বিশ্বকাপ ফুটবল:দর্শকদের জন্য প্রেসক্রিপশন

image_136187

পুরো বিশ্ব একই সাথে মেতে ওঠে একমাত্র ফুটবলেই। ফুটবলই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত ক্রীড়া আসর। বিশ্বকাপ ফুটবল বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে বরাবরের মতোই আগ্রহের বিষয়। বাংলাদেশের দর্শকেরা সাধারণত খেলাগুলো উপভোগ করে থাকেন টেলিভিশনের মাধ্যমে। খেলা দেখার প্রচণ্ড উত্তেজনা, উদ্ব্বেগ, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি বিষয়ের সাথে যোগ হবে গরমের দুঃসহ যন্ত্রণা। কীভাবে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে একজন দর্শক উপভোগ করতে পারেন খেলাগুলো? আদৌ কি তা সম্ভব? হ্যাঁ, অবশ্যই তা সম্ভব। আপনি সুস্থভাবে টেলিভিশনে খেলাগুলো উপভোগ করতে পারেন, যদি নিচের বিষয়গুলো মেনে চলেন-

১. জড়তা মুক্ত হয়ে বসুনimagesগহদদগ

খেলা শুরুর আগে টেলিভিশন সেটের সামনে বসার সময় কোনো রকম টেনশন নিয়ে বসবেননা। প্রথমে হাত-পাগুলোকে একটু খেলিয়ে নিয়ে পুরো চাঙ্গা অবস্থায় বসে যান। বিছানায় আধশোয়া অবস্থায়ও খেলা দেখতে পারেন। রিল্যাক্স রাখুনশরীরটাকে। প্রিয় খেলোয়াড় লাল কার্ড পেয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেও মাংসপেশী শক্ত করবেননা। খেলাতে হার-জিত থাকবেই। আপনার উদ্দেশ্য হবে খেলাটা উপভোগ করা। টেনশনের ব্যাপারটা ছেড়ে দিন দলের কোচ ও ম্যানেজারের হাতে। আপনার কাজ স্রেফ খেলাটা উপভোগ করা। প্রতিপক্ষ গোল দিলেও হাত তালি দিতে শিখুন। যদি আপনার ভেতর বেশি টেনশন ভর করে তাহলে গভীরভাবে শ্বাস নিন। উত্তেজনা প্রশমণের জন্য ব্রোমাজোপাম জাতীয় ট্যাবলেট ৩ মিলিগ্রাম খেতে পারেন। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হন তা হলে হাতের কাছে প্রোপানলল ট্যাবলেট রাখুন। হার্টের রোগীরা রাখুন এনজিসড ট্যাবলেট অথবা স্প্রে। খারাপ অনুভব করলেই ব্যবহার শুরু করুন ওষুধের। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা ৫০ মিলিগ্রামের একটি প্রোপানলল ট্যাবলেট খান। হার্টের রোগীরা বুকে ব্যথা অনুভব করলে জিহবার নিচে রাখুন এনজিসড ট্যাবলেট। তবে মনে রাখবেন, ফুটবল বিনোদনের খেলা। অহেতুক টেনশনে ক্ষতি হবে আপনারই, অন্য কারো নয়।

২. নির্দিষ্ট দূরত্বে বসে

টেলিভিশন দেখুন

টেলিভিশনে খেলা দেখার সময় কাছে বসে দেখবেন না, এতে চোখের ক্ষতি হতে পারে। দূরত্ব বজায় রেখে টেলিভিশন দেখুন। নতুবা টেলিভিশনের তরঙ্গ রশ্মির ফাঁদে পড়ে নষ্ট হবে আপনার চোখের জ্যোতি, হবে মাথা ব্যথা, মাথা ঘুরে আসবে, বমি বমি ভাব- মোটামুটি আপনার খেলা দেখার মুহূর্তগুলো হয়ে উঠবে অসহনীয়। আপনি টেলিভিশন থেকে কতটা দূরে বসবেন সেটি নির্ভর করবে আপনার টেলিভিশন সেটটা কত বড় তার ওপর। যদি টেলিভিশনের পর্দা ১০ ইঞ্চি হয়, তা হলে টেলিভিশনের কাছ থেকে অন্তত ৮ ফুট দূরে বসা উচিত। টেলিভিশনের পর্দা ১৪ ইঞ্চি হলে ১২ ফুট দূরে বসবেন, ২০ ইঞ্চি হলে কমপক্ষে ২০ ফুট দূরে বসবেন। সহজভাবে মনে রাখার জন্য আপনার টেলিভিশনের পর্দা যত ইঞ্চি বড়, আপনি তত ফুট দূর থেকে তা দেখুন। টেলিভিশন দেখার সময় পর্দা বা স্ক্রিনের রঙ ও উজ্জ্বলতা একটু কম রাখবেন। কারণ রঙ ও উজ্জ্বলতা বেশি হলে চোখে চাপ পড়বে। আর কখনো একটানা টেলিভিশন দেখবেন না। বিরতির সময় কিংবা বিজ্ঞাপনের সময় চোখ দুটো পর্দা থেকে সরিয়ে রাখুন।

৩. পানি! পানি!! বেশি করে পানি গরম পড়েছে খুব। গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। ফুটবলের উত্তেজনায় গরম আরো বেশি

অনুভূত হবে আপনার কাছে। ঘেমে একাকার হয়ে যাবেন আপনি। ঘামের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে প্রচুর পানি ও লবণ। ফলে শরীরে দেখা দেবে অবসাদ। পানিস্বল্পতায় আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন মারাত্মকভাবে। তাই এ সময় বিশুদ্ধ পানির বোতল সাথে নিয়ে বসুন। একটু পরপরই চুমুক দিন। মাঝে মাঝে পানির ঝাপটা দিন চোখে-মুখে। পানির সাথে লেবুর শরবত ও

খাবার স্যালাইন খান। খাবার স্যালাইন না পেলে লবণ ও চিনি গুলিয়ে নিন। মোট কথা আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। খেয়াল রাখবেন প্রস্রাবের দিকে। একটু হলুদ হলেই বুঝবেন শরীরে পানির প্রয়োজন। যে পর্যন্ত না প্রস্রাব স্বাভাবিক রঙের হবে, ততক্ষণ আপনি পানি পান করে যান।

৪. পরিহার করুন চা, কফি বা অ্যালকোহল

ফুটবলের টান টান উত্তেজনায় প্রয়োজন এক কাপ চা কিংবা কফি। অনেকে অ্যালকোহলও পান করে থাকেন। দুঃসহ গরমে এ তিনটিই আপনার জন্য ক্ষতিকর। কিছু যদি পান করতে ইচ্ছে করে তা হলে সোডা ওয়াটার অথবা কোমল পানীয় পান করুন। ফলের রসও পান করতে পারেন, ক্ষতি নেই। অনেকেই ভেবে থাকেন চা বা কফিতে তো পানি থাকে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, এগুলো উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে আপনার শরীরে। চা বা কফি আপনার শরীরে জলীয় শূন্যতা

পূরণ তো করেই না, বরং আপনার শরীরে উল্টো পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। তাই আপনি খেলা দেখার সময় যখনই তৃষ্ণা অনুভব করছেন, এসব ক্ষতিকর পানীয় পান না করে নির্ভেজাল পানি খান এবং সেই সাথে ফলের রস বা কোমল পানীয়।

৫. দোহাই-সিগারেট নয়

খেলা দেখার সময় অনেকেই বড় বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন ধূমপানে। মনে রাখবেন চা, কফি বা অ্যালকোহলের চেয়ে ধূমপান আরো বেশি ক্ষতিকর। ধূমপান আপনার ক্ষতি তো করছেই, উপরন্তু আপনার পাশে বসে যে লোক

খেলা দেখছেন তারও ক্ষতি করছে সমানভাবে। চা, কফি ও অ্যালকোহলের মতো সিগারেট আপনার পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। আপনি যদি পেপটিক আলসারের রোগী হন তাহলে তার পরিণাম

হবে আপনার জন্য আরো কষ্টদায়ক। কেউ কেউ বলে থাকেন, সিগারেট টেনশন কমায়। কিন্তু এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তাই খেলা দেখার সময় টেনশনের দোহাই দিয়ে ধূমপান করবেন না।

৬. পোশাক পরুন ঢিলেঢালা

সিনথেটিক কিংবা টাইট পোশাক পরে খেলা দেখতে বসবেন না। ত্বকের ক্ষতি হবে তাতে। ঘাম জমে থাকবে দেহের ভাঁজে ভাঁজে। পরিণতিতে ছত্রাক সংক্রামণ কিংবা অন্যান্য চর্মরোগ। তাই সর্বদা সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে আপনার শরীরের ওপর দিয়ে। ঘামাচির যন্ত্রণা এড়াতে ব্যবহার করুন প্রিকলি হিট পাউডার।

==========================================

ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *