প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জাদুঘরে ঠাঁই নেবে স্বাভাবিক প্রসব – এটি বৈজ্ঞানিক কোনো কল্পকাহিনীর চরিত্রের কথা নয়। দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসবের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এ উক্তি এ সময়েরই এক চিকিৎসকের। সরকারি একটি হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসক এ কথার পেছনে রয়েছে একটি জরিপের ফলাফল, যাতে দেখা যাচ্ছে- গত এক দশকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার হার পাঁচ গুণ হয়েছে। আর অস্ত্রোপচারের (সিজারিয়ান) মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদের ১৯ শতাংশের এভাবে মা হওয়ার প্রয়োজনই ছিলো না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য অনেকেই যেমন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্যথামুক্তভাবে সন্তান জন্ম দিতে আগ্রহী, তেমনি চিকিৎসকরাও আর্থিক লাভের দিকটি দেখে এ কাজ করে থাকেন। সিজারিয়ান ডেলিভারি ধাত্রীবিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। সম্রাট জুলিয়াস সিজার নাকি এভাবে জন্মেছিলেন। ধারণাটি সঠিক নয়। সম্ভবত লাতিন শব্দ থেকে এ নামের উৎপত্তি। রোমান সাম্রাজ্যে কোনো গর্ভবতী মারা গেলে তাঁর পেট কেটে মৃত বাচ্চাটি বের করে আনা হতো এবং আলাদা দাফন করা হতো। দলিল ঘেঁটে দেখা যায়, প্রায় ৪০০ বছর আগে সর্বপ্রথম জীবিত একজন মায়ের শরীরে এ ধরনের অপারেশন করা হয়।
নানান বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সন্তান জন্মদানের এ কৃত্রিম পদ্ধতিটি আজ অনেক আধুনিক ও নিরাপদ। এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বের লাখ লাখ মা ও শিশুর জীবন রা হয়েছে।
সিজারিয়ান ডেলিভারি করার নির্দেশনাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এক. যখন নরমাল ডেলিভারি সম্ভবই নয় (গর্ভফুল দিয়ে জরায়ুমুখ ঢেকে থাকা, মায়ের কোমর ও বাচ্চার মাথার আকারের বড় ধরনের অসামঞ্জস্য, তলপেটের বড় টিউমার ইত্যাদি)।
দুই. নরমাল ডেলিভারি সম্ভব, কিন্তু মা-বাচ্চার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বিতীয়টির নির্দেশনা তালিকা বেশ দীর্ঘ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
* একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যথেষ্ট চেষ্টার পরও যদি স্বাভাবিক প্রসব না হয়।
* প্রসবব্যথা চলাকালে যদি মা ও বাচ্চার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়।
* বাচ্চা যদি উল্টোভাবে অথবা আড়াআড়িভাবে গর্ভে অবস্থান করে।
* একলাম্পশিয়া বা খিঁচুনি।
* মায়ের হৃদেরাগ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগ।
* যদি পূর্ববর্তী দুই বা ততোধিক সিজারিয়ান ডেলিভারির ইতিহাস থাকে, ইত্যাদি।
পুরানে আছে, খ্রিস্টের জন্মেরও বহু আগে প্রাচীন রোমের অধীশ্বর জুলিয়াস সিজারকে মা আউরেলিয়ার পেট কেটে বের করা হয়েছিলো। আর সে জন্যই স্বাভাবিক প্রসবের ব্যতিক্রম এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘সিজারিয়ান’, সেই সঙ্গে এ পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের বলা হয় ‘সিজারিয়ান বেবি’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপযুক্ত নির্দেশনা এবং পর্যবেণের অভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান ক্রমেই বাড়ছে। এ দিকে নজর দিতে সরকারের প্রতি পরামর্শ রেখেছেন তারা।
বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু জরিপ-২০১০ এ দেখা যায়, সন্তান প্রসবের েেত্র ২০০১ সালে যেখানে অস্ত্রোপচারের হার ছিলো ২ দশমিক ৬ শতাংশ, তা ২০১০ এ এসে ১২ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর এসব অস্ত্রোপচারের দুই-তৃতীয়াংশই হয়েছে বেসরকারি কিনিক কিংবা হাসপাতালে, অনেক েেত্রই যার কোনো প্রয়োজনই ছিলো না।
জনৈক অভিজ্ঞ ডাক্তার বলেন “অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করে অনেক সন্তান প্রসব করানো হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।”
তবে তিনি এ প্রবণতা কমানোর কোনো সঠিক রাস্তা দেখাতে পারেননি। “সব প্রসূতি মায়ের েেত্র এটি পর্যবেণ করা কঠিন। কারণ কেবল চিকিৎসকরাই তার রোগীর েেত্র সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন”, বলেন ।
এদিকে প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যা বিশারদরা বলছেন, প্রয়োজন থেকেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। আর এ হার ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যা সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক নাসিমা বেগম বলেন, “বাংলাদেশের গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং অল্প বয়সে তারা গর্ভধারণ করে। এ কারণে গ্রামাঞ্চলে শতভাগ েেত্র অস্ত্রোপচার হতে পারে।”
তবে এ বিষয়ে জরিপ চালানো আইসিডিডিআরবি,র গবেষক শামস উল আরেফিন বললেন, “অনেক সময় যে সব নারীর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, তারা তা পাচ্ছে না; আবার যাদের প্রয়োজন নেই, তারা অপ্রয়োজনেই তা করছেন।”
সারাদেশে ১ লাখ ৭৬ হাজার নারীর সঙ্গে কথা বলে দেখেছেন, গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলেও ১৯ শতাংশ নারী অস্ত্রোপচার করিয়েছেন।
আর্থিক সচ্ছলতার ব্যথামুক্ত প্রসবের এ পদ্ধতি তারা বেছে নিয়েছেন বলে মনে করছে জরিপকারী দল।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো প্রথম সন্তানের েেত্রই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া। যারা প্রমবার অস্ত্রোপচার করান, পরবর্তী কালে তারা আর স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টাই করেন না।
জরিপের পর্যবেণ, কখনো কখনো নারীরা প্রসবের ব্যথা এড়াতে চান, আবার কখনো কখনো চিকিৎসকরাই লাভ বিবেচনা করে অস্ত্রোপচারে উৎসাহ জোগান।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রথম সন্তান জন্মদানকারী রেবেকা বেগম তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “মাঝরাতে প্রসব বেদনা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পাশের একটি কিনিকে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার জানায়, পেটের বাচ্চাটি নড়ছে না। বাচ্চা বাঁচাতে হলে দ্রুত সিজার করতে হবে।”
ওই কিনিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন তাকে ২ হাজার টাকা এবং যিনি অচেতন করেন সেই চিকিৎসককে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
এ চিত্র প্রায় সারাদেশের, তাই কিনিকের নামটি প্রকাশ করা হলো না। কিনিকের ব্যবস্থাপক জানান, তার ওখানে স্বাভাবিক কোনো প্রসবের ঘটনাই ঘটেনি।
নারী স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘নারীপ’র জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা সায়মা আফরিন বলেন, স্বাভাবিক প্রসবে সময় বেশি লাগে বলে চিকিৎসকরা সময় বাঁচাতে অস্ত্রোপচারকেই উৎসাহ জোগান। আফরিন তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “গরিব মানুষের জন্য এসব কিনিক বা চিকিৎসকের কোনো মায়া-দয়াই নেই। এ অস্ত্রোপচারের জন্যই অনেককে সুদখোরদের খপ্পরে পড়ে ঋণ নিতে দেখছি।”
অস্ত্রোপচারকে বাণিজ্য হিসেবেই এখন দেখা হচ্ছে বলে আইসিডিডিআর,বির এ গবেষক মনে করেন। বিষয়টি কিছুটা মেনে নিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও। ছিফায়েত বলেন, “শুধু আইন এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। যিনি বা যারা এ কাজটি করাচ্ছেন তাদের নৈতিকত মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজটি করতে হবে।
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ অবশ্য নাকচ করলেন প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যা সোসাইটির মহাসচিব। নাসিমা বলেন, “কেবল এক অথবা দুই শতাংশ চিকিৎসক এ কাজে জড়িত থাকতে পারে। বাকি সব গুজব।”
“বাড়িতে হাতুড়ে ধাত্রী দিয়ে প্রসবের সময় জটিলতা দেখা দেয়, তখন অস্ত্রোপচার ছাড়া আর উপায় থাকে না”, বলেন তিনি। সেইসঙ্গে জানান, দেশে ৭৫ শতাংশ প্রসব বাড়িতেই হয়।
বাংলাদেশের প্রোপটে যদি অস্ত্রোপচারের হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশিও হয়, তাও কোনো সমস্যা নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক নাসিমা।
তবে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তরুণ চিকিৎসক জানিবুল বলেন, “অস্ত্রোপচারের ফল সুদূর প্রসারী। যে নারীর অস্ত্রোপচার হয়, তার সুস্থ হতে এক মাসের মতো সময় লাগে। এতে নবজাতকের পরিচর্যা তিনি করতে পারেন না।”
“যদি এ ধারা চলতে থাকে, তাহলে একদিন স্বাভাবিক প্রসবের ঘটনা জাদুঘরে স্থান পাবে”, বলেন তিনি।
সন্তান মায়ের গর্ভে আসার পর যদি গর্ভবতি মা নিয়মিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ সেবন করেন,তাহলে মা ও সন্তানের কোনো প্রকার জটিলতা ছাড়াই নরমাল ডেলিভারী অবশ্যই হবে।
রোগীকে জোর করে সিজার অপারেশান করলেন ডাক্তার
=====================================================
প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর
01711-943435 ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন।
ফেসবুক পেইজে লাইক দিন https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall