বিয়ের পর নতুন সব সম্পর্কের মাঝে জায়ের সঙ্গে সম্পর্কটি হতে পারে মধুর অথবা তিক্ত। এ নিয়ে লিখেছেন ফারজানা আক্তার নীলা
শ্বশুরবাড়িতে কামরুন নাহার বড় বউ। তারা চার জা একসঙ্গে হাসি-আনন্দে দিন কাটান। কামরুন নাহার বলেন, আমি যখন শ্বশুরবাড়িতে আসি তখন একা ছিলাম। তবে আমার এক ননদ ছিল। পরে তার বিয়ে হয়ে গেলে নিজেকে একা মনে হতো। সময় কাটত না। গল্প করার মতো কেউ ছিল না। মন চাইলেও কাউকে কিছু বলতে পারতাম না। এখন আমরা চার জা। বেশ ভালো সময় কাটে আমাদের। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর রাত পর্যন্ত হাসি-আনন্দে কাটে সময়। মাঝেমধ্যে দুঃখ আসে, আবার চলেও যায়। ফিরে আসে খুশির আমেজ।
এভাবেই বলছিলেন কামরুন নাহার। বিয়ে মানে শুধু দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক সীমাবদ্ধ নয়, শুধু দাম্পত্য জীবন নয়। এক্ষেত্রে থাকে পরিবারের মধ্যে অন্য সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। নিজের পরিবার ছেড়ে আসার কষ্ট থাকে তখন। মনে হয়, নতুন পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বললে হয়তো ভালো লাগবে। হঠাৎ পাল্টে যায় তার বহু দিনের অভ্যস্ত জীবন-যাপন পদ্ধতি।
নতুন সংসারে শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ-দেবর যেমন থাকে; তেমনি ভাবি, মানে আমাদের সমাজে প্রচলন আছে জায়ে জায়ে খুনসুটি। কিন্তু জায়ে জায়ে হতে পারে মধুর সম্পর্ক। বিয়ে-পরবর্তী লাজুক সময়টাতে আপনি আপনার জাকে বন্ধু করে নিতে পারেন। অনেকে মনে করেন, জায়ে জায়ে কখনও মিল হয় না।
জা আপনার বড় হতে পারে আবার ছোটও হতে পারে। যা-ই হোক না কেন, দু’জন দু’জনকে বুঝে নিতে হবে। আপনি কী বলতে চান, আর আপনার জা কী বলতে চায় বা বোঝাতে চায় তা আপনাকে বুঝতে হবে। জাকে সময় দিন। তাকে নানা কাজে সাহায্য করুন। তার পরিবারের কথা শুনুন, আপনার পরিবারের কথা তাকে জানান। এতে আপনার এবং জায়ের মধ্যে নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে। একে অন্যের সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি হতে পারে।
জাকে কাজে সাহায্য করুন। দু’জনে একসঙ্গে কাজ করতে করতে গল্পও করতে পারেন। জায়ের শরীর-মন ভালো আছে কি-না জানার চেষ্টা করুন। অনেক সময় আপনার জায়ের মানসিক অবস্থা ভালো নাও থাকতে পারে। তা আপনি জানতে পারলেন না। আপনি আপনার কাজ করে যাচ্ছেন। জায়ের সঙ্গে কথাও বলছেন, কিন্তু তার মন খারাপ_ আপনি বুঝতে পারছেন না। জা আপনাকে মুখ ফুটে কিছু বলছেন না। সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তার অসুবিধা কোথায় এবং কেন মন খারাপ তা আপনার জায়ের সঙ্গে শেয়ার করুন। দেখবেন আপনার মনও হালকা হবে। তিনি আপনাকে যে কোনোভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন।
পরিবারে কোনো সমস্যা হলে তা পরামর্শ করে মেটানোর চেষ্টা করুন। জা বড় বা ছোট হোক, তাকে শ্রদ্ধা ও স্নেহ করুন। একে অন্যের কাছ থেকে দূরে না এসে কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। অবসর সময়ে দু’জনে বসে গল্প করতে পারেন নিজেদের ছোটবেলা বা পুরনো দিনের কোনো মজার স্মৃতি নিয়ে। গল্পে গল্পে মুখর হবে কিছুটা সময়।
ছুটির দিনে বা কাজের ফাঁকে দু’জনে যেতে পারেন মার্কেটে। বাইরে খাবার খেতে বা পরিবারের জন্য কিছু কিনতে পারেন। এতে সম্পর্ক মধুর হবে।
একে অন্যের সুবিধা-অসুবিধা বোঝার চেষ্টা করুন। পরিবারে থাকতে হলে জায়ে জায়ে থাকবে সুসম্পর্ক। একে অপরের দুঃখ-সুখে এগিয়ে আসা উচিত। কোনো ভুল-ত্রুটি করলে তা নিজেরাই সমাধান করুন। জায়ে জায়ে গড়ে তুলুন মধুর সম্পর্ক।
ছবি : ফারহান ফয়সাল