অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
রোজার সময় বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনযাপন, খাবার সব যেন হয় স্বাস্থ্যসম্মত এবং রক্তের সুগারের মান যেন থাকে নিয়ন্ত্রণে। তবে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগী স্বতন্ত্র, প্রত্যেকেই রোজা শুরুর আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। রোগী দিনে কয়েকবার রক্তের গ্লুকোজ মান গ্লাকোমিটারে চেক করে নিন। যেসব রোগী ইনসুলিন নেন, তাঁদের জন্য এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যাঁরা ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ নেন, তাঁরা পবিত্র রমজানে অবশ্য রক্তের গ্লুকোজ চেক করে ওষুধের ডোজ ঠিক করে নেবেন।
যাঁরা রোজা রাখেন, তাঁদের খাওয়ার ধরনও পাল্টে যায় অন্য সময়ের তুলনায়। বেশির ভাগ স্বাস্থ্য সমস্যা হয় তিনটি কারণে—বেঠিক খাদ্য বা অতিভোজন এবং কম ঘুম। তাই রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবারের চেয়ে কোনোভাবে ভিন্ন হওয়া উচিত নয়।
তাঁদের বিশেষ চাহিদা ও স্বাস্থ্য সমস্যা অনুযায়ী খাওয়ার উপযোগী করে নেওয়া উচিত। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে এ জন্য। তাঁদের শরীরের ওজন বেশি তারতম্য যেন না হয়। বেশির ভাগ গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা রোজা রাখেন, তাঁদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রোজার মাসে দেহের ওজন বজায় রাখেন, আবার ২০-২৫ শতাংশ ওজন অর্জন করেন বা হারান। রোজার মাসে ইফতারে অতিভোজন, প্রচুর শর্করা ও তেল-চর্বি খাবার না খাওয়া উচিত। অবশ্য এখন অনেকেই খুব স্বাস্থ্যসচেতন।
সেহ্রির সময় এমন খাবার খেতে হবে, যেগুলো শরীরে হজম হয় ধীরে, শোষণ হয় ধীরে। ব্রাউন ব্রেড বা আটার রুটি ৬টি, মাছ বা মাংস দুই টুকরা, ডাল এক কাপ বা দুধ এক কাপ, ইচ্ছামতো সবজি। জটিল শর্করা চাই এ সময়, যাতে হজম ও শোষণ ধীরে হয়। রোজা শুরু করার আগে আগে খেতে হবে সেহ্রি।
আর একটি কথা, ইফতার থেকে সেহ্রি পর্যন্ত অল্প করে করে অনেক পানি পান করতে হবে, যাতে রোজার সময় শরীরে পানিশূন্যতা না হয়। এখন খুব গরম, তাই পানি, ফলের রস, সুপ, জলীয় খাবার খেতে হবে।
রান্নায় যেন থাকে হালকা মসলা ও কম তেল। ভাজা, তেল-চর্বি বেশি—এমন খাবার খুব কম খেতে হবে। স্বাভাবিক শরীরচর্চা চলবে। তবে বেশি শরীরচর্চা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। রক্তের সুগার হঠাৎ খুব কমে গিয়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে ইফতারের দু-তিন ঘণ্টা আগে এমন ঝুঁকি থাকে। ইফতারের পর নামাজ ও শরীরচর্চার সুফল দিতে পারে।
অনেকের ডায়াবেটিসের সঙ্গে থাকে অন্য জটিলতা যেমন—কিডনি রোগ, উচ্চরক্তচাপ, উচ্চমান ইউরিক অ্যাসিড, তাঁদের ডালের তৈরি খাবার বেশি না খাওয়া ভালো। মুড়ি, চিড়া, এমনকি দু-একটি আলুর চপ চলবে। শিমের বিচি, রেডমিট খাওয়া যাবে না। ডুবো তেলে ভাজা বা ঝাল মসলার খাবার বর্জন করা শ্রেয়, স্বাদ মনে হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
রোজা রেখে অনেক হাঁটা যাবে না, ভারী ব্যায়াম না। সেহ্রিতে না খেয়ে রোজা রাখা বিপজ্জনক হতে পারে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য।