুলোতে বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের আক্রান্ত হতে দেখা যায়। উভয় রোগই অভ্যাস থেকে তৈরি হয়।

* মাসিকের সমস্যা

অনিয়মিত মাসিক, অধিক ঝরাযুক্ত মাসিক, দীর্ঘদিন ধরে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি মাসিকজনিত সমস্যা বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের মধ্যে দেখা দেয়। বেশির ভাগ েেত্রই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে তারা পরামর্শ করে না। তাই পরবর্তীকালে দেখা যায়, রোগটি জটিল হয়ে যায়। এমনকি বহু েেত্রই পরিবারের কাছেও সমস্যাগুলো মেয়েরা লুকিয়ে রাখে।

যৌনরোগ

কিশোরীরা প্রায়ই ক্যামাইডিয়া ট্রাকোমাটিস ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়। শ্রোণীদেশীয় প্রদাহ রোগ এবং জননতন্ত্রের ওপর এ ইনফেকশনের প্রভাব পড়ে। এতে বন্ধ্যত্বের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া ট্রাইকোমোনিয়াসিস, হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস, হারপিস ভাইরাস টাইপ-২ ইত্যাদি ইনফেকশন বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীর মধ্যে দেখা যায়।
অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ
মাসিক শুরু হলেই একটি মেয়ে পূর্ণ নারীতে রূপান্তরিত হয় না। মাসিকের মাধ্যমে তার রূপান্তরপ্রক্রিয়া শুরু হয় মাত্র। কিন্তু আমাদের দেশের মতো আরো কিছু দেশে এ বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়, নিজেরা শিশু থাকা অবস্থায়ই জন্ম দেয় শিশুর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েরা প্রতিবছর ১৬ মিলিয়ন শিশু জন্ম দিয়ে থাকে, যা বিশ্বের সমগ্র জন্মহারের ১১ শতাংশ এবং এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ঘটে। তাই এখানে গর্ভজনিত জটিলতা, মাতৃমৃত্যুহার বেশি। মনে রাখতে হবে, বয়স ১৮ হওয়ার আগে মেয়েরা সন্তান জন্মদানের জন্য শারীরিকভাবে তৈরি থাকে না।

নেশায় আসক্তি

আমাদের দেশে কিশোরীদের মধ্যে তামাক, মদ এবং মাদকদ্রব্য গ্রহণের হার বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় কিছুটা কম হলেও ক্রমেই এটা বাড়ছে। পারিবারিক বন্ধনহীনতা বা ব্যস্ততার কারণে সন্তানের প্রতি মা-বাবার উদাসীনতা, অসৎ সংসর্গ, মাদকের প্রতি কৌতূহল, মা-বাবার তামাক পাতা বা মদজাতীয় মাদকদ্রব্য গ্রহণ ইত্যাদি সন্তানকে মাদকদ্রব্য গ্রহণে উৎসাহিত করে থাকে।

মানসিক অসুস্থতা

বিশ্বের ২০ শতাংশ কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালে বিষণ্ন্নতা এবং উদ্বিগ্নতার মতো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত আবেগ এবং অভিমান বয়ঃসন্ধিকালীন প্রধান মানসিক বৈশিষ্ট্য। আবেগতাড়িত মানসিক অসাম্যাবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের তি করা, আত্মহত্যা ইত্যাদির জন্য দায়ী। পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাব এ েেত্র নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তাই এ সময় প্রয়োজন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সহযোগিতা।

 ডাঃ এস.জামান পলাশ
,,,,,,, জামান হোমিও হল
… মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর
০১৭১১-৯৪৩৪৩৫
www.zamanhomeo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *