মাসিক ও ডিম্বাণু সম্পর্কে কিছু কথা * জরায়ু (ইউটেরাস)

rupcare_dysmenorrhea1ডাঃ এস.জামান পলাশ
————————–
স্ত্রী-গ্রন্থিদ্বয় (ওভারি)
একটি মেয়ের জন্মের সময়ে তার দুটি স্ত্রী-গ্রন্থিতে প্রায় বিশ লক্ষ ক্ষুদ্র থলি বা ফলিকল থাকে। এই থলি ফাঁপা বলের মত কোষসমষ্টি এবং প্রত্যেকটির কেন্দ্রে একটি অপরিণত ডিম্বাণু থাকে। একটি মেয়ের শৈশবাবস্থায় স্ত্রী-গ্রন্থিদুটি প্রায় অর্ধেক সংখ্যক থলিগুলিকে আত্মভূত করে নেয়। ঋতুচক্র শুরু হওয়ার সময়ে ও প্রজননক্ষম বয়সে স্ত্রী-গ্রন্থিদ্বয়ে অবস্থিত প্রায় চার লক্ষ থলি থেকে তিনশ থেকে পাঁচশয়ের কাছাকাছি পরিণত ডিম্বাণু তৈরী হয়।
দীর্ঘকাল ধরে প্রজনন-বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে এসেছেন যে সব স্তন্যপায়ী স্ত্রীপ্রাণী জন্মের সময়েই যথেষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু-উত্পাদক থলি নিয়ে জন্মায় এবং জীবিতাবস্থায় তাদের শরীরে আর নতুন কোন ডিম্বাণু জন্মায় না। কিন্তু ইদানীং কালে নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে স্ত্রী-ইঁদুরের শরীরে এরকম বহু থলি মজুত থাকে এবং তার থেকে তাদের জীবদ্দশায় নতুন ডিম্বাণু জন্মায়। এটি মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কিনা সে বিষয়ে আরও সমীক্ষার প্রয়োজন আছে।
মেয়েদের প্রজননক্ষম বয়সকালে, প্রত্যেক মাসে, শরীরে প্রবাহিত হর্মোনগুলির প্রভাবে দশ থেকে কুড়িটি থলি (ফলিকল) পরিণত হতে শুরু করে। সাধারণত, একটিমাত্র থলিই সম্পূর্ণরূপে পরিণত হয়। বাকিগুলি পরিণত হওয়ার আগেই আবার আমাদের শরীরে মিশে যায়। ঐ থলির মধ্যেকার কোন কোন কোষ থেকে এস্ট্রোজেন নামে হর্মোনের ক্ষরণ হয়। ডিম্বাণুসহ পরিণত থলিটি স্ত্রী-গ্রন্থির ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ডিম্বাণু জন্মের সময়ে (ওভ্যুলেশন) থলি এবং স্ত্রীগ্রন্থির মুখ খুলে যায় ও ক্ষুদ্রকায় ডিম্বাণু ভেসে বেরিয়ে আসে। এই সময়ে অনেক মহিলা তাঁদের তলপেটের নীচের দিকে বা পিঠে ক্ষণস্থায়ী তীব্র যন্দ্রণা ও খিল ধরা ভাব অনুভব করেন। এর সঙ্গে জরায়ু-গ্রীবা (সারভিক্স) থেকে রসনিঃসৃত হয়, এবং তার সাথে কোন কোন সময়ে রক্তও থাকে। এই সময়ে কোন কোন মহিলার মাথা ধরে, পাকস্থলীতে (গ্যাসট্রিক) যন্ত্রণা হয়, শরীর ছেড়ে দেয়, ও আলস্য বোধ হয়। আবার কেউ কেউ এই সময়ে খুবই সুস্থ বোধ করেন।
ডিম্বাণু জন্মের ঠিক আগে ঐ থলির মধ্যে থাকা হর্মোন উৎপাদনকারী কোষগুলি থেকে এস্ট্রোজেন ছাড়াও প্রোজেস্টেরোন নামক রস নিঃসৃত হয়। ডিম্বাণু বের হয়ে যাওয়ার পরে খালি থলিটিকে কর্পাস লু্যটিয়াম বলে। এই চক্র চলাকালীন কোন মহিলা গর্ভবতী হলে কর্পাস ল্যুটিয়াম থেকে উৎপাদিত কিছু হর্মোন সেই গর্ভকে স্থায়িত্ব দিতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থা না হলে কর্পাস ল্যুটিয়াম আবার শরীরে মিশে যায়।Hijab-in-Bangladesh-27777
ডিম্বাণু জন্মের পরে নির্গত ডিম্বাণুটি একটি নলের (ফ্যালোপিয়ান টিউব) ছড়ানো শেষাংশে প্রবেশ করে তার কয়েকদিন ব্যাপী জরায়ু-মুখী যাত্রা শুরু করে। নলের ভেতরের পেশীগুলি ঢেউয়ের মত সংকোচন ও প্রসারণ করে ডিম্বাণুটিকে এই যাত্রায় সাহায্য করে। প্রত্যেকটি ডিম্বাণুবাহী নলের ভেতরের দেওয়ালে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রোম আছে যেগুলি ক্রমান্বয়ে ওঠানামা করে। যোনিপথে পুরুষ শুক্রাণু প্রবেশ করলে তা জরায়ু-গ্রীবা হয়ে জরায়ু পথে ডিম্বাণুবাহীনলে প্রবেশ করে। এই রোমরাজি শুক্রানুকে স্ত্রী গ্রন্থির দিকে ডিম্বাণুর কাছে ঠেলে দিতে সাহায্য করে।
গর্ভাধান (ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন) হলে তা সাধারণত ডিম্বাণুবাহী নলের শেষের দিকে (স্ত্রী-গ্রন্থির কাছে) ডিম্বাণু জন্মের একদিনের মধ্যে হয়। একটি গর্ভাধান হওয়া ডিম্বাণু আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয়দিনের মধ্যে জরায়ুতে পৌঁছায়। ডিম্বাণুটির গর্ভাধান না হলে সেটি ঋতুস্রাবের আগে যোনিপথে অন্যান্য ক্ষরণের সাথে বেরিয়ে যায়। এই নির্গমণ বোঝা যায় না। এই চক্র চলাকালে বিভিন্ন হর্মোনের প্রবহনে জরায়ু-গ্রীবায় উৎপাদিত শ্লেষ্মা ও তরল বেরিয়ে যাওয়ার একটি সাধারণ ধরণ আছে। তবুও নিজের ক্ষরণের ধরণ চেনা যায়। ডিম্বাণু জন্মের আগের অবস্থায় জরায়ু গ্রীবা থেকে ক্ষরিত তরলকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের (মাইক্রোস্কোপ) তলায় দেখলে জট পাকানো তন্তুজালের মত লাগে। কিন্তু হর্মোনের প্রভাবে ডিম্বাণুর জন্মের সময় যত এগিয়ে আসবে ঐ ক্ষরণের গঠন বদলে গিয়ে অপেক্ষাকৃত লম্বা সরলরেখার মত বা ক্ষীণ সুতোর মত দেখতে তন্তু তৈরী হবে। এই সুতোই শুক্রাণুকে জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। অর্থাত্ এই তরলটি জরায়ুর দ্বাররক্ষীর ভূমিকা পালন করে। ডিম্বাণুর জন্মের সময়ে এই তরল মসৃণ ও ঘন হয়ে যোনির অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে আবরণের সৃষ্টি করে এবং শুক্রাণুকে যোনির অম্ল-ক্ষরণ জনিত সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে। শুক্রাণু জরায়ু-গ্রীবা নিসৃত উর্বর ক্ষরণের মধ্যে পাঁচদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ডিম্বাণু জন্মের পরে প্রোজেস্টেরন হর্মোনের সঙ্গে এস্ট্রোজেনের বিক্রিয়ার ফলে এই ক্ষরণ আরও ঘন হয় এবং ক্রমশ যোনিতে শুকিয়ে যায়।

জরায়ু-ঝিল্লী (এনডোমেট্রিয়ম) ও জরায়ু (ইউটেরাস)dep_10071343-Ovary-and-ovulation-process1
পরিণত হতে থাকা থলিগুলি (ফলিকল) থেকে উত্পাদিত এস্ট্রোজেন জরায়ু ঝিল্লির দেওয়ালে লেগে থাকা গ্রন্থিগুলিকে (গ্ল্যাণ্ডস) বেড়ে উঠতে ও চওড়া হতে সাহায্য করে এবং এই গ্রন্থিগুলিতে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। জরায়ু-ঝিল্লির এই অবস্থাকে ঋতুচক্রের বিস্তার পর্যায় (প্রলিফরেটিভ ফেজ) বলে এবং তা ছয় থেকে কুড়ি দিন পর্যন্ত চলতে পারে। থলি থেকে ডিম্বাণু বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রোজেস্টেরন উৎপাদিত হয় এবং তা জরায়ু-ঝিল্লির গ্রন্থিগুলিকে ভ্রুণের পুষ্টি সাধক পদার্থ ক্ষরণের শক্তি যোগায়। এই অবস্থাকে ঋতুচক্রের ক্ষরণ পর্যায় (সিক্রেটারি ফেজ) বলে। গর্ভাধান হওয়া ডিম্বাণু এই ক্ষরণ পর্যায়েই স্থাপিত হতে পারে, বিস্তার পর্যায়ে নয়। গর্ভাধান না হলে ডিম্বাণুহীন থলি (ফলিকল) প্রায় বার দিন ধরে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন উৎপাদন করে এবং এই সময়ের শেষের দিকে হর্মোনগুলি ক্রমহ্রাসমান হারে তৈরী হয়। এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকলে জরায়ুর মধ্যেকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিরা উপশিরাগুলি বন্ধ হয়ে যায়।
জরায়ু-ঝিল্লির দেওয়ালগুলি আর পুষ্ট থাকে না এবং ক্ষরণ হয়। এই অবস্থাকে ঋতুস্রাব হওয়া বলে।
ঋতুচক্র বিষয়টি মহিলাদের প্রায়শই এমনভাবে বোঝানো হয় যেন সেটি গর্ভাধান না হওয়ার দরুণ একটি দুর্ঘটনাজনিত প্রক্রিয়া। কিন্তু আসলে ঋতুস্রাব হওয়া সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ এবং আমাদের শরীরের অন্তর্বর্তী প্রক্রিয়াগুলিকে পরিষ্কার রাখার উপায়।

*************************************************************

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *