মাথা ঘোরার চিকিৎসার প্রেসক্রিপশান

মাথা ঘোরা অনুভব করা কোনো মজার অভিজ্ঞতা নয়। আপনার মাথা যখন ঘোরে, মনে হয় একপাশে হেলে পড়ছেন আপনি। তখন ভর দেওয়ার জন্য আপনাকে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে হয়। যতক্ষণ না মাথা ঘোরা চলে যায়, ততক্ষণ এক ভয়ঙ্কর অসুস্থতা আপনাকে গ্রাস করে থাকে। আপনার সমগ্র অস্তিত্বই যেন নড়বড়ে হয়ে যায়।

বিভিন্ন কারণে মাথা ঘুরতে পারে। শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য নির্ভর করে অনেক অঙ্গের স্বাভাবিক কাজকর্মের ওপর। মস্তিষ্কের বিশেষ কেন্দ্রগুলো সঠিক সংকেত পাঠানোর কারণে চোখ, কানের ভেতরের বিভিন্ন অংশ, অস্থিসন্ধিগুলোর ঐন্দ্রিয়ক গ্রাহকগুলো, ঘাড়, মধ্য শরীর ও পায়ের মাংসপেশি ঠিকমতো কাজ করে। যদি এসব অঙ্গের কোনো একটি অথবা মস্তিষ্কের কেন্দ্রগুলোর কোনো একটি আঘাতপ্রাপ্ত হয় কিংবা স্নায়ু সংবাহী পথ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে দুনিয়া ঘুরতে থাকে।

তবে আপনি ভয় পাবেন না, কারণ আপনার ডাক্তার শার্লক হোমসের চেয়ে কম নন! তিনি শুধু আপনার লক্ষণগুলো যাচাই করে এবং আপনার ঘাড়, কান, স্নায়ুতন্ত্র, হৃৎপিণ্ড ও প্রধান রক্তনালিগুলো পরীক্ষা করে মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করতে পারেন।

মাথা ঘোরার কারণ

কীভাবে আপনার মাথা ঘোরা শুরু হয়? এটি কি হঠাৎ করে শুরু হয় এবং অল্প সময় থাকে? যদি তাই হয়, তাহলে সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রয়েছে :

১. অতিরিক্ত পরিশ্রম

২. অন্তঃকর্ণের রক্তবাহী নালির অস্বাভাবিকতা

৩. অন্তঃকর্ণের প্রদাহ

৪. অস্বাভাবিক দৃষ্টিগত সমস্যা। যেমন : অতি উঁচুতে উঠে নিচের দিকে তাকালে এবং চলন্ত ট্রেন বা গাড়ি থেকে প্লাটফর্মের দিকে তাকালে মাথা ঘোরা।

আপনার মাথা ঘোরা কি দীর্ঘ সময় থাকে এবং এটি মাঝে মধ্যেই হয়? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় এবং আপনার কারণে উপসর্গ থাকে, তাহলে মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণ হলো :

১. মধ্যকানের প্রদাহ

২. মেনিয়ারস রোগ

৩. অ্যাকোয়াসটিক নিউরোমা (ভেস্টিব্যুলো ককলিয়ার নার্ভের টিউমার)।

আর যদি আপনার কানের উপসর্গ না থাকে এবং অঙ্গ বিন্যাসজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণ হলো :

১. অঙ্গভঙ্গিজনিত মাথা ঘোরা

২. সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস

আবার যদি আপনার কানের উপসর্গ না থাকে এবং অঙ্গ বিন্যাসজনিত সমস্যা না থাকে, তাহলে মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণ :

১. বিভিন্ন ওষুধ

২. দুশ্চিন্তা

৩. ঘাড়ে আঘাত

৪. কপালের একপাশে ব্যথা

৫. রজঃনিবৃতি (নারীদের ক্ষেত্রে)

আপনার মাথাব্যথা দীর্ঘ সময় এবং অবিরাম থাকলে সেই সঙ্গে  আপনার কানের উপসর্গ থাকলে মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণ :

১. অ্যাকোয়াসটিক নিউরোমা

২. সেরেবেলো পনটাইন অ্যাংগেল টিউমার।

আর আপনার কানের উপসর্গ না থাকলে এবং আপনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণ হলো :

১. মস্তিষ্কের অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ

২. হৃদরোগ

৩. ক্যারোটিড সাইনাস সংবেদনশীলতা

আর অজ্ঞান হয়ে না পড়লে মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণ হলো :

১. রক্তস্বল্পতা

২. উচ্চরক্তচাপ

৩. ডায়াবেটিস

৪. থাইরয়েডের অসুখ

৫. মানসিক দুশ্চিন্তা।

মাথা ঘোরার চিকিৎসাধারা নির্ভর করে মাথা ঘোরার কারণের ওপর। তবে আপনার ডাক্তার সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পেলে এবং আপনাকে শুধু সান্ত্বনা দিলে নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন। এতে আপনার মাথা ঘোরা কমবে এবং আপনি অনেক ভালো অনুভব করবেন।

সাহসী হওয়ার চেষ্টা করবেন না

আপনার হঠাৎ মাথা ঘুরতে থাকলে আপনি যে কাজটা করছিলেন সেই কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। বন্ধ করুন চোখ দুটো। সহজভাবে শ্বাস নিন এবং সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকুন।

আপনি গাড়ি চালাতে থাকলে পা ব্রেকের ওপর রাখুন এবং থেমে পড়ুন। শুয়ে পড়ুন পাশের আসনে। ভাগ্যের ওপর নিজেকে ছাড়বেন না কখনোই। আপনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, যদি আপনার মাথা ঘোরা মারাত্মক হয়।

দুশ্চিন্তা পুষে রাখবেন না

মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এগুলো পুষে না রেখে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তা কাটানো শিখতে হবে।

অনেক লোক তাদের ফুসফুসে চাপ নেয় এবং খুব দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করে। এতে তাদের মাথা ঘুরতে পারে। এ রকম কখনো করবেন না। সর্বদা ধীরে নিয়মিতভাবে শ্বাস নেবেন।

ঘাড় সোজা রাখুন

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘাড় ঠিকমতো সোজা না রাখার জন্য মাথা ঘোরে। ঘাড়ে স্পনডাইলোসিসের পরিবর্তন হলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনিগুলোর ওপর চাপ পড়তে পারে এবং এর কারণে দফায় দফায় মাথা ঘোরে। ঘাড়ের শক্তিশালী মাংসপেশি ও ঘাড়ের সুন্দর স্থিতি অবস্থা এটিকে প্রতিরোধ করতে পারে।

অতিরিক্ত পরিশ্রম নয়

আপনি অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে মাথা ঘোরার অভিজ্ঞতা হতে পারে। কাজ করবেন পরিকল্পনা মাফিক এবং আপনার সাধ্যের মধ্যে। কখনো সীমা অতিক্রম করবেন না। আগে চিন্তা করে তারপর কাজে হাত দেবেন।

সুগারের মাত্রা কমাবেন না

কাজের চাপে একবেলার খাবার না খেলে এবং রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে দ্রুত খেয়ে নিন। রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে আপনার মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

বিশেষ করে, গরমের সময় প্রচুর তরল পান করবেন। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়। তাই শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শরীরকে সব সময় পানিপূর্ণ রাখবেন।

সতর্কতার সঙ্গে ওষুধ খান

অনেক ওষুধ আমরা সচরাচর গ্রহণ করে থাকি। যেমন- অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ও আলসারের ওষুধ। এসব ওষুধ মাথা ঘোরা উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। কোনো ওষুধ গ্রহণে এমন সমস্যা হলে ডাক্তারকে জানান। তিনি ওষুধ পরিবর্তন করে দেবেন।

মাথা ঘোরা অবহেলা করবেন না

আপনার মাঝে মধ্যেই মাথা ঝিমঝিম করলে কিংবা মাথা ঘুরলে তা অবহেলা করবেন না। উপরের পরামর্শ মেনে চলুন এবং ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। ডাক্তারকে বলুন আপনাকে পরীক্ষা করে দেখতে। আপনার কী কারণে মাথা ঘুরছে সেটি ঠিকমতো নির্ণয় করা গেলে সঠিক ও কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। কার্যকর চিকিৎসার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় জরুরি। যখন মাথা ঘোরার নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাবেন না তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মধ্যকান ও মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এমন ওষুধ, যেমন সিনারিজিন গ্রহণ করতে পারেন। এতে মাথা ঘোরা কমবে।

★★ মাথা ঘোরার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ★★
★ মাথা ঘুরালে >> মাথা ঘোরা – কোনিয়াম, ক্যাল্কে – কার্ব, কেলি – কার্ব ।
★ মাথা নাড়লে >> মাথা ঘোরা – ব্রায়ো, ক্যাল্কে – কার্ব, কোনিয়াম ।
★ উপরের দিকে দিকে তাকালে >> মাথা ঘোরা – পালস, সাইলিসিয়া ।
★ নীচের দিকে তাকালে >> মাথা ঘোরা – ফসফরাস, স্পাইজিলিয়া, সালফার ।
★ ফুলের গন্ধে >> মাথা ঘোরা – নাক্স – ভম, ফসফরাস ।
★ রাত জাগা বা নিন্দ্রাহীনতায় >> মাথা ঘোরা – ককুলাস, নাক্স – ভম ।
★ অতি সামান্য শব্দে >> মাথা ঘোরা – থেরিডিয়ান ।
★ হাঁটার সময় >> মাথা ঘোরা – নেট্রাম মিউর, নাক্স – ভম, ফসফরাস, পালস ।
★ পড়ার সময় >> মাথা ঘোরা – নেট্রাম মিউর ।
★ খাওয়ার সময় ও পরে >> মাথা ঘোরা – গ্রাটিওলা, নাক্স – ভম, পালস ।
★ যেন চক্রাকারে ঘুরছে >> মাথা ঘোরা – ব্রায়ো, কোনিয়াম, সাইক্লে, পালস ।
★ যেন বিছানাটি ঘুরছে >> মাথা ঘোরা – কোনিয়াম ।
★ মূর্ছাসহ >> মাথা ঘোরা – নাক্স – ভম ।
★ টলমল করা সহ >> মাথা ঘোরা – আর্জেন্ট-নাইট, জেলস, নাক্স-ভম, ফসফরাস ।
★ চক্ষু বুজলে বা অন্ধকারে >> মাথা ঘোরা – আর্জেন্ট-নাইট, ষ্ট্রামো, থেরিডিয়ান ।
★ ঝাপসা দৃষ্টি সহ >> মাথা ঘোরা – সাইক্লে, জেলস, নাক্স-ভম ।
★ আসন থেকে উঠার সময় >> মাথা ঘোরা – ব্রায়ো, ফসফরাস ।
★ হেট হওয়া অবস্থা থেকে মাথা তুললে >> মাথা ঘোরা – বেলেডোনা ।
★ বিছানা থেকে উঠবার সময় >> মাথা ঘোরা – ব্রায়ো, চেলিডো , ককুলাস ।
★ মাথা নিচু করলে বা হেঁট হলে >> মাথা ঘোরা – বেল, নাক্স, পালস, সালফ ।
★ সিঁড়িদিয়ে উপরে উঠবার সময় >> মাথা ঘোরা – ক্যাল্কে – কার্ব ।
★ সিঁড়িদিয়ে নীচে নামবার সময় >> মাথা ঘোরা – বোরাক্স, ফেরাম ।
★ শোয়ার সময় >> মাথা ঘোরা – কোনিয়াম ।
★ শোয়ার দরকার হয় এমন সময় >> মাথা ঘোরা – ব্রায়ো, ককিউলাস, ফস, পালস ।
★ মাথার পিছন দিকে >> মাথা ঘোরা – জেলস, সাইলি, পেট্রোল ।
★ ঘুমের পরে >> মাথা ঘোরা – ল্যাকেসিস ।
★ ঋতু বিলোপের পর >> মাথা ঘোরা – সাইক্লে, পালস ।

চিকিৎসা = এ সমস্যার জন্য একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়ে মেডিসিন খাবেন, নিজে নিজের ডাক্তারি করবেন না,কারন রোগীর রোগের লক্ষন মিলতে হবে অন্যথায় উপকার পাওয়া যাবে না।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435
ইমো  01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ইমেইল– dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইটwww.zamanhomeo.com

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
 ফেসবুক পেইজে লাইক দিন  https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *