ওষুধ আমাদের জীবন ধারণের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার যেমন রোগ মুক্তিতে সহায়তা করে, তেমনি না জেনে ওষুধ সেবনে আমরা হতে পারি ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ বাজারে প্রচলিত ব্যথানাশক ওষুধগুলোর ব্যবহারবিধির পার্থক্য সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। বিশেষজ্ঞের মতে, পাকস্থলীতে সহনশীল হওয়ায় ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল তাদের প্রথম পছন্দ। আমাদের দেশে আমরা সাধারণত ব্র্যান্ড নামেই ওষুধ চিনে থাকি এবং ফার্মেসির দোকান থেকে ব্র্যান্ড নামেই ওষুধ কিনি, কখনও জানতে চাই না ওষুধটির উপাদান, ব্যবহারবিধি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
ব্যথার ওষুধ আছে দুই ধরনের। অ্যাসিটোমিনোফেন (প্যারাসিটামল) এবং নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি (এনএসএআইডি) ড্রাগ। এনএসএআইডির মধ্যে আছে আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন, ন্যাপ্রোক্সেন সোডিয়াম। আমরা যদি ব্যথানাশক ওষুধগুলোর ব্যবহারবিধির পার্থক্য দেখি তাহলে দেখব, প্যারাসিটামল ব্যথা ও তাপমাত্রা কমায়, অ্যাসপিরিন ব্যথানিরোধক, তাপমাত্রা হ্রাস ও প্রদাহনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত নন-স্টারোইডাল অ্যান্টি ইনফ্লেমেটোরি ড্রাগ (এনএসএআইডি) দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের পক্ষে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। এছাড়া ব্যথানাশক যে কোনো ধরনের ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণের ফলে হৃদরোগের ঝুঁঁকিও এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে যায় বলে গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যথা নিবারক ওষুধের নিরাপদ হওয়ার ব্যাপারটা রোগীর বয়সের ওপরও নির্ভর করে। অ্যাসপিরিন খুবই জ্বালাময়ী, দীর্ঘদিন ব্যবহারে পাকস্থলীতে রক্তপাত ঘটায় এবং আলসার তৈরি করে। অথবা কারও আলসার থাকলে তা প্রকট ও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। তাই তেমন ওষুধ খেতে হলে সবচেয়ে কম মাত্রার ও কম সময়ের জন্য নেয়া যায় ও ভরাপেটে। অন্যদিকে বাতের ব্যথায় যারা আইবুপ্রোফেন, ইনডোমিথাসিন-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, অ্যাসপিরিন ১৬ বছরের নিচে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কোনোভাবেই খাওয়ানো যাবে না। আইবুপ্রোফেন অ্যাসপিরিনের মতো কাজ করে; তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুটা কম। ইদানীং বাজারে অধিক কার্যকারিতার জন্য প্যারাসিটামলের সঙ্গে ক্যাফেইন যোগ করে দেয়া হয়। এজাতীয় প্যারাসিটামল মাত্রাতিরিক্ত বা দীর্ঘদিন ব্যবহারে লিভারের ক্ষতি হয়। কারণ লিভারে ই.কলি নামক ব্যাকটেরিয়া প্যারাসিটামলকে ভেঙে বিষাক্ত উৎপাদান তৈরি করে, যা লিভারের ক্ষতি করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণায় প্রকাশ করেছেন, কিডনি রোগের অন্যতম একটি কারণ ব্যথার ওষুধ। তাই অকারণে দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কিডনি বর্জ্য নিষ্কাশন করে এবং তরল ও ইলেকট্রোলোহার ভারসাম্য রক্ষা করে। ব্যথার ওষুধ এই কাজে বাধা দিতে পারে এবং নিয়মিত খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। ক্রনিক কিডনি রোগ থাকলে ব্যথার ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিডনিবান্ধব বিকল্প ওষুধ খাওয়া উচিত। অ্যালকোহল ও ব্যথার ওষুধ একত্রে সেবন খুবই বিপজ্জনক। ব্যথার ওষুধ রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলে, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। যাদের আগে রক্তচাপ জানা নেই তাদের রক্তচাপ জেনে নিতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ যারা খান তারা নিয়মিত রক্তচাপ মেপে দেখবেন এবং ব্যথার ওষুধ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। গর্ভবতী হলে যা গ্রহণ করা হয় তা চলে যায় অনাগত সন্তানের কাছে। গর্ভের তৃতীয় মাসে এনএসএআইডি দেয়া ভালো নয়। ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথার ওষুধ দেয়া ভালো। পরস্পর প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধ সব ওষুধের সঙ্গে চলে না। তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সজাগ থাকুন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। ওষুধের ওপর লেবেল পড়ে ওষুধ সেবনের নিয়মগুলোও জেনে নিন। জেনে, বুঝে, সঠিক নিয়মে ওষুধ খান ও নিরাপদ থাকুন।