শীতকালীন হাঁপানি থেকে মুক্ত থাকুন

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

images
আমাদের শ্বাসতন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শরীরে জীবনীশক্তি আনে বাতাস। ফুসফুস দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড শরীর থেকে বাইরে এবং বাতাসের অক্সিজেন রক্তে প্রবাহিত করে। শ্বাসতন্ত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হলে এ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় ফুসফুস ও শ্বাসনালি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তাই এই অঙ্গের অতিসংবেদনশীলতা আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটায়। হাঁপানি বা অ্যাজমা শ্বাসনালির প্রদাহজনিত অতিসংবেদনশীলতার কারণে হয়ে থাকে। এ রোগ হলে শ্বাসনালি খুব বেশি স্পর্শকাতর থাকে, ফলে সামান্য কারণেই এতে সংকোচন দেখা দেয়। সংকুচিত শ্বাসনালির পথ সংকীর্ণ হয়ে গেলে শরীরে স্বাভাবিক বাতাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফলে কখনো কখনো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহও কমে যেতে পারে। সংকীর্ণ শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় ঘন ঘন কাশি ও দম বন্ধ হয়ে যাওয়া বা দম ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অনুভূত হয়। প্রাথমিক অবস্থাতেই এ শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা না করা হলে এ রোগ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হতে পারে।
কেন হাঁপানি হয়Brankiekatisisa
হাঁপানির আসল কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে শরীরের রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা ও পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে শ্বাসনালির বিভিন্ন রকমের সংবেদনশীলতা এর জন্য দায়ী হতে পারে। মূলত হাঁপানি হয়ে থাকে কিছু উত্তেজক উপাদান বা ট্রিগার ফ্যাক্টরের কারণে।
এসব উপাদান হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালির ভেতর লুকিয়ে থাকা রোগকে প্রকাশ করে।উত্তেজকের ওপর নির্ভর করে সাধারণত হাঁপানিকে তুলে ধরা যেতে পারে এভাবে-অ্যালার্জির কারণে হাঁপানি, ভাইরাস সংক্রমণের কারণে, ব্যায়ামের কারণে, পেশাগত কারণে, আবহাওয়ার কারণে, ওষুধের কারণে। কখনো কখনো মানসিক চাপ থেকেও হাঁপানি হতে পারে। তবে এর মধ্যে অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
অ্যালার্জি থেকে হাঁপানি
আমাদের শরীরের ধর্ম হচ্ছে, কোনো ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করলে শরীর তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সেই উপাদানকে ধ্বংস করে ফেলে। কখনো কখনো জন্মগতভাবেই অনেকের মধ্যে এ অতিরিক্ত প্রতিরোধব্যবস্থা থাকে। ফলে যে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয়, তা-ই অ্যালার্জি। শরীরে যা অ্যালাজি তৈরি করে, তাকে বলে অ্যালার্জেন। সাধারণ অ্যালার্জেন বা যেসব জিনিস সাধারণত অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে শরীরে হাঁপানির উপসর্গ তৈরি করে, এর মধ্যে অন্যতম হলো তাপমাত্রার পরিবর্তন। এ অ্যালার্জেন প্রবেশ করলে শ্বাসনালিতে তিন ধরনের পরিবর্তন ঘটে-
–সরু শ্বাসনালির চারপাশের মাংস সংকুচিত হয় এবং শ্বাসনালিকে আরও সরু করে ফেলে, ফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
–মিউকাসজাতীয় আঠালো পানি নিঃসৃত হয়, যা শ্বাসনালির পথকে বন্ধ করে দেয় এবং
–শ্বাসনালির মধ্যে প্রদাহ তৈরি হয়, ফলে শ্বাসতন্ত্রের আবরণী ফুলে ওঠে। ফলে শ্বাসনালির পথ আরও সংকুচিত হয়ে যায়।
অ্যালার্জেনগুলো কীimage_1111_312937
ঘরবাড়ির ধুলায় থাকা ‘মাইট’ নামের এক ধরনের অতিক্ষুদ্র কীট, পাখির পালক, জীবজন্তুর পশম, ছত্রাকের স্পোর, রান্নার ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, কিছু খাদ্য (যেমন পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি) কিছু ওষুধ (সালফারজাতীয় ওষুধ), শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থ। একই জিনিস সব হাঁপানি রোগীর জন্য অ্যালার্জেন নাও হতে পারে।
যেসব উপসর্গ দেখা যায়
অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার আগে সাধারণত চোখ লাল হয়, নাক থেকে পানি পড়ে, নাক চুলকায়, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয় এবং কখনো কখনো গায়ে লাল চাকা ওঠে।
শীতের সময় কেন বেশি হয়
শীতের সময় হাঁপানির প্রকোপটা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে। প্রকৃতিতে ঠান্ডা-গরমের যে পরিবর্তনকাল, সে সময়টায় হাঁপানির উপসর্গগুলো হঠাৎ করেই দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া ঋতু পরিবর্তনের সময়, বিশেষ করে শরৎকাল, বসন্তকাল, শীতকাল-এ সময়গুলোতে বাতাসে অসংখ্য ফুলের বা ঘাসের পরাগরেণু ভেসে বেড়ায়, যা হাঁপানির একটা উত্তেজক উপাদান হিসেবে কাজ করে। হাঁপানি রোগীদের শ্বাসনালি এমনিতেই খুব সংবেদনশীল থাকে। তার ওপর শীতের ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস যখন ওই শ্বাসনালিতে ঢোকে, তখন তা সংকুচিত হয় এবং হাঁপানির উপসর্গ আরও বাড়িয়ে দেয়।
শীতকালে আমরা সাধারণ সর্দি-জ্বর বা ফ্লুতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকি, যা হাঁপানি হওয়ার একটি অন্যতম নিয়ামক। শীতকালে অনেক সময় ঘরে বেশি সময় ধরে থাকা হয়। তখন ঘরের দরজা, জানালা বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে।
এতে ঘরে মুক্ত বাতাসের প্রবাহ ব্যাহত হয়। ফলে ঘরের ধুলাবালি, ধুলায় থাকা মাইট, পোষা জীবজন্তুর রোম বা পাখির পালক ইত্যাদি বেড়ে যায়। এগুলো হাঁপানির উপসর্গকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া ঘরে কেউ ধূমপান করলেও হাঁপানি হতে পারে।
ভালো থাকুন শীতকালেওimage_1083_305463
–শীতের সময় হাঁপানি থেকে মুক্ত থাকার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। ঠান্ডা বাতাস যেন সরাসরি শ্বাসনালিতে প্রবেশ না করে, সে জন্য মাস্ক বা মুখে রুমাল ব্যবহার করা যেতে পারে।
–নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা উভয়ই বেড়ে যায় এবং এতে শ্বাসনালি স্বস্তি পায়।
–সাধারণ ঠান্ডা বা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যতটুকু সম্ভব চোখে, নাকে বা মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন।
–নাক পরিষ্কার করার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের পর তা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অভ্যাস করুন। নাক পরিষ্কার করার পর অবশ্যই হাত ভালো করে ধুতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই মুখে কাপড় ব্যবহার করুন। যতটুকু সম্ভব ঘরের বাতাসের গুণগত মান ঠিক রাখার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে ঘরের মধ্যে ধূমপান করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
–নিজে নিজে ঘর ঝাড়ামোছা, কাপড় পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকুন। ঘর ঝাড়ামোছা বা পরিষ্কার করার সময় ঘরের বাইরে থাকতে হবে।
–বাসায় কার্পেট ব্যবহার করবেন না। বিশেষ করে শোয়ার ঘরে কোনো অবস্থাতেই কার্পেট রাখবেন না।
–বিছানায় রোমযুক্ত চাদর, কাঁথা, লেপ বা কম্বল ও বালিশ ব্যবহার করবেন না। বিছানা অবশ্যই চাদর দিয়ে ঢেকে রাখবেন, যাতে ধুলাবালি না পড়ে।
–চাদর, বালিশের কভার অন্তত সপ্তাহে একবার ধুতে হবে এবং কমপক্ষে এক ঘণ্টা রোদে রাখতে হবে, যাতে মাইট মরে যায়।
–পোষা পাখির খাঁচা, লোমযুক্ত প্রাণী, যেমন-বিড়াল, কুকুর, হাঁস-মুরগি বাড়িতে রাখবেন না।
–রান্না করার সময় অবশ্যই রান্নাঘরের জানালা খুলে রাখবেন। রান্নাঘরের ধোঁয়া যাতে শোয়ার ঘরে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
–কার কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি হয় সে সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে এবং তা থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
–বছরের অন্য সময়ের মতো শীতকালেও হাঁপানি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ আছে কি না তা জানা প্রয়োজন। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত ওষুধের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নিন। নিয়মিত হাঁপানির রোগ বাধাদানকারী ওষুধ ব্যবহার করুন। ভালো থাকুন শীতকালেও।

======================================

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 //01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
Face Book page : ( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *