শিশুরও আছে কিডনি রোগের ঝুঁকি

215915sisu-n1বছরে অর্ধলাখের বেশি শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যাদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। শিশুদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অথচ একটু সতর্ক হলে বহু ক্ষেত্রে শিশুকে কিডনি রোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব।

সাধারণত সংক্রমণ ও অসংক্রামক উভয় কারণেই কিডনি রোগ হয়। আকস্মিক ও ধীরগতির কিডনি বিকল—এই দুই ধরনের কিডনি রোগ দেখা যায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু অল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তাদের দুটি কিডনির নেফ্রোন বা ছাঁকনির সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম এবং এই কমসংখ্যক নেফ্রোনের জন্য কিডনি তার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে না।

♦   গর্ভাবস্থায় যদি আমিষ কম খাওয়া হয় এবং আয়রন ও ভিটামিনের অভাব পরিলক্ষিত হয়, তবে শিশুর কিডনির নেফ্রোনের সংখ্যা বা ছাঁকনির সংখ্যা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের কিডনিতে ইনফেকশন হয় এবং তা যথাসময়ে চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে গর্ভাবস্থায় শিশুর কিডনি-বৈকল্য হতে পারে বা ওজন কম নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।

♦   স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুরা কিডনি জটিলতার কারণে পরবর্তী সময়ে উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

♦   যেসব শিশু কম বয়সে মুটিয়ে যায় বা ওজন বেশি হয়, পরবর্তী সময়ে তাদেরও কিডনি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

শিশুর কিডনি রোগ কি নিরাময়যোগ্য?

শিশুদের বেশির ভাগ কিডনি রোগই নিরাময়যোগ্য। জন্মগত জটিলতা শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, মশার কামড়ের মতো কিছু কারণে যে ধরনের আকস্মিক কিডনি রোগ বা অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওর এবং টনসিল ইনফেকশন ও খোশপাঁচড়া থেকে কিডনির যেসব রোগ হয়, তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।images

কিডনি রোগের কারণ

কিডনি রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবুও যেসব কারণে সচরাচর কিডনি রোগ বেশি হয় সেগুলো হলো—

জন্মগত কিডনির ত্রুটি : মাতৃগর্ভেই শিশু কিডনিজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে। কোনো কোনো শিশু একটি কিডনি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। আবার দুটি কিডনি নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও অনেক শিশুর একটি কিডনি কাজ করে না। আবার একটোপিক প্রেগন্যান্সির কারণে অনেক সময় কিডনি তার স্বাভাবিক অবস্থানের বিপরীত দিকে থাকে। এটা সাধারণত কম ঘটে।

নেফ্রোটিক সিনড্রোম : শিশুদের কিডনি রোগের জন্য বেশি দায়ী নেফ্রোটিক সিনড্রোম। যেকোনো শিশুই এ সমস্যায় পড়তে পারে। এতে আক্রান্ত হলে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রচুর প্রোটিন বের হয়, অন্যদিকে রক্তে প্রোটিনের মাত্রা কমে যায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে মুখ, পেট ও পা ফুলে ওঠে।

ইউটিআই : ব্যাকটেরিয়াঘটিত মূত্রনালির সংক্রমণকে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন (ইউটিআই) বলে। শরীরে মূত্র তৈরি এবং দেহ থেকে তা নিঃসরণের জন্য যে অঙ্গগুলো কাজ করে, সেগুলোতে কোনো কারণে ইনফেকশন দেখা দিলে তাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলে। সময়মতো ইউটিআইয়ের চিকিৎসা না নিলে এটি কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে। মনে রাখা দরকার, ইউটিআই বেশি হয় মেয়েদের। এমনকি যারা প্রস্রাব আটকে রাখে, তাদেরও ইউটিআই বেশি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

হঠাৎ কিডনি বিকল : সাধারণত ডায়রিয়া, বমি, রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন কারণে অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর বা হঠাৎ কিডনি বিকল হয়। তাই শিশুর ডায়রিয়া বা বমি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করা দরকার। তবে ডায়রিয়া বা বমি হওয়ার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ভালো। এ জন্য শিশু ও তার মাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাসি-পোড়া খাবার না খেয়ে টাটকা খাবার খেতে হবে।শিশুর মলমূত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করাসহ নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

অবস্ট্রাক্টিভ ইউরোপ্যাথি : শিশুদের কিডনি রোগের অন্যতম কারণ এটি। এ রোগ হলে শিশুরা প্রস্রাব পুরোপুরি করতে পারে না।  ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব করে। এতে মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমা হয়ে থাকে। জমে থাকা প্রস্রাবের চাপে কিডনিতে ব্যাকফ্লো বা উল্টোচাপ হয়। একপর্যায়ে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ক্রমান্বয়ে কিডনিতে সংক্রমণ হয় এবং কিডনি বিকল রোগ হয়। তবে এই রোগ প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে সম্পূর্ণভাবে সারানো সম্ভব।

প্রস্রাব ব্লকেজ বা রিফ্ল্যাক্স : অনেক নবজাতক মূত্রনালি সংকীর্ণ বা অবরুদ্ধ অবস্থায় জন্মে। তাই এ অসুখ ধরা পড়লে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে।

বংশগত : বংশগত কারণেও অনেক সময় কিডনি রোগ হয়। অর্থাৎ পরিবারের কারো কিডনি রোগ থাকলে ওই পরিবারের শিশুরও কিডনি রোগ হতে পারে। এ জন্য নিকটাত্মীয়, যেমন মা-বাবার যদি কিডনি রোগ থাকে, তবে শিশুটির মধ্যে কোনো ধরনের লক্ষণ না থাকলেও মাঝেমধ্যে কিডনি বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত।

লক্ষণ

কিডনি রোগের লক্ষণ সাধারণত প্রকাশ পায় না। দেখা যায়, কিডনির ৫০ শতাংশ ভালো থাকলেও রোগী কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই দিনের পর দিন সুস্থ মানুষের মতোই জীবন যাপন করছে। তাই যখন লক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন দেখা যায় অর্ধেকের বেশি বা পুরো কিডনি বিকল হয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য লক্ষণ প্রকাশ পায়। যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা দরকার তা হলো—

♦   শিশুর মুখে ফোলা ফোলা ভাব থাকলে বা মুখ, হাত-পা ফুলে গেলে। ফোলা ভাব ক্রমেই সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে।

♦   ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব নির্গত হলে বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে বা কম হলে।

♦   তলপেটে চাকার মতো কিছু অনুভূত হলে। অনেক সময় পেটে ব্যথাও হতে পারে। তবে ছোট শিশুরা পেট ব্যথার কথা অনেক সময় বলতে পারে না।

♦   ঘন ঘন জ্বর হলে বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে বা প্রস্রাব করতে ব্যথা অনুভূত হলে।

কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে

♦   শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ, রং ইত্যাদ লক্ষ করতে হবে। কারণ শিশুরা বেশির ভাগ সময়ই তাদের অসুবিধার কথা ঠিকভাবে বলতে পারে না।

♦   শিশুদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করাবেন।

♦   বাসি, পচা বা খোলামেলা খাবার, ফাস্ট ফুড ও সফট ড্রিংকস পরিহার করতে হবে।

♦   প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি, সবজি, ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

♦   শিশু যেন মুটিয়ে না যায় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

♦   বহু ক্ষেত্রে শিশুরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যদি সে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

♦   বেশি পরিমাণ চিনি ও লবণজাতীয় খাবার শিশুকে দেবেন না।

♦   নিয়মিত শরীরচর্চা, খেলাধুলা, দৌড়ানো ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ঘরের ভেতর আবদ্ধ থাকা বা অলস জীবনযাপন শিশুদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

♦   পরিবেশের সঙ্গেও রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সম্পর্ক। বাতাসে সিসার পরিমাণ বেশি থাকলে, পানিতে আর্সেনিক থাকলে, ফুসফুসে মার্কারি বা পারদ বা সিগারেটের ধোঁয়া প্রবেশ করলে শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগসহ কিডনির আরো কিছু অসুখ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

নষ্ট কিডনী ভালো হয় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঳ ভিডিও সহ

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,কালীবাড়ী মোড়,চাঁদপুর

01711-943435 //01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
Face Book page : ( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *