ডায়াবেটিস আক্রান্ত মাকে দশমীর রাতে ভালোবেসে সন্দেশ খাইয়েছিলেন ৯৮ বছরের বাবা। সেটাই তার অপরাধ। তাই বৃদ্ধ বাবাকেই চড়থাপ্পড় মেরে রাগ মেটালেন ছেলে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের এ ঘটনা পাশের বাড়ির ছাদ থেকে মোবাইল ফোনে বন্দি করেন এক গৃহবধূ। পরে তিনি সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলে ভাইরাল হয়ে যায় মুহুর্তে । এরপর এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্ত ছেলেকে গণপিটুনি দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু তার আগেই পুলিশ গিয়ে ছেলেকে আটক করেছে।
অশোকনগর থানার পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত প্রদীপ বিশ্বাসকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনো কোনও মামলা দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় একজন সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সময়নিউজকে জানান, এই ঘটনা দশমীর পর দিনের। তবে বুধবার(২৪ অক্টোবর) তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই তোলপাড় শুরু হয়।
অশোকনগর এলাকার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্ডিং মোড়ের বাসিন্দা মানিক লাল বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস। প্রদীপ একজন সরকারি চাকরিজীবী। বন্ধনা বিশ্বাস প্রদীপের মা।
৮০ বছরের বয়স্কা ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। দশমীর পরদিন সাধারণত হিন্দুরীতি অনুসারে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। সেই রীতি মেনে নিজের স্ত্রীকে ছেলে ও ছেলে বউকে না জানিয়ে একটা সন্দেশ খাইয়েছিলেন। সেটাই জেনে ফেলেন ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস। তাতেই বাবার ওপর চড়াও হন তিনি।
প্রথমে বাবাকে একটা চড় মারেন। এরপর একের পর এক চড়থাপ্পড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় শতবর্ষের প্রবীণ ওই ব্যক্তিকে।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে প্রদীপ বিশ্বাসের বাড়ি গিয়ে হামলা চালাতে প্রস্তুতি নেন। যদিও এর আগেই পুলিশ গিয়ে অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে ।
বাবার প্রার্থনায় জামিন পেলেন সেই ছেলে!
===============================
বাবাকে পেটানো সেই গুণধর ছেলের জামিনের জন্য আদালতের কাছে বাবাই আবার হাত জোড় করলেন। আর আদালত বাবার আর্জি শুনে, ছেলের জামিনও মঞ্জুর করেন।
বাবার আবেদনে জামিন পেয়ে ভুল স্বীকার করে সবার কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেন ছেলে। বললেন, ‘এই অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই। আমি অনেক বড় ভুল করেছি।’
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলার অশোকনগরের প্রবীণ বাসিন্দা মানিক লাল বিশ্বাসকে তারই ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস চড়থাপ্পড় মেরেছিলেন সম্প্রতি। ডায়াবেটিস আক্রান্ত মা- বন্ধনা বিশ্বাসকে লুকিয়ে মিষ্টি খাইয়েছিলেন তারই বৃদ্ধ স্বামী মানিক লাল বিশ্বাস।
আর সেই অপরাধে সরকারি চাকরীজীবী ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস বাবাকে বেধড়ক প্রহার করেন।
শুধু একদিনের ঘটনাই ছিল না ওই প্রহার। অনেক সময়ই ছোটখাটো বিষয়ে মারধর করা হতো মানিক লাল বিশ্বাসকে। তবে প্রতিবেশীদের কাছে ছেলের এই নির্যাতনের কোনো প্রমাণ ছিল না।
দশমীর পরদিন এক প্রতিবেশী প্রদীপ বিশ্বাসের হাতে তার বাবার আক্রান্ত হওয়ার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন। তিনি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন ওই ভিডিও। দুদিন ধরে সেটাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়।
এরপরই এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ছেলেকে প্রহার করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু ততক্ষণে পুলিশ গিয়ে প্রদীপকে আটক করে। রাতে স্থানীয় আশোকনগর থানায় রাখা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলেকে গ্রেফতার দেখিয়ে বারাসত মহকুমা আদালতে তোলে পুলিশ। কিন্তু আদালতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা তার অভিযোগ প্রত্যাহার করেন এবং ছেলের মুক্তির জন্য বিচারকের সামনে হাতজোড় করে প্রার্থনা জানান।
বিচারকও সব শুনে প্রদীপ বিশ্বাসকে জামিন দেন।
জামিন পাওয়ার পর বাবাকে ধরে কেঁদে ফেলেন অভিযুক্ত ছেলে। প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। এরপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যান দুজন। গিয়ে একসঙ্গে বসে চা-মুড়ি খান।