সব গর্ভবতীর জন্য রোজা নয়

রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ হলেও যাঁরা গর্ভাবস্থায় আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা ও পরামর্শের দরকার। এ ছাড়া গর্ভকালীন ও মাতৃদুগ্ধ পান করানো অবস্থায় মায়ের রোজা না রাখার বিষয়ে ধর্মীয় নির্দেশনা রয়েছে, যা পরবর্তী সময় কাজা হিসেবে পালন করা যায়।

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয় বলে একজন গর্ভবতী মাকে দিনে ছয়বার বা তারও বেশি খেতে বলা হয়। এখন গরমকাল। সাধারণত শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় (প্রায় ১৪ ঘণ্টা) পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কষ্টকর ব্যাপার। তা ছাড়া গরমে গর্ভবতী মা প্রচুর ঘেমে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন। রোজা রাখার ফলে অনাগত শিশুটি অপুষ্টি ও কম ওজন নিয়ে জন্মানো, এমনকি মা মূত্রনালির ইনফেকশনে ভুগতে পারেন।

গর্ভবতী মা কখন রোজা রাখবেন?

গর্ভকালীন অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই রোজা রাখা নির্ভর করে। গর্ভকালীন সময়কে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি—

প্রথম তিন মাস : গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই শ্রেয়। কেননা ওই সময় মায়ের গর্ভে অনাগত শিশুর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পানি ইত্যাদি সরবরাহ জরুরি। এ সময় গর্ভবতী মায়ের শরীরে শিশুর জন্য দরকারি কোনো কিছুর অভাব ঘটলে পরবর্তী জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে যেহেতু বমি বমি ভাব হয়, আবার অনেকের বমিও হয়, মাথা ঘুরায়, অনেকে খেতে পারেন না, ওজন কমে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই এই তিন মাস রোজা না রাখাই উচিত।

মধ্যবর্তী তিন মাস : গর্ভকালীন মধ্যবর্তী তিন মাস একটু রিলাক্স থাকে। কারণ মাঝের তিন মাসে গর্ভবতী মায়েরা একটু ভালো বোধ করেন, আর এই সময় বাচ্চাটির গঠনও তৈরি হয়ে যায়। এ সময় গর্ভবতী মা ইচ্ছা করলে রোজা রাখতে পারেন, যদি তাঁর অন্য কোনো সমস্যা না থাকে। তবে গরমের চেয়ে শীতকাল হলে বেশি ভালো।

শেষ তিন মাস : শেষের তিন মাস গর্ভবতী মাকে সতর্ক হয়ে চলতে হয়। এ সময় বাচ্চা দ্রুত বাড়ে। তাই দুজনের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে খাওয়াদাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিতে হয়।

রোজা না রাখা উচিত যাঁদের   

ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ : যাঁরা হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি বা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ করা অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত। অনেক চিকিৎসার পরও যাঁদের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেসব হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি মায়েদের রোজা না রাখাই ভালো। রাখতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

ডায়াবেটিস : যাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের রোজা না রাখা ভালো।

উচ্চ রক্তচাপ : গর্ভাবস্থায় অনেকের প্রেশার বা রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ সময় নিয়মমতো কিছু ওষুধ খেতে হয়। রোজা রাখলে বরং তার ব্যত্যয় ঘটে।

সাহরির সময় খাবার

গর্ভাবস্থায় যাঁরা রোজা রাখতে চান, সাহরিতে তাঁরা একজন স্বাভাবিক মানুষের খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাবার খাবেন। তবে ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। এখন সময়টা গরমের বিধায় পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হবে। সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তা ছাড়া সাহরির সময় যেসব খাবারে গ্যাস হয় বা বুক জ্বালা করে, ওই খাবারগুলো এরিয়ে চলতে হবে। মেন্যুতে আপেল, কলা, খেজুর এসব রাখুন।

ইফতারের সময় খাবার

কয়েকটি খেজুর, ফলের জুস খেয়ে ইফতার শুরু করতে পারেন। এতে গর্ভবতী মায়ের সুগার লেভেল ঠিক থাকবে। ইফতারির মেন্যুতে লাবাং বা দুধও রাখতে পারেন। দুধ গর্ভবতীদের অ্যামোনিয়া হওয়ার প্রবণতা কমায়। এ ছাড়া সবজি, স্যুপ, সালাদের পাশাপাশি মাছ, মাংস, কলাইয়ের ডালের মতো প্রোটিনযুক্ত খাবার, বাদামি চালের ভাত এবং গমের রুটিও খেতে পারেন।

সতর্কতা ও পরামর্শ

►    গর্ভাবস্থায় ভারি, গুরুপাক, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত ও বাসি খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।

►    ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। সাহরি না খেয়ে রোজা রাখার চেষ্টা করবেন না। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে।

►    আঁশযুক্ত খাবার, প্রোটিন ও ফ্যাটসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করুন। এসব উপাদান ধীরগতিতে পরিপাক হয় বলে ক্ষুধা কম লাগবে।

►    খেতে পারেন পরিমিত চিনিযুক্ত ও জাউভাত জাতীয় খাবার।

►    রোজার সময় বেশি বিশ্রাম নিন। দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন।

►    বেশি সময় রোদে বা গরমে অবস্থান করবেন না। বেশির ভাগ সময় বাতাস বা খোলামেলা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।

►    রাতে খাবারের পর বিশ্রাম নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *