রাগ প্রতিকারে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

images (1)

রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ বা অনুভূতি যেটা আমার আপনার সবারই আছে। রাগের অন্য নাম ক্রোধ, আক্রোশ বা বিদ্বেষ, ইত্যাদি যদিও এই শব্দগুলো সবসময় একদম একই অনুভূতির কথা বোঝায় না। অভিমান কিংবা দুঃখ অনেক সময় রাগের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেখানে আমাদের প্রত্যাশা বা চাহিদা পূরণ হয় না সেখানেই রাগের উৎপত্তি। দৈনন্দিন জীবনে যদিও রাগকে অনেক সময়েই আমরা নেতিবাচক অনুভূতি বলে মনে করি, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদরা অনেকে মনে করেন যে দুঃখ, ব্যর্থতা ভয় ও অত্যাচারজনিত মানসিক অনুভূতিকে আয়াত্তে আনার জন্য যে আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশ পায়, তাই হলো রাগ।
রাগের প্রকাশ
রাগের সময় মানুষ হিংস্র ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কণ্ঠস্বর উচ্চ মাত্রায় হয়, সাধারণ জ্ঞান লোপ পায়, লজ্জা-শরম উঠে যায়, কেউ কেউ আছে যারা রাগের যাতনা সহ্য করতে না পেরে কেঁদে দেন। এমন লোকও আছে যারা রাগলে তা অন্যের ওপর প্রয়োগ করতে না পারলে নিজের ওপরই প্রয়োগ করেন। কেউ কেউ রাগের সময় নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরেন বা ঠোঁট কামড়াতে থাকেন। কেউ কেউ দাঁতে দাঁত পিষতে থাকেন। কেউ কেউ আবার নিজের মাথার চুল টেনে ধরেন। এমন ব্যক্তিও আছেন যিনি প্রচণ্ড রাগের সময় তা সামলাতে না পেরে কোনো কিছুতে মাথা ঠোকেন। নিজের হাত নিজে কামড়াতে থাকেন কেউ কেউ।images
কারো কারো রাগ আবার বিধ্বংসী টাইপের। এসব টাইপের মানুষরা রাগে অন্ধ হয়ে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে শুরু করে দেয়। অনেকের রাগ আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে থাকে। তারা রাগের বশবর্তী হয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সবাই কিন্তু আবার সমানভাবে রাগে না। কোনো কারণে কেউ হয়তো চট করে রেগে ওঠে যাদের আমরা বলি মাথা গরম, আবার কেউ বা তার চেয়ে বেশি রাগের কারণেও খুব বেশি রাগ করে না, কেউ হয়তো এতটাই রাগ করে যে তার রাগের কোনো বহিঃপ্রকাশ হলো না বটে, তবে পারিপার্শ্বিকতা থেকে নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নেয়। এই যে একেকজনের রাগের প্রকাশ একেক রকম তার মূলে রয়েছে জেনেটিক প্রভাব, পারিবারিক প্রভাব ও সামাজিক প্রভাব। জটিলতাপূর্ণ পরিবার ও বাবা-মায়ের অশান্তিময় দাম্পত্য সম্পর্ক সন্তানকে অন্যান্য আচরণ বৈকল্যের পাশাপাশি রাগের প্রকাশভঙ্গিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
রাগের প্রভাবে বিভিন্ন উপসর্গ
রাগের জন্য বিভিন্ন পেশিতে টেনশন বাড়ার ফলে প্রধানত মাথা, ঘাড় আর পিঠে ব্যথা হয়। হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ঠ হতে পারে। রাগের ফলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি হয়। ফলে বদহজম, অ্যাসিডিটি এবং আলসার হতে পারে। রাগ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। রাগ শরীরস্থ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়, নানা রকম রোগ দেখা যায়, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ডোম (আইবিএস) ইত্যাদি। মনঃসংযোগের ক্ষমতা কমে যায়, অস্থিরতা বেড়ে যায়। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ এবং বিষণœতা দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাওয়ার পরিমাণ অস্বাভাবিক হতে পারে। অনেকেই রাগ করে খাওয়াই বন্ধ করে দেন। তেমনই কিছু কিছু রোগীর খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন অনেক ডায়াবেটিক রোগী রেগে গেলে নিষিদ্ধ খাবার বেশি খেয়ে ফেলেন।
কেন মাথা গরম হয়
রাগের উৎস খুঁজতে গেলে আমাদের পৌঁছে যেতে হবে মস্তিষ্কে। সেরিব্রাম বা গুরু মস্তিষ্কের এক বিশেষ অঞ্চল লিম্বিক সিস্টেম, মাস্টার গ্ল্যান্ড পিট্যুইটারি আর হাইপোথ্যালামাসের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এলএইচপিএ অর্থাৎ লিম্বিক হাইপোথ্যালামাস পিট্যুইটারি অ্যাক্সিস। এই অ্যাক্সিসের কলকাঠি বাড়ায় সৃষ্টি হয় ষড়রিপুর অন্যতম ক্রোধ বা রাগ। রাগ, দুঃখ ভয়, এসবের পেছনেই আছে মূলত দুটি নিউরোহরমোনের মাত্রার ওঠানামা। এরা হলো অ্যাড্রিনালিন আর নর-অ্যাড্রিনালিন। এদের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ রেগে ওঠে আর এ ক্রমাগত চাপা রাগ এই দুই হরমোনের মাত্রা আরো ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে, ব্যাপারটা চলতেই থাকে চক্রাকারে।download
রাগ কি করে সামলাবেন
আমেরিকান মনোচিকিৎসক ডা. চালর্স স্পিলবার্গার রাগের নিয়ন্ত্রিত প্রকাশভঙ্গির কথা উল্লেখ করেছেন। তার গবেষণায় তিনি বলেছেন রাগকে পুরোপুরি চেপে রাখা যাবে না। একেবারে দমন করাও যাবে না, কারণ অবদমিত রাগ থেকে জš§ হতে পারে নানা রকম মানসিক রোগও শারীরিক সমস্যা। তাই আমি কিছুতেই রাগব না রাগ দমিয়ে রাখার মূলমন্ত্র কিন্তু এটাই। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে মানুষে মানুষে বোঝাপড়া যেমন দরকার, তেমনই প্রয়োজন-রাগের কারণ ভুলে যাওয়া এবং অবশ্যই ক্ষমা করা। ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখলে শত্রুর ওপরেও রাগ করতে পারবেন না।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান
রাগ নিয়ন্ত্রণে হোমিওপ্যাথিতে ফলদায়ক ওষুধ আছে। যা অন্য প্যাথিতে নেই। লক্ষণ সাদৃশ্যে নি¤œলিখিত ওষুধ ব্যবহƒত হয়। যথা- ১) একোনাইট ন্যাপ ২) এন্টিম ক্রুড ৩) এপিস মেল ৪) অরাম মেট ৫) বেলেডোনা ৬) ব্রায়োনিয়া এল্ব ৭) ক্যালকেরিয়া ৮) কষ্টিকাম ৯) ক্যামোমিলা ১০) হিপার সালফ ১১) কেলি কার্ব ১২) কেলি আয়োড ১৩) লিলিয়াম-টিগ্রি ১৪) নেট্রাম মিউর ১৬) নেট্রাম-কার্ব ১৭) প্ল্যাটিনাম ১৮) সিপিয়া ১৯) এসিড সালফ ২০) লাইকোপোডিয়াম, ২১) থুজা, নাক্সভমিকা উল্লেখযোগ। তারপরেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ সেবন করা উচিত।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435 //01670908547
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *