আমাদের এই দেশে সর্বনাশা অহেতুক এক সংস্কার চলছে যুগের পর যুগ। সংস্কারটি হচ্ছে, নারীদের অসুখ-বিসুখ নিয়ে চলে লুকোচুরি খেলা। তাদের শরীরের সমস্যার কথা কেউ জানে না; মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি স্বামীও না। এক সময় তাকে রোগের কাছে হার মানতে হয়। তখন বাধ্য হয়ে ডাক্তারের কাছে যান চিকিৎসা নিতে।
সেখানেও অনেক ঝামেলা। ডাক্তারের কাছে লজ্জা আর সংকোচে রোগের বিস্তারিত বলেন না। ডাক্তারও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন না। এক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন অগত্যা ডাক্তারকে রোগের বিস্তারিত জানান। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। অথচ সঠিক সময়ে রোগের বিস্তারিত জানলে ডাক্তারের যেমন চিকিৎসা করতে সহজ হতো, তেমনি রোগীও বিপদমুক্ত থাকতেন।
আমাদের দেশের মহিলারা সবচেয়ে বেশি যে রোগটিতে আক্রান্ত হন তা হল জরায়ুর মুখের ক্যান্সার ( Cervical Cancer); কেন এমন হয়? কারা এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন? কিভাবে এই রোগটির মোকাবিলা করা যায়? জনসচেতনা তৈরি করার উদ্দেশ্যে হিসেবে জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে যা কিছু জানি আলোকপাত করবো।
বাংলাদেশে জরায়ু ক্যান্সারের অবস্থাঃ
বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ১৮ জন নারী মারা যায় জরায়ু-মুখ ক্যান্সার বা সার্ভাইকাল ক্যান্সারে। আর প্রতিবছর আরও ১৩হাজার নারী নতুন করে জরায়ু-ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। বিশেষ সমীক্ষায় (বিএমএমএস-২০১০) দেখা গেছে, পূর্ণবয়স্ক নারীর মৃত্যুর কারণ হচ্ছে এ ক্যান্সার। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার ৯৩১ জন নারী নতুন করে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বর্তমানে বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন এবং প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি নারী নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হন। ৮০% নারীর জীবনে কোন না কোন সময়ে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুকি রয়েছে।
মূল কারণ না জানা গেলেও নিম্নোক্ত রিক্স ফ্যাক্টরসমূহকে জরায়ু ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়-
২টি বয়সে বেশি দেখা যায়৷ ৩৫ বছরে এবং ৫০-৫৫ বছরে৷
অল্প বয়সে বিয়ে হলে (১৮বছরের নিচে) বা যৌন মিলন করে থাকলে
২০বছরের নিচে গর্ভধারণ ও মা হওয়া
অধিক ও ঘনঘন সন্তান প্রসব
বহুগামিতা
স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং জননাঙ্গের অপরিচ্ছন্ন অবস্থা
বিভিন্ন রোগ জীবাণু দ্বারা জরায়ু বারেবারে আক্রান্ত হলেও জরায়ু ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকে যেমন – হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস এবং হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস৷
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোন লক্ষন থাকে না। সাধারণত ১৫-৪৫ বছরের নারীদের শরীরে এই ক্যান্সারের ভাইরাস আক্রমন করে, আবার লক্ষন প্রকাশের আগে ২ থেকে ২০ বছর এই ভাইরাস নারীদেহে (ক্যান্সার না ছড়িয়েও)সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে,এজন্যে এই ভাইরাসকে নীরব ঘাতক (SIlent Killer of Women) বলা হয়।আবার এই ভয়ানক ভাইরাস একই শরীরে একাধিকবারও আক্রমণ করতে পারে!!!
অতিরিক্ত রক্তপাত হয়।
রোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর ভাঙতে থাকে, ওজন কমে যায়, কোমরে তলপেটে ব্যথা হয়।
রজঃস্রাব বেড়ে যায়, দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষরণ এবং প্রস্রাবের বিভিন্ন রকম উপসর্গ-যেমন যন্ত্রণা, রক্ত প্রস্রাব ইত্যাদি অথবা পায়খানা কষ্ট-যেমন ব্যথা, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হয়।
রক্তসল্পতা কিডনির অসুখ ইত্যাদিও দেখা দেয়। কিডনি কাজ বন্ধ করে দেয়।
প্রচন্ড রক্তক্ষরণে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে রোগী মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।
জরায়ু ক্যান্সারে কারা বেশী ঝুকিপুর্নঃ
যে কোন নারীরই জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ যারা___
অল্প বয়সে যাদের বিয়ে হয়, জরায়ু পরিপক্বতা লাভের আগেই ইনফেকশন বা ঝুঁকিতে চলে আসে।
শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব যেখানে একই কারণে জরায়ু-মুখে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
একের অধিক পুরুষের সঙ্গে মিলনের ফলে।
ঋতুস্রাবের পরপরই অ্যাবরশন বা প্রসবের পর জরায়ু যে কোন ইনফেকশনের (প্রদাহ) ঝুঁকিতে থাকে।
যাদের অধিক সন্তান আছে তাদের জরায়ু-মুখ ক্যান্সার বেশি হয়।
জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিরোধঃ
বর্তমানে জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে অতি কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। টিকা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত জরায়ু পরীক্ষা ও সচেতনতা জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের আক্রান্তের হার কমিয়ে দেয় বা খুব প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার প্রাথমিক লক্ষণ ধরা যায়। সাধারণত ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের সব মেয়ে বা নারী জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে টিকা নিতে পারেন। এ টিকার তিনটি ডোজ নিতে হয়।
১ম ডোজ যে কোন দিন, ২য় ডোজ ১ম ডোজের ১ মাস পর, ৩য় ডোজ ১ম ডোজের ৬ মাস পর
এ টিকা দীর্ঘমেয়াদি জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রারম্ভিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ পদ্ধতি বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে আছে।
পেপস স্মিয়ার টেস্ট
ভায়া টেস্ট ও কলপোস্কপি টেস্ট
বায়োসপি
প্রজননক্ষম মেয়েদের (১৫-৪৫ বছর) বা যাদের কোনরকম সন্দেহ হচ্ছে যে, ক্যান্সার টেস্ট করা দরকার ; বছরে ১ বার বা নেগেটিভ ক্ষেত্রে ৩ বছর পর পর এ টেস্ট করতে হবে।
টিকা গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত পরীক্ষা করালে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের আক্রমণ হার কমিয়ে আনা যায়। ভাইরাস এইচপিভি-১৬, এইচপিভি-১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১-এর প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নিয়মানুযায়ী নয় থেকে ২৫ বছর বয়সে এ টিকা কার্যকর হয়। গর্ভাবস্থায় এ টিকা প্রদানের অনুমোদন নেই। আক্রান্ত হয়ে ক্যান্সার সংঘটনের পর এই টিকা আর কোনো কাজে আসে না।
চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এ রোগের আরোগ্য লাভ সম্ভব
জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে আলোচনায় লজ্জা পাবার কিছু নেই, নারীমাত্র জরায়ু থাকবেই, ক্যান্সার বাসা বাঁধলে কারো সাধ্য নেই তা এড়াবার। যেসকল পুরুষ এই জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে জানেন তারা তাদের মা, মেয়েবন্ধু, বউ, ও মেয়েসন্তানটিকে এই ব্যাপারে সচেতন করুন, আপনার বাসার নিকটে জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিষেধক কোথায় দেয়া হয় খোঁজ নিন এবং প্রিয় মানুষদের এই টিকা নেয়ার ব্যবস্থা করুন। তাকে সুস্থ রাখার জন্যে আপনার দায়িত্বও কিন্তু কম না।
প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর
01711-943435 // 01670908547
ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল