রোজার মাসে খাবারদাবার বেছে খান

রোজার মাসে খাবারদাবার বেছে খান

ডাঃ এস.জামান পলাশ

রোজা পালন করতে গিয়ে অনেকে শঙ্কিত বোধ করেন, যদি তাঁদের কোনো অসুস্থতা থাকে তাহলে কি হবে। তবে যদি রোগ বুঝে খাওয়া হয়, তাহলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না বলে ডাক্তারা জানিয়েছেন। আবার যাঁদের কোনো অসু¯’তা নেই, তাঁরাও যদি সঠিকভাবে খাদ্য নির্বাচন 2করে খান তাহলেও তাঁরা নির্বিঘ্নে এক মাস রোজা রাখতে পারেন। রোজার সময় সাধারণত তিনবার খাবার খাওয়া হয়স্তইফতার, সন্ধ্যা রাতে ও সেহরিতে। সারাদিন রোজা রাখার পর রকমারি ইফতারের লোভ সংবরণ করা সত্যিই কষ্টকর হয়।

তবে মনে রাখা প্রয়োজন, অন্যান্য দিনে যার যতটুকু এবং যেভাবে খাবার গ্রহণ করা উচিত, রোজার দিনেও সেটি মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ অসু¯’তার কথা বিবেচনা করে নিষিদ্ধ খাবারগুলো পরিহার করে রোজা রাখলে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। অথচ দেখা যায়, একজন লোকের সারা দিনে যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন, শুধু ইফতারিতে এর পুরোটাই খাওয়া হয়ে যায়। কারণ ইফতারের উপাদানগুলো সবই ক্যালরিবহুল।
যেমন: ২৫ গ্রাম ছোলা ভাজা ৯২ ক্যালরি, পেঁয়াজু দুটি ১০০ ক্যালরি, এক কাপ হালিম ২০০ ক্যালরি, ১০০ গ্রামের একটি কাবাব ১৭০ ক্যালরি, জিলাপি একটি বড় ২০৩ ক্যালরি, এক গ্লাস শরবত ৮০-১০০ ক্যালরি, এক কাপ মুড়ি ৬০ ক্যালোরি ও দুটি খেজুর ১৪৪ ক্যালরি। সুতরাং দেখা যা”েছ, শুধু ইফতারি থেকেই আমরা ১০০০ থেকে ১১০০ বা ১২০০ ক্যালরি গ্রহণ করে থাকি।
সারাদিন পর এত ক্যালরিবহুল খাবার ওজন বাড়ানো ছাড়াও পেটের গোলমাল সৃষ্টি করতে পারে। সে জন্য ইফতারি হওয়া উচিত হালকা ও সহজপাচ্য। কারণ ইফতারের আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পর রাতের খাবার খাওয়া হয়। অনেকের অভিমত, ইফতারি বেশি করে খেয়ে সন্ধ্যা রাতের আহার না করাই ভালো। তবে এ ধারণা ঠিক নয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস থাকলে হাইপোগ্রাইসেমিয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কারণ এতে ইফতারের প্রায় ১০-১১ ঘণ্টা পরে পরবর্তী খাবার খাওয়া হয়। তারপর সারা দিন উপবাস। এতে দেহে কান্তি আসে, অলসতা আসে। আবার অনেকে ইফতারের পর বেশি রাতে আহার করেন এবং সেহরিতে একেবারেই ওঠেন না। উঠলেও শুধু পানি পান করে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। এটা ধর্মীয় ও স্বা¯’্যবিধিস্তউভয় মতেই ঠিক নয়। সুতরাং তিন বেলায়ই খেতে হবে। তবে তা হতে হবে পরিমিত ও সহজপাচ্য।

রোজার সারা দিন যেহেতু পানি পান করারও বিধান নেই। এ কারণে পানিশূন্যতা রোধের জন্য ইফতারের সময় শরবত একান্ত প্রয়োজন। সরবতের উপকরণগুলো হলো কাগজি লেবু, বেল, ফলের রস, স্কোয়াশ, তেঁতুল, দই, চিঁড়া, ইসপগুল ইত্যাদি। ডাবের পানিও শরবত হিসেবে খাওয়া যায়। তোকমা ও ইসপগুলের শরবত বেশ ঠান্ডা। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র ও পাক¯’লীর প্রদাহ, পেটের গোলমাল ইত্যাদিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বেলের শরবতও ভালো। এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি রয়েছে প্রচুর। যেকোনো ফলের রস ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাব মেটাতে পারে।

শরবতের পরই ডালের ¯’ান রয়েছে প্রথমেই। যেমনস্তমটর, ছোলা, বেসন, ডালের বড়া, হালিম সবই প্রায় ডালের তৈরি। ছোলায় রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, খাদ্যশক্তি ও শর্করা। ছোলা ভুনা ছাড়াও ঘুঘনি, চটপটি, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ ইত্যাদি খাওয়া হয়।

অনেকে রমজান মাসে উ”চমূল্যের প্রোটিন বা আমিষ খান। তাঁদের ধারণা, মাংস ও বড় মাছ না খেলে রোজা রাখা যাবে না। কারণ শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। অথচ ইফতারিতে এত বেশি তেল ও ডাল খাওয়া হয় যে দেহে কোনো ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। তেল যেমন শরীরে শক্তি জোগায়, তেমনি ডাল আমিষের ভালো উৎস। যেমনস্তইফতারের অন্য একটি আকর্ষণীয় খাবার হালিম। পুষ্টির দিক থেকে এটি অনন্য। এতে থাকে চাল, ডাল, গম, মাংস, তেল, ঘি, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা ও লেবুর রস। এটাকে একটি সম্পর্ণ খাবার বলা যায়। কারণ এতে চাল ও গমের অ্যামাইনো এসিড লাইসিন, ডাল ও মাংসের অ্যামাইনো এসিড মিথায়নিন ও ট্রিপটোফ্যান সংমিশ্রণ হয়।

এ ছাড়া চর্বি ও ভিটামিন তো আছেই। তবে বাড়ির তৈরি হালিম খাওয়াই ভালো।

ইফতারিতে ফল একটি গুর“ত্বপূর্ণ ¯’ান দখল করে। ফলে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও ধাতব লবণ। খেজুর, পেয়ারা, কলা, পাকা পেঁপে, কমলা, আম, আনারস, আপেলস্তএর সবই ইফতারিতে সংযোজন করা যেতে পারে।

দেখা যায়, সারা দিন রোজা রাখার পর ভাজা খাবার পাক¯’লীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাই ডুবো তেলে ভাজা খাবার কমিয়ে দিয়ে সহজপাচ্য ও জলীয় খাবার খেতে পারলে ভালো হয়। এ সময় অনেকের মধ্যে পানিশূন্যতা দেখা যায়। এ জন্য ইফতারিতে ভেজা চিঁড়া, দই, চিঁড়ার পোলাও, দুধ-সেমাই, পায়েস, নরম খিচুড়ি খেলে ভালো হয়। পাশে দুটি তালিকা দেওয়া হলো।

ক্যালোরি১৪০০

ইফতার:

ছোলা ভাজা আধা কাপ = ৮০ গ্রাম, পেঁয়াজু দুটি ছোট, বেগুনি একটি, মুড়ি এক কাপ, খেজুর দুটি, ফল যেকোনো একটি, শরবত এক গ্লাস, হালিম এক বাটি (সুপের), আলুর চপ দুটি।

সন্ধ্যা রাতে:

ভাত এক কাপ = ১২০ গ্রাম, মাছ অথবা মাংস এক টুকরা = ৩০ গ্রাম, সবজি ই”ছামতো।

সেহরিতে:

ভাত দুই কাপ, মাছ অথবা মাংস এক টুকরা = ৩০ গ্রাম, ডাল এক কাপ, সবজি ই”েছমতো, দুধ আধা কাপ।

ক্যালোরি ২০০০

ইফতার:

ছোলা ভাজা ৩/৪ কাপ = ১২০ গ্রাম, পেঁয়াজু তিনটি ছোট, বেগুনি দুটি, মুড়ি দুই কাপ, খেজুর দুটি, শরবত এক গ্লাস

ফল যেকোনো একটি

হালিম দুই বাটি (সুপের)

আলুর চপ দুটি

সন্ধ্যা রাতে:

ভাত আড়াই কাপ = ৩০০ গ্রাম

মাছ অথবা মাংস দুই টুকরা = ৬০ গ্রাম

সবজি ই”েছমতো

সেহরিতে:

ভাত তিন কাপ = ৩৬০ গ্রাম

মাছ অথবা মাংস দুই টুকরা = ৬০ গ্রাম

ডাল এক কাপ

সবজি ই”েছমতো

দুধ এক কাপ।
ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট -www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *