শিশুর হাঁড় বক্রতা (রিকেটস রোগ)

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

শিশুর একটি মারাত্মক রোগ রিকেটস। ভিটামিন ডি-এর অভাবে এটি হয়। শিশুর জন্মের পর এবং গর্ভাবস্থায় তার হাড়ের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের প্রয়োজন হয়। ভিটামিন ডি-এর কাজ হলো দেহের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে সাহায্য করা।

কিন্তু কোনো কারণে ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের গঠনে ঠিকমতো অংশ নিতে পারে না। ফলে হাড় বাঁকা হয়ে যায়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে রিকেটস বলে। সাধারণত এক বছর বয়সে রিকেটস দেখা যায়। বড়দের ক্ষেত্রে এ রোগকে বলে অস্টিওম্যালাসিয়া।

কেন হয় ভিটামিন ডি-এর অভাব?
ভিটামিন ডি ত্বকের নিচে সুপ্ত অবস্থায় অবস্থান করে। ত্বকে সূর্যের আলো পড়লে তার অতি বেগুনি রশ্মির সাহায্যে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ভিটামিন ডি সক্রিয় রূপ লাভ করে। শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ থেকে ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকে এবং গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর দেহে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম জমা হয় তা শিশুকে এক বছর পর্যন্ত এ রোগ থেকে দূরে রাখে। কিন্তু এক বছর পর শিশু যদি সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হয় অর্থাৎ তার ত্বকে যদি সূর্যের আলো না লাগে তাহলে কার্যকর ভিটামিন ডি তৈরি হতে পারে না। ফলে অভাব ঘটে ভিটামিন ডি-এর।

এ ছাড়া যেসব শিশু দুধ ও পুষ্টিকর খাবার খায় না তাদের শরীরেও দেখা দেয় ভিটামিন ডি-এর অভাব।
কিছু কিছু অসুখ যেমন- দীর্ঘস্থায়ী কিডনির অসুখ, দীর্ঘস্থায়ী লিভারের অসুখ কিংবা দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের অসুখে ভিটামিন ডি শরীরে কম শোষণ হয়। ফলে দেখা দেয় ভিটামিন ডি-এর অভাব এবং পরিণতিতে হয় রিকেটস।

উপসর্গ
* শিশু অস্থির, খিটখিটে ও ফ্যাকাশে হয়
* মাংসপেশি থলথলে হয়
* শিশুর মাথা ঘামতে থাকে
* পেট ফুলে যায়
* শিশুর প্রায়ই শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটে
* শিশুর বৃদ্ধি দেরিতে হয়
* দেরিতে দাঁত ওঠে
* শিশু তার স্বাভাবিক বয়সে বসতে, দাঁড়াতে, হামাগুড়ি দিতে ও হাঁটতে পারে না।
* শিশুর মাথার তালুর নরম জায়গা স্বাভাবিকের চেয়ে বড় থাকে এবং শক্ত হয়ে উঠতে দেরি হয়
* বুকের পাঁজরের সামনে হাড় ও তরুণাস্থির সংযোগস্থল ফুলে যায়।
* হাতের হাড় রেডিয়াসের নিম্নপ্রান্ত মোটা হয়ে যায়
* শিশুর পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যায়
* শরীরের অন্যান্য হাড়েরও বিকৃতি ঘটে।

঳঳঳঳
রিকেটসের চিকিৎসা প্রধানত তিন ধরনের
এক. প্রতিরোধ ব্যবস্থা
রিকেটস যাতে না হয় তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন-
* শিশুকে সূর্যালোকে রাখতে হবে
* মুখে ভিটামিন ডি খাওয়াতে হবে
* শিশু অপরিণত হলে তার জন্ম নেয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে তাকে ভিটামিন ডি দিতে হবে
* গর্ভবতী মহিলা ও স্তন্যদানরত মাকে ভিটামিন ডি দিতে হবে
* শিশুর প্রথম বছরেই ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ দুধ খাওয়াতে হবে।
* শিশুকে ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।
* শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত অবশ্যই মায়ের দুধ দিতে হবে।

চিকিৎসা :
হোমিওপ্যাথিঃ-হোমিও কিছু নিদৃষ্ট ঔষধ আছে যা শিশুদেও জন্মের পর যখনই মা-বাবার ছোখে পড়ে যে শিশুটির পায়ের হাঁড় বাঁকা.তখন কোনো ভালো হোমিও ডাক্তারের পরার্মশ অনুযায়ী শিশুকে ঔষধ খাওয়ালেই বাঁকা হাঢ় সোজা হয়ে যাবে।
এ্যালোপ্যাথিঃ- বাঁকা হাঁটু ও লেগের চিকিসার শুরুতেই এর কারণ অনুসন্ধান করে, রোগীর বয়স অনুসারে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। প্রথম অবস্থায় স্পি¬ন্টিং, ব্রেচিং, হাঁটু সাপোর্ট এবং থেরাপিউটিক সু ব্যবহার করলে হাঁটু ও লেগের স্বাভাবিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে ফিরে আসবে। ১৮ বছর বয়সের আগে হাড়ের বৃদ্ধির স্থানে ক্লিপিং করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বৃদ্ধির স্থানের নিচে হাড় কেটে হাঁটু ও লেগকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হয়। প্র্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় কেটে হাঁটু ও লেগ সোজা করতে হবে এবং প্রয়োজনে লিগামেন্ট তৈরি করতে হবে।
প্রতিরোধ : পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সেবন করতে হবে। শিশু যাতে ডায়রিয়া ও মেলনিউট্রিশনে না ভোগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জন্মগত ত্রুটির চিকিৎসা দ্রুত করতে হবে এবং ফিজিক্যাল স্ট্রেসিং ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে জোড়াকে রক্ষা করা যায়। প্রথম অবস্থায় স্পি¬ন্টিং, ব্রেচিং, হাঁটু সাপোর্ট এবং থেরাপিউটিক সু ব্যবহার করলে হাঁটু ও ল্যাগের স্বাভাবিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে ফিরে আসবে।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 // 01670908547
ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *