বুকের দুধ খাওয়াতে হবে সঠিকভাবে

1393341843.

মায়ের দুধ শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ খাবার। পৃথিবীতে এমন কোন খাবার নেই যা মায়ের দুধের বিকল্প হতে পারে। সন্তানের জন্মের সাথে সাথেই মায়ের বুকে দুধ আসে। মায়ের প্রতিদিনের স্বল্পমূল্যের স্বাভাবিক খাবার বিশ্ব¯্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের মহিমায় মায়ের দুধে পরিণত হয়। তাই সব মা-ই তার সন্তানকে পেট ভরে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। বুকের দুধ খাওয়াতে কোন মায়েরই কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তথাপিও ‘মায়ের বুকে যথেষ্ট দুধ নেই’ এ অভিযোগ তুলে বহু মা শিশুর বয়স ছয়মাস হওয়ার আগেই বোতলে করে গরুর দুধ, ছাগলের দুধ, নি¤œমানের গুঁড়োদুধ এমনকি চালের গুঁড়া খাওয়াতে চান। মায়েরা যা বলেন অনেক স্বাস্থ্যকর্মীও তা মেনে নিয়ে মায়ের দুধের সাথে এসব খাবার খাওয়ানোর উপদেশ দেন। শিশু বোতলে দুধ খাওয়ার ফলে মায়ের দুধ খেতে চায় না। মায়ের বুকে দুধ কমে যাওয়ার এটাই অন্যতম কারণ।
দেখা গেছে মায়ের বুকে প্রচুর দুধ থাকা সত্ত্বেও মায়ের আত্মবিশ্বাস ও প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে শিশু মায়ের দুধ খেতে পারে না। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কিছু নিয়ম পালন করলে মায়ের দুধ কমে যাওয়ার কোন ভয় থাকে না এবং সকল মা-ই তার চাহিদামত বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।
জন্মের পর থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে শিশুর চোষন ক্ষমতা অত্যন্ত প্রবল থাকে। তাই এটা হলো নবজাতককে মায়ের বুকে দেয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। বিশেষজ্ঞ জন্মের পর পরে অবশ্যই আধাঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শিশুর জন্মের প্রথম দু’এক দিন ঘন ঘন বুকের দুধ টানতে দিলে মায়ের বুকে তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক দুধ নামতে সাহায্য করে।563772_334470680004901_611751669_n
* শিশু যত বেশি দুধ খায় মায়ের বুকে তত বেশি দুধ তৈরি হয় যা চাহিদা ও সরবরাহের উত্তম উদাহরণ। তাই শিশু যখনই দুধ খেতে চায় এবং যতক্ষণ ধরে খেতে চায় ততক্ষণ ধরে দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে শিশু দুধ খেয়ে বুক খালি করলেই আবার দুধ তৈরি হয়। কখনোই বুকে দুধ জমিয়ে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। বরং দুধ জমে থাকলেই দুধ তৈরি কম হয়। তাই শিশুকে বার বার মায়ের দুধ খাওয়ানো দরকার।
* দু’দিকের স্তন থেকেই শিশুকে পর্যায়ক্রমে দুধ খাওয়ানো দরকার। কোন কোন মায়েদের যে কোন একদিকের (ডান বা বাম) দুধ খাওয়াতে সুবিধা মনে হয়। তাই একদিকের দুধ বেশি খাওয়ান। অপরদিকে স্তন থেকে কম খাওয়ানোর ফলে সেটিতে দুধ তৈরি ও সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং শিশুটিও একদিকের দুধ খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে প্রতিবারে দু’দিকের স্তন থেকে দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নাও হতে পারে। একদিকের স্তন থেকে শিশুর পেট ভরে গেলে অপরটি পরবর্তী সময়ে খাওয়াতে হয়। শিশুর পেট ভরেছে কিনা বোঝার উপায় হলো : পেট ভরে গেলে শিশু আপনা আপনি দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়, তাছাড়া অপরবুকে দেয়ার পরেও শিশু আর খেতে চায় না।1234800_10151817028608468_1418340803_n
* শিশুর প্রথম ৬ মাস বয়সে অন্য কোন খাবার এমনকি পানিও দেয়া যাবে না। কোনক্রমেই বোতলে করে শিশুকে খাওয়ানো যাবে না।
* স্তন্যদানকারী মায়ের খাবার ও বিশ্রাম পর্যাপ্ত হলে মায়ের বুকে দুধ কমে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই থাকে না। তাই এসব মায়ের বাড়তি খাবার ও বিশ্রাম খুবই প্রয়োজন।
* রাতের বেলা প্রোলেক্টিন নামক এক ধরনের হরমোনের প্রভাবে দুধ তৈরি বেশি হয়। তাই শিশুকে রাতে ঘন ঘন দুধ খাওয়ালে দুধের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।
* শিশুর ৬ মাস বয়স থেকে দু’বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি নিয়মিত শক্তি সমৃদ্ধ খাবার দেয়া আবশ্যক।
* স্তনের আকার ছোট-বড় যাই হোক না কেন কিছু যায় আসে না। মা তার শিশুকে কিভাবে দুধ খাওয়াচ্ছেন সেটাই লক্ষণীয় বিষয়।
প্রথম ৬ মাস বয়সে চাহিদামত দুধ পাচ্ছে তা কিভাবে বোঝা যায়
* শিশু যদি শুধুমাত্র মায়ের দুধ খায় এবং দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬ বার প্রস্রাব (পরিস্কার ও সঠিক পরিমাণে) করে।
* প্রতিবার দুধ খাওয়ার পর শিশু পরিতৃপ্ত থাকে।
* মাসে মাসে শিশুর ওজন বৃদ্ধি পায়।
* শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ স্বাভাবিক হয় (৩ মাস বয়সে জন্ম ওজনের দ্বিগুণ)।
* মায়ের বুকে দুধের সরবরাহ বজায় থাকে।
আসলে মায়ের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে মনে-প্রাণে আগ্রহী হলে এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলে কোন সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। শিশুর চাহিদামত বুকের দুধ খাওয়াতে হলে প্রয়োজন মায়ের সুস্বাস্থ্য, আগ্রহ ও মনোবল, ধৈর্য ও পর্যাপ্ত সময়। মায়ের আগ্রহ, মনোবল ও ধৈর্য বাড়াতে চাই স্বামী, পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে সামাজিক সমর্থন ও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা। সেই সাথে মায়ের মনের ভয় ও দুশ্চিন্তা দূর করতে হবে। তাছাড়া কর্মজীবী মাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ঠ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা খুবই প্রয়োজন। তদুপরি মায়ের কোন শারীরিক অসুস্থতা থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করানো দরকার। সর্বোপরি মাকে দিতে হবে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রামের সুযোগ। তাহলেই আর কোন মা ‘বুকে যথেষ্ট দুধ নেই’ এ সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় বিশেষ করে ৩টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার :
১. মা আরাম করে বসে বা শুয়ে দুধ খাওয়াচ্ছেন কিনা। মায়ের আরাম নিশ্চিত হলে এক ধরনের শিথিলতা আসে যাতে দুধ নিঃসরণে সুবিধা হয়।safe_image.php
২. মা দুধ খাওয়ানোর জন্য শিশুকে কিভাবে বুকের কাছে ধরছেন এবং
৩. শিশুকে কিভাবে স্তনে সংস্থাপন করা হয়েছে।
মায়ের স্তনে দুধ তৈরির প্রক্রিয়া সন্তান প্রসবের আগে (গর্ভকালীন সময় থেকে) থেকেই শুরু হয় এবং চলতে থাকে। শিশুর জন্মের পর পরই যার যার মায়ের বুকে দুধ বিদ্যমান থাকে। প্রতিটি সুস্থ-স্বাভাবিক শিশুর জন্মের পর পর চোষণ ক্ষমতা বর্তমান থাকে। সে কারণে জন্মের সাথে সাথে শিশুকে মায়ের বুকে রেখে দিলে স্বভাবতই মাথা ঘুরিয়ে মায়ের স্তন খুঁজতে থাকে। যখন সে মায়ের মুধের বোঁটার মতো কিছুর স্পর্শ পায় তখন সে মুখ খোলে এবং হা করে। শিশুর ঠোঁটে বিশেষ করে উপরের ঠোঁটে দুধের বোটা ছোঁয়ালেও শিশু মুখ খুলে হা করে। শিশু যখন বড় হা করে তখন স্তনের বোটার নিচে চারপাশের কালো অংশসহ মুখে দিলে শিশু তা টানতে থাকে। টানতে টানতে দুধে যখন শিশুর মুখ ভরে যায় তখন সে তা গিলে ফেলে।
শিশু সঠিকভাবে দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি
১. শিশুর শরীর মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে থাকবে।
২. শিশুর মুখ বড় হা করে খোলা থাকবে।
৩. শিশুর থুতনি মায়ের স্তনে লেগে থাকবে।
৪. শিশুর নিচের ঠোঁট উল্টো হয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকবে।
৫. শিশু গভীরভাবে দুধ টানতে থাকবে।
৬. দুধে মুধ ভরে যাওয়ার ফলে গাল ভরা দেখাবে।
৭. দুধ গেলার শব্দ শোনা যেতে পারে।
৮. দুধ খাওয়া শেষ হয়ে গেলে শিশুকে তৃপ্ত দেখাবে।
৯. মা দুধের বোটায় ব্যথা অনুভব করবেন না।
১০. দুধ খাওয়ানোর পর দুধের বোটা বেশি লম্বা দেখাবে।

===========================================

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *