হায়েজ বা ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাদের জন্য যে সকল কাজ করা হারাম:

1016751_564988576873984_1795214039_n
আবদুল্লাহ আল কাফী :
আব্দুল্লাহিল হাদী (ক) ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া হারাম: এ কথার দলীল, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: (يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ ، فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ ،إنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَ يُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ ) “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েজ সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা বাক্বারা- ২২২) এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হল, ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত স্ত্রী মিলন সম্পূর্ণ হারাম বা অবৈধ। অবশ্য এ অবস্থায় যৌনাঙ্গে সঙ্গম ব্যতীত স্ত্রীর সাথে অন্য কিছু করা হারাম নয়। হাদীসে এরশাদ হচ্ছে: (اصْنَعْ كُلَّ شَىْءٍ إلاَّ النِّكاَحِ) “যৌন সঙ্গম ছাড়া তুমি সব কিছু করতে পার।” (সহীহ্ মুসলিম) ঋতুস্রাব অবস্থায় যদি কেহ যৌনমিলনে লিপ্ত হয় তবে তার উপর এই পাপের কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। কাফফারার পরিমাণ হল এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার। এ ক্ষেত্রে দলীল হল- আবু দাউদ বর্ণিত একটি হাদীস। কোন কোন আলেম হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল, হাদীসটির বর্ণনা কারীগণ সকলেই নির্ভর যোগ্য। সুতরাং দলীল হিসেবে উহা গ্রহণযোগ্য। এই কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হল: ১) ব্যক্তির জ্ঞান থাকা। (যে হায়য অবস্থায় ইহা হারাম) ২) স্মরণ থাকা। (ভুল ক্রমে নয়) এবং ৩) ইচ্ছাকৃত ভাবে সে কাজে লিপ্ত হওয়া। (কারো জবরদস্তী করার কারণে নয়।) স্ত্রী যদি উক্ত কাজে স্বামীর অনুগত হয় তবে তারও উপর উক্ত কাফফারা ওয়াজিব হবে। (খ) ঋতুবতী মহিলার জন্য নামায-রোযা বৈধ নয়। আদায় করলেও উহা বিশুদ্ধ হবে না: এ কথার দলীল রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী: …أليس إذا حاضت لم تصل ولم تصم؟…الحديث “মহিলা কি এমন নয় যে, ঋতুবতী হলে নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না? ” (বুখারী ও মুসলিম) পবিত্রতা অর্জনের পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে, নামাযের কাজা আদায় করতে হবে না। মা আয়েশা (রা:) বলেন: “আমরা রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ঋতুবতী হলে রোযার কাজা আদায়ের ব্যাপারে নির্দেশিত হতাম। নামাযের কাযা আদায়ের ব্যাপারে নির্দেশিত হতাম না।” (বুখারী ও মুসলিম) (গ) ঋতুবতীর উপর হারাম-অন্তরায় ব্যতীত পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা: আল্লাহ বলেন: (لاَيَمَسُّهُ إلاَّ الْمُطَّهَّرُوْنَ) অর্থাৎ “যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে (কুরআনকে) স্পর্শ করবে না। 3(সূরা ওয়াক্বিয়া- ৭৯) রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমর ইবনে হাযম (রা:) এর নিকট যে পত্র প্রেরণ করেছিলেন, তাতে লিখেছেন, (لاَيَمَسَّ الْقُرآنَ إلاَّ طَاهِرٌ) অর্থাৎ “পবিত্র ব্যক্তি ব্যতীত কেহ কুরআন স্পর্শ করবে না।” (মুয়াত্তা মালিক) স্পর্শ করে ঋতুবতীর মুখস্থ কুরআন পড়ার ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে মতবিরোধ বিদ্যমান। তবে না পড়াই উচিত। অবশ্য একান্ত প্রয়োজন যেমন- ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে মুখস্ত পাঠ করতে পারে। ঋতুবতীর দু’আ, তাসবীহ্, তাহমীদ, তাহলীল ইত্যাদি পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই। ঘ) ঋতুবতীর বাইতুল্লাহর তওয়াফ করা হারাম: রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মা আয়েশা (রা:)কে বলেছিলেন: ( …فَافْعَلِيْ ماَ يَفْعَلُ الحَاجَّ غَيْرَ أنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِيْ ) “হজ্জ সম্পাদনকারী একজন ব্যক্তি যা করে তুমিও তা করতে থাক। তবে পবিত্রতা অর্জন পর্যন্ত পবিত্র ঘর কা’বার তওয়াফ থেকে বিরত থাকবে।” (বুখারী ও মুসলিম) ঙ) ঋতুবতী মহিলার জন্য মসজিদে অবস্থান করা নাজায়েজ: রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: (…فإنِّيْ لاَ أُحِلُّ الْمَسْـجِدَ لِحاَئِضٍ وَلاَ جُنُبٍ) “কোন ঋতুবতী এবং নাপাক ব্যক্তির জন্য (যার উপর গোসল ফরয) মসজিদে অবস্থান করা আমি বৈধ করিনি।” (আবু দাউদ) তবে মসজিদ থেকে কোন জিনিস নেয়ার দরকার থাকলে তা নিতে পারবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আয়েশা (রা:)কে বললেন: ناَوِلِيْنِيْ الْخُمْرَةَ مِنْ الْمَسْـجِدِ ، قالت: فقُلتُ : إنِّيْ حاَئِضٌ, فقـال: إنَّ حَيْضَتَكِ لَيْسَـتْ فِيْ يَـدِكِ “মসজিদ থেকে (আমার) চাদরটি এনে দাও। তিনি বললেন- আমি তো ঋতুবতী? তিনি জবাবে বললেন: তোমার হাতে তো হায়েয নেই।” (মুসলিম) বি: দ্র: নিফাস বা সন্তান প্রসবোত্তর রক্ত প্রাবাহিত অবস্থায়ও উপরোক্ত বিধান সমূহ প্রযোজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *