হাত-পায়ের গিরা ব্যথা ও ফোলা রোগ

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি বাত রোগ, যা শরীরের গিরা ও অন্যান্য অঙ্গকে আক্রান্ত করে। এ রোগ লঘুমাত্রা থেকে তীব্রমাত্রা পর্যন্ত হতে পারে। লঘুমাত্রায় সামান্য কষ্ট হলেও তীব্রমাত্রায় অঙ্গবৈকল্য বা বিকলাঙ্গতা পর্যন্ত গড়াতে পারে। আধুনিক ও যথার্থ বা উপযুক্ত চিকিৎসায় ব্যথার উপশমসহ শারীরিক বিকলাঙ্গতা ঠেকানো সম্ভব।

সচরাচর ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের লোকদের বেশি গিরা ব্যথা বা বাত হয়। বৃদ্ধ বয়সেও এর প্রকোপ তেমন কম নয়। বাত শিশুদেরও আক্রান্ত করে। এটি পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে তিনগুণ বেশি এবং ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

কারণ

সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। তবে জন্মগতভাবে কেউ এ রোগ হওয়ার কারণ বহন করলে এবং শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রাকৃতিক কোনো কারণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে উসকে দিলেই কেবল এ রোগের সূত্রপাত হতে পারে।

বাতে শরীরে কী হয়

শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করা শুরু করে তখনই এ রোগের সূত্রপাত হয়। এ রোগে ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের শরীরের অঙ্গ তথা গিরা বা জয়েন্ট এবং গিরার আশপাশের কোষ বা কলাকে আক্রমণ করে। আক্রমণের ফলে গিরা বা জয়েন্টের পাতলা আবরণী বা সাইনোভিয়াল মেমব্রেন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রদাহ জয়েন্টে অতিরিক্ত রস নিঃসরণ করে, ফলে জয়েন্ট ফুলে যায়। ফুলা ও প্রদাহ দুই-ই ব্যথার জন্য দায়ী এবং চলমান প্রদাহ সময়ে অস্থি বা কার্টিলেজ ধ্বংস করে, যা গিরা বা জয়েন্ট বিকলাঙ্গ করতে পারে।

উপসর্গ

* হাত-পায়ের গিরা, হাঁটু, কাঁধ, কনুই ও হিপ জয়েন্টসহ আশপাশে ব্যথা হওয়া। শরীরের ডান ও বাম পাশ সমভাবে আক্রান্ত হয়।

* সকালবেলা বা বিশ্রামের পর গিরা বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে থাকে।

* গিরা বা জয়েন্ট ফুলে যাওয়া। বিশেষভাবে হাত-পায়ের গিরা ও হাঁটু।

* সব সময় ক্লান্তি বা অবসাদ ভাব।

* পেশিতে বল কম পাওয়া এবং গিরা শক্ত হয়ে ধরে থাকায় শারীরিক কার্যক্ষমতার অবনতি।

* ব্যথার জন্য রাতে ঘুমাতে না পারা।

শুধু গিরা বা জয়েন্টই কি আক্রান্ত করে

জয়েন্ট ছাড়াও ত্বক, ফুসফুস, হার্ট, রক্ত, স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, পরিপাকতন্ত্রসহ অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও আক্রান্ত করে। তীব্রমাত্রায় ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে এ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

রোগ নির্ণয়ের উপায়

প্রথমত দরকার যথোপযুক্ত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস সহজ নয়। তাই রক্ত পরীক্ষা করতে হতে পারে। এ রোগে রক্তের ইএসআর এবং সিআরপি বেশি হয়। প্রায় ৮০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে রিউমাটয়েড ফ্যাক্টর পজিটিভ বা বেশি পাওয়া যায়। এক্স-রে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য আবশ্যিক নয়, তবে এটা যেমন রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে তেমনি কার্টিলেজ বা অস্থিসন্ধির ক্ষতি হয়েছে কি না বা গিরা বিকল হচ্ছে কি না তা নির্ণয় করতেও সাহায্য করে।

চিকিৎসা

এ রোগ সম্পর্কে শিক্ষা, সঠিক ওষুধ প্রয়োগ, ব্যায়াম, পরিমিত বিশ্রাম ও কীভাবে জয়েন্ট বা গিরাকে রক্ষা করা যায় তার শিক্ষাই কেবল দিতে পারে যথার্থ চিকিৎসা ব্যবস্থা।

শিক্ষার মূল বিষয়

* ব্যথার উপশম কিভাবে করা যায়, তথা গরম ও ঠান্ডা প্যাকের ব্যবহার।

* অশান্তি উপশম, বিবেচনা বোধ ও দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়ার শিক্ষা।

* নিজেকে নিরুদ্বেগ করা বা বিনোদন শিক্ষাসহ গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার শিক্ষা ও বিশেষ ব্যায়াম সম্পর্কে জানা।

বিশ্রাম ও ব্যায়াম

ওষুধের পর বিশ্রাম ও ব্যায়াম জরুরি। বিশ্রাম ফোলা, ব্যথা ও অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। কাজের মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হবে। কতটুকু বিশ্রাম প্রয়োজন তা রোগের তীব্রতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কেননা প্রয়োজনাতিরিক্ত বিশ্রাম ভালোর চেয়ে মন্দ করতে পারে। প্রতিদিন নিয়মিত শেখানো বিশেষ ব্যায়াম করা প্রয়োজন, যা পেশি শক্তকরণসহ অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গরম পানিতে ব্যায়াম বিশেষ উপকারী।

গিরা বা জয়েন্ট রক্ষার উপায়

অসুস্থ গিরার ওপর অযাচিত চাপ গিরার আরও ক্ষতি করে। তাই গিরার ওপর চাপ বা ভর কমাতে হবে। বিশ্রাম বা হাঁটার সময় লাঠি বা ক্র্যাচ ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে গিরা রক্ষার জন্য বিভিন্ন সহায়ক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।

খাদ্য

সুষম খাদ্য খাওয়া জরুরি। কেননা তা শরীর রক্ষা ও অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। যদিও কদাচিৎ কিছু খাদ্যে কোনো কোনো বাত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে, কিন্তু অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই বাতের ওপর খাদ্যের কোনো বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি।

প্রভাষক ডা. এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435
 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ইমেইল- dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইটwww.zamanhomeo.com