মাওলানা ইমরান নযর হোসেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার

10

মাওলানা ইমরান নযর হোসেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার, দার্শনিক, জনপ্রিয় বক্তা এবং লেখক । তাহার পুরো নাম হইল ইমরান আহমদ নযর হোসেন । নযর হোসেন হইল ওনার দাদার নাম । তিনি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের একটি প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপ রাষ্ট্র ট্রিনিড্যাড এন্ড টোবেগোতে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহন করেন । ক্ষুদ্র এই দেশটিতে খ্রিস্টানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী, হিন্দুদের সংখ্যা কম এবং মুসলমানদের সংখ্যা আরো কম । উনার পূর্বপুরুষরা ছিলেন খোরাসানের মানে আফগানিস্তানের অধিবাসী, সেখান থেকে তাহারা বিহারে হিজরত করেন এবং পরবর্তীতে ত্রিনিদাদে ।

শায়খ ইমরানের পিতার চোখ ছিলো কালো রঙের কিন্তু তাহার দুই চাচার চোখে ছিল নীল রঙের যাহা তাহাদের আফগান বংশদ্ভূত হওয়ার প্রমাণ বহন করে । উনার পিতা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম এবং উনার মাতা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান । উনারা দুইজন সিদ্ধান্ত নেন যে উভয়ে নিজ নিজ ধর্মে থাকিয়াও তাহারা স্বামী স্ত্রী হিসাবে জীবন যাপন করিতে পারেন । তাহার পিতার ছিলো ইহা প্রথম বিবাহ এবং তাহার মাতার দ্বিতীয় বিবাহ সাথে তাহার প্রথম স্বামীর একটি কন্যাও ছিলো । উনারা উভয়ে উভয়কে প্রাণ দিয়া ভালবাসিতেন । তবে সন্তানরা কোন ধর্ম নিয়া বড় হইবে তাহা নিয়া তাহাদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল । তাহার পিতা চেষ্টা করিয়াছেন তাহাকে মুসলিম হিসাবে গড়িয়া তুলিতে এবং তাহার মাতা চেষ্টা করিয়াছেন তাহাকে খ্রিস্টান হিসাবে বড় করিতে । তিনি ছাড়াও তাহাদের আরো কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ছিল । উনার বয়স যখন এগার বছর তখন তাহার জননী নিজের পরাজয় স্বীকার করিয়া নেন এবং ইমরানকে তাহার পিতার ইচ্ছা অনুসারে একজন মুসলিম হিসাবে বাড়িয়া উঠিতে সাহায্য করেন । তাহার পিতা ছিলেন একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক এবং চল্লিশ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন । মৃত্যুর পূর্বে তিনি হেড মাস্টার পদে উন্নীত হইয়াছিলেন ।

মাওলানা ইমরান সবার মতো মক্তবেই তাহার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা সমাপ্ত করেন । তাহার পরে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত স্কুল কলেজের শিক্ষা থেকে সমাপ্ত করেন । তাহার বয়স ছিল তখন একুশ, তাহার আব্বা ইন্তেকাল করিয়াছেন, একজন ইয়াতীম । তাহার আম্মা তখন সংসার চালানোর জন্য লড়াই করিতেছিলেন । তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করিতেন মানে স্প্যানিশ ভাষা শিখাইতেন এবং সেখানে অল্প কিছু বেতন পাইতেন । এই সময় তিনি মিশরের আল আজহার ইউনির্ভাসিটির স্কলারশীপ পান । তিনি আল আজহারে গিয়াছিলেন এবং হতাশ হইয়াছিলেন । এই সময় করাচির আলীমিয়া ইনিস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজের প্রিন্সিপাল মাওলানা ড. ফজলুর রহমান আনসারী ত্রিনিদাদ সফর করেন যখন তাহার বয়স ছিল আঠারো বছর । ত্রিনিদাদে যে-সব আলেম-ওলামা ছিলেন তাহাদেরকে বলা হইত মেৌলভী, ফলে মাওলানা শব্দের সহিত তাহার কোনো পরিচয় ছিলো না । মাওলানা আনসারীর জন্য রাতের বেলায় বিরাট মাহফিলের আয়োজন করা হইল, উনার লেকচারের সময় সেটি লোকে লোকারন্য হইয়া গেলো । মাওলানা আনসারী কোরআনে বিজ্ঞান এবং আধুনিক যুগের সমস্যার সমাধান নিয়া ইংরেজিতে আড়াই ঘণ্টা ওয়াজ করিলেন ।

মাওলানা আনসারীর লেকচার শুনিয়া যুবক ইমরান বিস্ময়ে বিমূঢ় হইয়া গেলেন । মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে এমন ওস্তাদের ছাত্র হইতে হইবে, আমাকেও এমন স্কলার হইতে হইবে । লেকচার শেষে মাওলানা আনসারী ঘোষণা করিলেন ত্রিনিদাদ থেকে পাঁচজন যুবককে তিনি স্কলারশীপ দিয়া তাহার মাদরাসায় নিতে চাহেন । যুবক ইমরান তখন মনে মনে ভাবিলেন, ইমরান ! তোমাকে এই পাঁচজনের একজন হইতে হইবে । তারপর ইমরান যখন আল আজহার হইতে ফিরিয়া আসিলেন তখন পাকিস্তান থেকে মাওলানা ফজলুর রহমান আনসারী তাহার কথা শুনিয়া তাহাকে পাকিস্তান যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাইলেন (করাচীর আলীমিয়া ইনিষ্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যয়ণের জন্য) এবং জাহাজের টিকিট পাঠাইয়া দিলেন । শায়খ ইমরানের আব্বার ছিল একজন হিন্দু বন্ধু যিনি একটি চাকরি পাওয়ার জন্য খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করিলেও অন্তরে ছিলেন একজন হিন্দু । তাহার নাম ছিল লক্ষণ । তাহার আব্বা ইন্তেকালের পূর্বে তাহার পরিবারের দ্বায়িত্ব লক্ষণের হাতে তুলিয়া দিয়া যান । ভাবিয়া দেখুন যে একজন হিন্দু যাহার সততা ন্যায়পরায়ণতা চরিত্র এতোটাই উন্নত যে আপনি নিশ্চিন্তে আপনার পরিবারের দ্বায়িত্ব তাহার হাতে তুলিয়া দিতে পারেন । কাজেই লক্ষণ ছিলেন তাহার কাছে দ্বিতীয় পিতার মতো ।
তাহার পরিবার চাহিতেছিলেন তিনি ইংল্যাণ্ডে গিয়া আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করিবেন এবং তিনিও এই ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন । এই সময় মাওলানা ফজলুর রহমান আনসারী ত্রিনিদাদ আগমণ করেন । সেই সময় তিনি তাহার ব্যাপারে লক্ষণের সাথে যোগাযোগ করেন । তিনি লক্ষণের কাছে সিদ্ধান্ত চাহেন, ইমরান কি ইংল্যাণ্ডে যাইয়া আইন পড়িবে নাকি পাকিস্তানে গিয়া ইসলামিক স্টাডিজে পড়িবে ? লক্ষণ তখন মাওলানা ফজলুর রহমান আনসারীকে তাহার সিদ্ধান্ত জানাইয়া দেন যে, ইমরান ইংল্যাণ্ডে যাইয়া আইন পড়িবে না বরং পাকিস্তান গিয়া ইসলামিক স্টাডিজে অধ্যয়ন করিবে । তাহার ফলেই মাওলানা ইমরানের আজকের এই অবস্থান । ইহা কি শত্রুতা লক্ষণ ? ইহা কি দুষমনী লক্ষণ ? ইহা কি ঘৃণা বিদ্বেষের আলামত ? আমরা যাহারা এখন এতো বড় একজন আলেমের ওয়াজ শুনিতে পারিতেছি তাহার সৃষ্টিতে আছে একজন হিন্দুর অনুমতি । কাজেই যাহারা হাজার বছরের প্রতিবেশী হিন্দু মুসলিম দুটি জাতির মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ-হানাহানি সৃষ্টি করিতে চাহেন তাহাদের বিষয়টি পুণরায় ভাবিয়া দেখা উচিত । একজন খ্রিস্টান মাতার ত্যাগ এবং একজন হিন্দু অভিভাবকের মহানুভবতার কারণেই শায়খ ইমরান একজন বিশ্ববরেণ্য ইসলামিক স্কলার হইতে পারিয়াছেন । এই জন্য তিনি সকল ধর্মের লোকদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা পোষণের মনমানসিকতা নিয়া বড় হইয়াছেন , কাহারো প্রতি হিংসা-ঘৃণা পোষণ করেন না । মাওলানা ইমরান আলীমিয়া ইনিস্টিটিউটে অনার্সে ভর্তির সাবজেক্ট ঠিক করিয়া যখন মাওলানা আনসারীর কাছে গেলেন তিনি তখন কলম হাতে নিয়া খসখস করিয়া সব সাবজেক্ট কাটিয়া দিয়া সেখানে ফিলসফি, সাইকোলজি এবং সোসিওলজি নির্বাচন করিয়া দিলেন । আসলে মাওলানা আনসারী যাহা জানিতেন ঐ বয়সে ইমরানের পক্ষে তাহা জানা সম্ভব ছিল না । মাওলানা আনসারী তাহার দিব্যজ্ঞানে বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে ইমরান একদিন বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার হইবে, কাজেই তাহাকে সেভাবেই গড়িয়া তুলিতে হইবে । শায়খ ইমরানের ওস্তাদ মাওলানা ডঃ ফজলুর রহমান আনসারী একজন বড় মনিষী ছিলেন । তিনি সব সময় বলিতেন আমি দেওবন্দি নই, আমি বেরেলভী নই, আমি আহলে হাদীস নই, আমি ওহাবী নই, আমি একজন মুসলিম । কাজেই মাওলানা ইমরানও তাঁহার ওস্তাদের পদাঙ্ক অনুসরন করিয়া গিয়াছেন সারাজীবন । মাওলানা ইমরান নযর হোসেনের ওস্তাদ ছিলেন মাওলানা ড. ফজলুর রহমান আনসারী (রহঃ) । ওনার ওস্তাদ ছিলেন মাওলানা আবদুল আলীম সিদ্দিকী (রহঃ) । ওনার ওস্তাদ ছিলেন ইমাম আহমদ রেজা খান বেরেলভী (রহঃ) ।
শায়খ ইমরান সচেতনভাবেই সুফীবাদ বা তাসাউফকে এড়িয়ে চলেন । তিনি ইহাকে ভালো মনে করিলেও তুরষ্কের নাজিম হাক্কানীর (রহঃ) মতো তিনিও সুফীবাদ , তাসাউফ, মারেফাত, তরিক্কত বা হাকিকাত ইত্যাদি নামের বদলে নবীজির (সাঃ) দেওয়া “ইহসান” নামটাকে ব্যবহারের পক্ষপাতি । তিনি নিজেকে পীর বা মোরশেদ হিসাবে পরিচয় দেওয়া পছন্দ করেন না এবং কাহারো নিকট থেকে বায়আতও নেন না । তিনি পাকিস্তানের আলীমিয়া ইনিস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজ থেকে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স এবং করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন এবং পরবর্তীতে কিছুদিন একই শিক্ষাপ্রতিষ্টানের প্রিন্সিপালের দ্বায়িত্বও পালন করেন । তিনি যখন প্রস্তাব করিলেন যে, এখন থেকে ইনিস্টিটিউটের সকল শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন কাগজের মুদ্রার বদলে স্বর্ণমুদ্রা এবং রেৌপ্যমুদ্রায় দেওয়া হউক তখন সবাই তাহার দিকে এমনভাবে তাকাইলেন যেন তিনি মঙ্গল গ্রহ থেকে দুনিয়াতে আসিয়াছেন । পরবর্তীতে তিনি করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলসোফিতে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন । দর্শনে তাহার শিক্ষক ছিলেন ড. বোরহান আহমদ ফারুকী (রহঃ) । তিনি চূড়ান্ত পরীক্ষায় তিন ঘণ্টা উত্তর দেওয়ার পরে আরো সময় চান, ফলে তাহাকে আরো দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় । পরের দিন তাহাকে জানানো হয় যে, তাহাকে একানব্বই নাম্বার দেওয়া হইয়াছে । তারপরে তিনি তাহাকে আরো দশটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন । তিনি বলিলেন, আমাকে একানব্বই নাম্বার দেওয়া হইয়াছে তারপরেও কেন আবার পরীক্ষা দিতে হইবে ? ড. ফারুকী বলিলেন, ইমরান ! আমি অনেক বড় বড় স্কলারকে দেখিয়াছি যাহারা কিছু লিখিতে ভয় পাইতেন । তাহারা জীবনে একটা বইও লিখিয়া যান নাই । এই জন্য আমি তোমার মধ্যে লেখালেখি করিবার অভ্যাস তৈরী করিবার চেষ্টা করিতেছি । পাশাপাশি তিনি মিশর এর আল আযহার, সুইজারল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ বিশ্বের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস্, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স এবং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমি-তে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন । তিনি নিজের দেশ ট্রিনিড্যাড এন্ড টোবেগো এর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক ছিলেন । তিনি কূটনীতিকের চাকরিতে যোগ দিলে তাহার একজন ওস্তাদ ড. ফজলুর রহমান আনসারী তাহাকে চিঠি লিখিয়াছিলেন যে, এসব চাকরি করিবার জন্য আমি তোমাকে তৈরী করি নাই । ফলে পাঁচ বছর পরে তিনি কূটনীতিকের চাকরি ত্যাগ করিয়া ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন ।

১৯৬৪ সাল থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন । পরবর্তীতে তিনি জয়েন্ট কমিটি অব মুসলিম অর্গানাইজেসান্স অব গ্রেটার নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরের মসজিদে খতিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন এবং জুম্মার ভাষণ দিতেন । আধুনিক কালে তিনি ইসলাম-সংক্রান্ত বিষয়ে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন লেখক এবং বিশ্বমঞ্চে একজন অসাধারন এবং বিস্ময়কর বক্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন । আমরা যে আমাদের প্রিয় মাওলানা সাহেবকে আমাদের প্রিয় শায়খকে এতো পছন্দ করি এতো প্রশংসা করি, তিনি কি কোনো দিন সুদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করিয়াছেন ? তিনি কি কোনো দিন দাজ্জালের ফিতনার উপর কোনো লেকচার দিয়াছেন ? মাওলানা ইমরান আজ ত্রিশ বছর যাবত সুদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করিতেছেন, দাজ্জালের ঈমাননাশী চক্রান্তের বিরুদ্ধে মানুষকে সাবধান করিতেছেন । এজন্য তাহারা একে একে পৃথিবীর সকল মসজিদের দরোজা তাহার জন্য বন্ধ করিয়া দিয়াছে । লন্ডনের সকল মসজিদে মাওলানা ইমরান নিষিদ্ধ , তাহার বই-পুস্তক-সিডিও সেখানে রাখা নিষিদ্ধ । এমনকি মালয়েশিয়ার অধিকাংশ মসজিদেও তিনি নিষিদ্ধ । যাহারা তাহাকে নিষিদ্ধ করিয়াছিলেন আল্লাহ এখন করোনার সময় তাহাদেরকেও মসজিদে নিষিদ্ধ করিয়াছেন । কথাটা তিনি করোনা মহামারীর সময় মসজিদ বন্ধের সময় দুঃখ করিয়া বলিয়াছিলেন । আমাদের মাদ্রাসাগুলো গত দুইশ বছরেও একজন গবেষক আলেম তৈরী করিতে পারে নাই যিনি আধুনিক জগতে মুসলমানরা যে-সব সমস্যার মুখোমুখি হইয়াছে কোরআন-হাদিস থেকে তাহার সমাধান বাহির করিয়া দিতে পারিয়াছেন । যেই দুইজন স্কলার এই ব্যাপারে কাজ করিয়াছেন তাহাদের কেহই মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করেন নাই । যেই দুইজন আলেম এই ব্যাপারে কিছুটা কাজ করিয়াছেন তাহাদের একজন হইলেন মাওলানা ড. ফজলুর রহমান আনসারী এবং অন্যজন হইলেন আল্লামা ড. মোহাম্মাদ ইকবাল । কোরআন-হাদিস নিয়া যাহারা গবেষণা করেন তাহাদের ভুল হইতেই পারে । আল্লামা ইকবালকে কেউ তাহার গবেষণায় ভুল ধরাইয়া দিলে তিনি তাহা স্বীকার করিয়া নিতেন । প্রত্যেক গবেষকই সময়ের আবর্তনে তাহার গবেষণা ভুল প্রমাণিত হইলে তাহা স্বীকার করিয়া নিতে বাধ্য হন । কিন্তু আমাদের নীতি হইল কাহারো গবেষণা ভুল প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাহাকে বয়কট করো তাহার জন্য মসজিদের দরজা বন্ধ করিয়া দাও ।

তাঁহার লেখা প্রায় তিরিশটি বইয়ের মধ্যে পবিত্র কোর’আনে জেরুজালেম (Jerusalem in the Quran) গ্রন্থটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । গ্রন্থটি প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই নিউ ইয়র্কে বেস্ট সেলার তালিকায় স্থান পায় এবং বিশ বছর পেরিয়ে গেছে এখনো পর্যন্ত এটি বেস্ট সেলার আছে এবং বাংলা, উর্দু, আরবী, রাশিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান, ফরাসী, জার্মানসহ পৃথিবীর প্রধান প্রধান সকল ভাষায় অনুদিত হইয়াছে । কত কোটি কোটি মানুষ যে বইটি পড়িয়াছেন তাহার কোনো সীমা নাই । তাহার ওস্তাদতুল্য বন্ধুবর আল্লামা ড. ইশরার আহমদ দেখিলেন যে, ইহুদী-খ্রিষ্টান আলেমগণ বলেন যে কোরআনে জেরুজালেমের কথা উল্লেখ নাই । কাজেই জেরুজালেমের উপর মুসলমানদের কোনো অধিকার নাই । এজন্য তিনি মাওলানা ইমরানকে নির্দেশ দেন পবিত্র কোরআনে জেরুজালেম নামে একটি বই লেখার জন্য । এই বইটি লেখার জন্য তাহাকে তিরিশ বছর গবেষণা করিতে হইয়াছে এবং ড. ইশরার আহমদের নির্দেশের তিরিশ বছর পরে বইটি প্রকাশিত হয় । মুসলিম-ইহুদী-খ্রিস্টান আলেমগণ বইটিকে সমর্থনও করিতে পারিলেন না আবার বিরোধীতাও করিতে পারিলেন না । ফলে তাহারা নিরবতা অবলম্বন করাকেই ভালো মনে করিলেন । কিন্তু সাধারণ মানুষ “পবিত্র কোরআনে জেরুজালেম” বইটিকে স্বতস্ফূর্তভাবে গ্রহন করিয়া নিয়াছেন এবং ইহার প্রশংসা করিতেছেন ।

মাওলানা ইমরান একে একে মোট তিনটি বিবাহ করিয়াছেন । তাঁহার প্রথম স্ত্রী ছিলেন মাওলানা ড. ফজলুর রহমান আনসারীর কন্যা এবং তাঁহার শ্বাশুড়ি ছিলেন মাওলানা আবদুল আলীম সিদ্দিকীর কন্যা । পরবর্তীতে কমবয়সী একজন আলজেরিয়ান মহিলাকে তিনি বিবাহ করেন যে বিশ বছর সংসার করিবার পরে তালাক নিয়া চলিয়া যান । ইহা ছিলো তাহার জীবনের একটি দুঃখজনক ঘটনা । শায়খ ইমরানের বর্তমান স্ত্রী একজন আমেরিকান খ্রিস্টান যিনি ইসলাম গ্রহন করিয়াছেন । মাওলানা ইমরান সম্ভবত একমাত্র ইসলামিক স্কলার যিনি বই বিক্রির রোজগার দিয়ে সংসার চালান । ২০০১ সালে আমেরিকা যখন আফগানিস্তান আক্রমণ করে তিনি তখন বুঝিতে পারেন যে আমেরিকা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করিয়াছে । কাজেই কোনো মুসলমানের পক্ষে আর আমেরিকায় বসবাস করা জায়েজ হইবে না । তিনি আমেরিকা ত্যাগ করিয়া বিভিন্ন দেশ সফরে বাহির হইয়া গেলেন । সফর করিতে করিতে ২০০৩ সালে আমেরিকা যখন ইরাকে আক্রমণ করিলো শায়খ ইমরান তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করিতেছিলেন । তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে আমেরিকাতে আর তিনি ফিরিয়া যাইবেন না । তার অনেক আগেই স্ত্রীর পরামর্শে তিনি নিউ ইয়র্কের ভাড়া বাসাটি ত্যাগ করিয়াছিলেন, অযথা মাসে মাসে হাজার হাজার ডলার ভাড়া দেওয়ার কোনো মানে হয় না । এই সময় চিন্তায় পড়িয়া গেলেন আমেরিকার চাকরি-বাকরি ছাড়িয়া দিলে সংসার চালাইবেন কেমন করিয়া ? তখন একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটিলো, দক্ষিণ আফ্রিকায় বই বিক্রি করিয়া তাহার ত্রিশ হাজার ডলার আয় হইল । তিনি জীবনে এতো টাকা কখনো একসাথে দেখেন নাই । এই টাকা নিয়া তিনি জন্মভূমি ত্রিনিদাদে ফিরিয়া আসিলেন এবং বসবাসের জন্য একটি বাড়ি বানাইলেন ।
আল্লামা ড. ইশরার আহমদ যদিও তাহার শিক্ষক ছিলেন না কিন্তু মাওলানা ফজলুর রহমান আনসারীর সাথে তাহার পারিবারিক সম্পর্কের কারণে মাওলানা ইমরানের সাথেও তাহার পারিবারিক সম্পর্ক গভীর বন্ধুত্ব ছিল । মাওলানা ইমরান তাহার নিকট থেকে অনেক কিছু শিখিয়াছেন বিশেষত ইসলামিক সাংগঠনিক নেতৃত্ব । ড. ইশরার তাহাকে তাহার প্রতিষ্টিত “তানজিমুল কোরআন” এর উত্তর আমেরিকার আমির নিযুক্ত করিয়াছিলেন । মাওলানা ইমরানের মতে তানজিমুল কোরআনের মাধ্যমে ড. ইশরার ইসলামের এমন খেদমত করিয়াছেন যাহা একজন সুফী দরবেশের পক্ষেও করা সম্ভব না । একদিন একটি অনুষ্টানে ড. ইশরার আহমদ মাওলানা ইমরানকে নির্দেশ দিলেন, এখন থেকে দাজ্জাল এবং ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে তোমার ধ্যান-ধারনা প্রচার করিবে না । মাওলানা ইমরান এক মিনিটও দেরী করিলেন না সাথে সাথেই তাহার নির্দেশ মানিতে অস্বীকার করিলেন । দাজ্জাল এবং ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে মাওলানা ইমরানের গবেষণার ব্যাপারে অনেকেই একমত পোষণ করেন না কিন্তু একজন গবেষকের গবেষণা করার এবং তাহা প্রচার করার অধিকার কেউ কাড়িয়া নিতে পারেন না । দাজ্জাল এবং ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে মাওলানা ইমরান এমন কিছু বলেন যাহা অতীত বর্তমানের কোনো আলেম বলেন নাই । আর সত্য কথা হলো দাজ্জাল এবং ইয়াজুজ মাজুজ নিয়া মাওলানা ইমরান যতটা গবেষণা করিয়াছেন অন্য কোনো আলেম ততটা করেন নাই । তাহার মতে আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা দাজ্জাল এবং ইয়াজুজ মাজুজের সৃষ্টি । হাদিসে বলা হইয়াছে দাজ্জাল পৃথিবীতে ৪০ দিন থাকিবে এবং তাহার প্রথম দিন হইবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হইবে এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন হইবে এক সপ্তাহের সমান এবং বাকী দিনগুলি হইবে স্বাভাবিক দিনের মতো । মাওলানা ইমরানের মতে প্রথম দিন হইবে এক বছরের সমান মানে দুনিয়াবাসীর উপরে ব্রিটিশ শাসন, দ্বিতীয় দিন হইবে এক মাসের সমান মানে দুনিয়ার উপর আমেরিকান শাসন এবং তৃতীয় দিন হইবে এক সপ্তাহের সমান মানে দুনিয়াবাসীর উপর ইজরাঈলের শাসন । ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে শায়খ ইমরানের মতামত হইল তাহাদেরকে মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পূর্বেই মুক্ত করিয়া দেওয়া হইয়াছে । কারণ একটি হাদিসে বলা হইয়াছে যে একদিন নবী করিম (সাঃ) ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া নিদ্রা থেকে জাগ্রত হইয়া বলিলেন যে আজকে ইয়াজুজ মাজুজের দেয়ালে একটি ছিদ্র হইয়াছে মানে নবীজিকে (সাঃ) আল্লাহ পাক স্বপ্নের মাধ্যমে জানাইয়া দিয়াছেন যে ইয়াজুজ মাজুজকে ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে । মাওলানা ইমরানের মতে মুক্ত হইয়া ইয়াজুজ মাজুজ প্রথমে ইউরোপের দেশগুলিতে ছড়াইয়া পড়িয়াছে এবং পরে সেখান থেকে আমেরিকা মহাদেশে ছড়াইয়া পড়িয়াছে । মাওলানা ইমরানের মতে ইউরোপ আমেরিকার রাজনীতি অর্থনীতি সামরিক বাহিনী শিক্ষা সংস্কৃতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি সকল ক্ষেত্রে যাহারা নেতৃত্ব দিতেছেন তাহারা ইয়াজুজ মাজুজের বংশধর । এই জন্য তাহারা অপরাজেয়, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ তাহাদের পরাজিত করিতে ধ্বংস করিতে পারিবে না ।

আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলন নেতা ম্যালকম এক্স এর মেধা এবং সাহসের মাধ্যমে মাওলানা ইমরান অনেক প্রভাবিত হয়েছিলেন । ম্যালকম এক্স ছিলেন অমিত সাহসী নেতা যিনি সত্য কথা বলতে জীবনের ঝুকিঁ নিতেও পিছপা হইতেন না । ম্যালকম বলিতেন আমি সত্য কথা সমর্থন করি যদি তাহা শয়তানও বলে । ম্যালকম এক্স এর নিকট থেকে মাওলানা ইমরান জীবনের ঝুকিঁ নিয়া সত্য কথা বলা শিখিয়াছেন । মাওলানা ইমরান জীবনের ঝুকিঁ নিয়া যেভাবে আমেরিকা-ইজরাঈল-যায়োনিষ্টদের বিরুদ্ধে বিগত বিশ বছর যাবত কথা বলিয়া যাইতেছেন এমনটা অন্য কোনো আলেমকে বলিতে দেখা যায় না । একবার তাহাকে প্রশ্ন করা হইয়াছিল যে, আপনি ইজরাঈলের বিরুদ্ধে যায়োনিষ্টদের বিরুদ্ধে এভাবে কথা বলিবার পরেও এখনো বাচিঁয়া আছেন কিভাবে ? উত্তরে তিনি বলিয়াছিলেন যে, ইজরাঈলের প্রাথমিক টার্গেট হলো আরব মুসলমানরা আর আমি যেহেতু আরব মুসলমান না হয়ত এজন্যই আমাকে তাহারা এখনো টার্গেট করে নাই । ম্যালকম এক্স ছিলেন আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের সংগঠন “ন্যাশান অব ইসলাম” এর সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা । তিনি প্রচার করিতেন যে কৃষ্ণাঙ্গরা হইল মানবজাতির মূল অংশ আর শ্বেতাঙ্গরা হইল দানব শয়তান । ন্যাশান অব ইসলামের সদস্যরা বিশ্বাস করেন যে তাহাদের সংগঠনের প্রতিষ্টাতা এলিজা মোহাম্মদ একজন আল্লাহর নবী । ম্যালকম এক্স পরবর্তীতে সউদী শাহজাদার রাজকীয় মেহমান হিসাবে হজ্জ আদায় করেন এবং সুন্নী ইসলাম গ্রহন করেন এবং তাহার নাম পরিবর্তন করিয়া এলহাজ মালিক এল সাবাজ রাখেন । তিনি যখন দেখিলেন যে কাবা শরীফে সাদা-কালো-বাদামী সব রঙের মানুষ মিলেমিশে থাকেন, সবাই সবাইকে ভালোবাসেন সম্মান করেন, কেউ কাউকে ঘৃণা করেন না তখন তিনি বুঝিতে পারিলেন যে নির্দিষ্ট কোনো রঙের মানুষকে ঘৃনা করা ঠিক না এবং শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ ঘৃণা বিদ্বেষ সমস্যার একমাত্র সমাধান হইল ইসলাম, যাহাতে বলা হইয়াছে সমগ্র মানবজাতি একই পিতা-মাতা আদম-হাওয়ার সন্তান । ফলে ন্যাশান অব ইসলামের নীতির সাথে তাহার মতবিরোধ হওয়ায় তিনি ন্যাশান অব ইসলাম ত্যাগ করেন । তিনি আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আমেরিকার ভিতরে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করিতেন অথবা সরকারী খরচে কৃষ্ণাঙ্গদের তাহাদের পূর্বপুরুষের ভিটামাটি আফ্রিকাতে ফিরাইয়া দেওয়া দাবী করিতেন । ফলে ন্যাশান অব ইসলামের গুণ্ডা এবং মার্কিন সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর যেৌথ চক্রান্তের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের একটি অনুষ্টানে বক্তৃতা করিবার সময় তাহাকে গুলি করিয়া হত্যা করা হয় । মাওলানা ইমরান আমেরিকার যেখানে যত লেকচার দিতেন তাহাতে ম্যালকম এক্সের রেফারেন্স দিতেন প্রশংসা করিতেন । ম্যালকমের স্ত্রী বেট্টি শাবাজ অবাক হইতেন এই ইমাম ইমরান লোকটা কে যে সব সময় আমার স্বামীর কথা বলেন ? বেট্টি সাবাজ একবার নিউ ইয়র্কে ম্যালকমের স্মৃতিচারণমূলক একটি অনুষ্টানের আয়োজন করেন যাহাতে মাওলানা ইমরানকে দাওয়াত করা হইয়াছিল । সেই অনুষ্টানে তিনি ভুলবশতঃ বলিলেন ম্যালকম এক্স ব্যাংক থেকে সুদে ঋণ নিয়া একটি বাড়ি তৈরী করিবার চুক্তি করিয়াছিলেন । তিনি হয়ত জানিতেন না যে ইসলামে সুদ নিষিদ্ধ । আল্লাহ তাহাকে ক্ষমা করুন । তাহার বক্তৃতার পরে বেট্টি শাবাজ বক্তৃতার জন্য মাইক্রোফোনের কাছে গেলেন এবং বলিলেন, ইমাম (মাওলানা ইমরান) বলিয়াছেন আমার স্বামী আল্লাহর জন্য বাচিঁয়াছেন আমার স্বামী আল্লাহর জন্যই মৃত্যুবরণ করিয়াছেন । তারপরে মাওলানা ইমরানের দিকে তাকাইয়া চোখ লাল করিয়া বলিলেন, কিন্তু ইমাম ! আমার স্বামী বাড়ি তৈরীর চুক্তিতে সই করেন নাই তাহার পূর্বেই তাহাকে হত্যা করা হইয়াছে । সে যাক, মাওলানা ইমরানের মতে এই যুগের মুসলিম যুবকদের আইডল হইল ম্যালকম এক্স ।

মাওলানা ইমরান ২০১৪ সাল থেকেই আশংকা করিতেছেন আমেরিকান জোট রাশিয়ান জোটের মধ্যে পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ যে-কোনো মুহূর্তে সংঘটিত হইবে যাহা এখনো পর্যন্ত অনুষ্টিত নাই । ১৯৬২ সালে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার উপক্রম হইয়াছিল এবং সমগ্র মানবজাতি প্রায় দশদিন এই চিন্তায় ভীতসন্ত্রস্থ ছিলো । শায়খ ইমরান মালহামা যুদ্ধ বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে বড় বড় শহরগুলি ত্যাগ করিয়া দূরবর্তী গ্রামগুলো গিয়া বসবাস করিতে উপদেশ দেন । পাকিস্তানের করাচী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনার প্রচারনার জবাবে বলা হইয়াছে যে, “মাওলানা ইমরান কুয়ালালামপুরের বিলাসবহুল এয়ারকণ্ডিশনড এপার্টমেন্টে রকিং চেয়ারে বসিয়া সবাইকে গ্রামে চলিয়া যাওয়ার পরামর্শ দিতেছেন”। সোবহানাল্লাহ ! কি নির্মম জবাব ! সোবহানাল্লাহ ! কি বেদনাদায়ক উত্তর ! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা তো এমন নয় । তিনি মালয়েশিয়াতে “ইনিষ্টিটিউট অব ইসলামিক এস্কেটোলজী” নামে যেই শিক্ষা প্রতিষ্টান স্থাপন করিয়াছেন তাহা কুয়ালালামপুর থেকে অনেক দূরে একেবারে গ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত । সেখানে ছাত্রছাত্রীদের মতো তাহার জন্যও বসবাসের একটি কক্ষ তৈরী করা হইয়াছে । সেখানে খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি ত্রিশ পয়ত্রিশটি গবাদি পশুও আছে । কাজেই মালহামার (মহাযুদ্ধের) পরে ইনশায়াল্লাহ তাহাদের দুধের অভাব হইবে না, মাংসের অভাব হইবে না, শাকসবজির অভাব হইবে না এবং পানিরও অভাব হইবে না । মাওলানা ইমরান এখনো মনে করে যে, আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলেই মালহামা মানে পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । শায়খ ইমরানের মতে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ একজন সাহসী নেতা ছিলেন । তিনি একমাত্র মুসলিম নেতা যিনি নাম ধরিয়া ইহুদীদের সমালোচনা করিতেন এজন্য কাউকে পরোয়া করিতেন না । তিনি বলিয়াছেন যে, “ইহুদীরা সব সময়ই অন্যদের পাইয়া যান যাহারা তাহাদের পক্ষে যুদ্ধ করে” । মাহাথির মোহাম্মদ যতদিন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাওলানা ইমরান ততদিন শান্তিতেই মালয়েশিয়ায় বসবাস করিয়াছেন । কেউ তাহাকে যন্ত্রণা করিতেন না কারণ মাহাথির মোহাম্মদ তাহাকে পছন্দ করিতেন ।

মালয়েশিয়ান পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ সব সময়ই তাহার উপর নজরধারী করিত তবে কোনো ঝামেলা করিত না । তিনি তাহাদেরকে চিনিতেন এবং বক্তৃতার আগে সব সময় বলিতেন “আজকের আলোচনায় সবাইকে স্বাগতম স্পেশাল ব্রাঞ্চকেও স্বাগতম” । মালয়েশিয়ার বিপুল সংখ্যক মানুষ মাওলানা ইমরানের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তাহাদের সহযোগিতায় তাঁহার বইসমূহ সেখানে ছাপা হইতো এবং বিশ্বব্যাপী বিক্রি হইতো । আর এই কারণে তিনি একমাত্র আলেম যিনি কেবল বই বিক্রির রোজগার থেকে নিজের রিজিকের ব্যবস্থা করিতে পারিয়াছিলেন । ইন্দোনেশিয়া যেহেতু মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশ সেজন্য মাওলানা ইমরান ইন্দোনেশিয়াতে ঘনঘন সফর করিতেন । ইন্দোনেশিয়াতেও শায়খ ইমরানের বিরাট ভক্তশ্রেণী গড়িয়া উঠে এবং তাহার বইপুস্তক ইন্দোনেশিয়ার ভাষা বাহাসাতে অনুবাদ হয় জনপ্রিয় হয় । তাহার লেকচারের সম্ভবত আশি ভাগই মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়াতে রেকর্ড করা হইয়াছে । মাওলানা ইমরানের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শন হইলো মুসলিম ভিলেজ বা ইসলামী গ্রাম । তাঁহার মতে শহরগুলিতে দাজ্জালী সভ্যতার প্রভাব খুব বেশী যাহাতে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন করা অসম্ভব । কাজেই যাহারা সত্যিকার অর্থে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন করিতে চাহেন তাহাদের উচিত শহরগুলি থেকে দূরবর্তী কোনো এলাকায় গিয়ে মুসলিম গ্রাম প্রতিষ্টা করিয়া তাহাতে বসবাস করা । মুসলিম ভিলেজ সংক্রান্ত তাঁহার লেকচারগুলিতে উৎসাহিত হইয়া মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেকেই মুসলিম ভিলেজ প্রতিষ্টা করিয়া বসবাস করিতেছেন । ইহা হইলো অনেকটা কোরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের গুহায় বসবাসের মতো দাজ্জালী শিরকী সভ্যতার নাগাল থেকে নিজেদের দূরে সরাইয়া নেওয়ার মতো ।