রোজায় শিশুকে দুধ পান করাতে মায়েদের করনীয়

4

অনেক মা মনে করেন, রোজা অবস্থায় শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুরা কম দুধ পায় এবং পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে অথবা রোজার ফলে মার শরীর অসুস্থ হবে ইত্যাদি। তখন বুকের দুধ না
দিয়ে বাজারে বিক্রীত পাউডার দুধ খাওয়ান। আসলে এটা ঠিক নয়।

মায়েরা বেশি বেশি খান এবং তরল খাবার যেমন- দুধ ও দুধজাতীয় খাবার, ফলসহ পুষ্টিকর খাদ্য ইফতারের পর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবেন। রোজার সময় আমাদের খাবারের অভ্যাসটা পরিবর্তন হয় মাত্র দিনের বদলে রাতে খেতে হয়। আল্লাহতায়ালা কোনোকিছুই কষ্টসাধ্য করেননি। তার বান্দার জন্য সবকিছু সহজ করে দিয়েছেন। যদি কোনো মা মনে করেন রোজা রেখে তার শিশুকে দুগ্ধ পান করালে অসুস্থ হয়ে পড়েন বা খারাপ লাগে তাহলে তিনি রোজা এ সময় না রাখলেও পরে এগুলো কাজা রোজা দিতে পারবেন। পরে একটা রোজার জন্য একটাই রোজা রাখতে পারবেন।

অবশ্য একেক জন মার শারীরিক সুস্থতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কোনো কোনো মা তার শিশুকে দুধ পান করালেও তার নিজের কোনোকিছু পরিবর্তন বা অসুস্থতা মনে করেন না। আবার অনেক মা একটুতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। যেমন মায়ের মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ইত্যাদি। তবে সব মায়েরই উচিত রোজা রাখা এবং ইফতারের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার এবং পানি খেতে হবে।

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ -এ সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়াতে ১০টি শিশুবান্ধব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রোজা রেখেও মায়েরা নির্ভয়ে দুধ শিশুদের খাওয়ার এবং সফলতা আনতে পারেন।

১. মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে গৃহীত নীতিমালাটি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিয়মিতভাবে জানানো।

২. স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সব কর্মীকে এই নীতি সঠিকভাবে মেনে চলার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান।

৩. (ক) সব গর্ভবতী মাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা জানাতে হবে, (খ) যথাযথ বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সময়মতো প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান।

৪. জন্মের আধা ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সব মায়ের জন্য সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

৫. শিশুকে সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য মা ও পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা।

৬. জন্ম থেকে ছয় মাস (১৮০ দিন) পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবার বা পানীয় দেয়া যাবে না (জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার প্রয়োজন ব্যতীত)।

৭. হাসপাতালে মা ও শিশুকে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা একই সঙ্গে থাকার সুযোগ প্রদান।

৮. শিশুর চাহিদা মতো মায়ের দুধ দেয়া।

৯. শিশুদের মুখে কখনোই বোতল বা চুষনি না দেয়া।

১০. পাড়ায় পাড়ায় শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সহযোগী দল গঠন করা এবং মা হাসপাতাল বা ক্লিনিক ছেড়ে যাওয়ার সময় সেসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া।

সুতরাং আমরা সবাই মায়েদের সহযোগিতা ও সাহায্য করি, যাতে করে তারা যেন নিয়মিত শিশুদের তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। সুতরাং শঙ্কিতবোধ না করে রোজার সময় বুকের দুধদানকারী মায়েরা অনায়াসে রোজা পালন করতে পারেন। রোজার সময় তিনবার খাবার খাওয়া হয় ইফতার, সন্ধ্যা রাতে ও সেহরিতে।

ইফতারের সময় প্রায় ১১০০ থেকে ১২০০ ক্যালরি খাবারের মধ্য থেকে আমরা গ্রহণ করে থাকি, যেমন_ ছোলা ২৫ গ্রামে ৯২ ক্যালরি, দুটি পিঁয়াজুতে ১০০ ক্যালরি, এক কাপ হালিমে ২০০ ক্যালরি, জিলাপি একটা বড় আকারের ২০৩ ক্যালরি, ১ গ্লাস শরবতে ৮০ থেকে ১০০ ক্যালরি, একটি কাবাব ১০০ গ্রামের ১৭০ ক্যালরি, মুড়ি ১ কাপে ৬০ ক্যালরি, খেজুর ১৪৪ ক্যালরি দুটিতে।

এত ক্যালরিযুক্ত খাবার ওজন বাড়াবে বৈ কমবে না এবং পর্যাপ্ত দুধও হবে, শিশুদের জন্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে ভাজা-পোড়া ও ঝালযুক্ত খাবার পরিহার করা। যেমন- পেট খারাপ না হয়, গ্যাস্টিকের ব্যথা না হয়। এর পর সন্ধ্যা রাতের খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত যেমন- ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, ভাজি, সবজি, দুধ, কলা ইত্যাদি।

সেহরিতেও ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ফল, দুধ খেতে হবে শিশুদের দুধ খাওয়ানোর চিন্তা করে। মায়েরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খান, যা হবে পুষ্টিকর সন্তানদের দুধ খাওয়াতে কোনো সমস্যা বা অসুস্থতা আসবে না। ইফতারের সময় শরবত যেমন_ লেবু, বেল, ফলের রস, স্কোয়াশ, দই, চিঁড়া ইত্যাদি দিয়ে তৈরি শরবত খাওয়া উচিত।

কাজেই মায়েদের আমরা সবাই সহযোগিতা করি শিশুদের দুধ খাওয়ানোর জন্য এবং রোজা পালন করতে। আমাদের সহযোগিতায় মায়েরা নির্ভয়ে রোজা রাখতে পারবেন এবং তাদের আদরের সোনামণিদের নিশ্চিন্তে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন।

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *