হোমিওপ্যাথি বিরোধি সমালোচনা কেন? হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ঔষধ এবং চিকিৎসা জানুন।

                                                                                   হোমিওপ্যাথি বিরোধি সমালোচনা কেন?

                     হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ঔষধ এবং চিকিৎসা জানুন।

প্রারম্ভিকঃ
বহুভাষাবিদ, রসায়নবিদ (রসায়নশাস্ত্রের চূড়ামণি), তৎকালীন চিকিৎসা পদ্ধতি (Western Medicine নামে অভিহিত) এর উপর (১৭৭৯ খ্রিঃ) এনলার্জেন বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি ডক্টর অব মেডিসিন (এম.ডি) ডিগ্রিধারী, ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের ১ম প্রকাশিত কালজয়ী গ্রন্থ Organon der rationellen Heilkunde নামে গ্রন্থে Western Medicine পদ্ধতিকে “অ্যালোপ্যাথি” নামে (১৮১০ খ্রিঃ) নামকরণকারী জার্মানীর ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (জন্মঃ ১৭৫৫ খ্রিঃ-মৃত্যুঃ ১৮৪৩ খ্রিঃ) তিনি ১৭৯৬ খ্রিঃ হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল সায়েন্স আবিস্কার করেন।

ধর্ম ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দিগ্বিজয়ী প্রতিভাবান যারা জন্মগ্রহণ করেন, পরম হিতকর আবিষ্কারাদি যাদের জীবনব্যাপী প্রাণপণ গবেষণার ফল বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। তাদের প্রায় সকলেই প্রারম্ভে লাঞ্জিত, উপেক্ষিত, অপমানিত, এমনকি তীব্রভাবে উৎপীড়িত হয়েছেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমান (জন্মঃ ১৭৫৫ খ্রিঃ-মৃত্যুঃ ১৮৪৩ খ্রিঃ) তাদের মধ্যে একজন অন্যতম উদাহরণ।

হোমিওপ্যাথি তত্ত্বঃ

হিপোক্র্যাটস্ (গ্রিক দার্শনিক, গ্রিস) কে সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তার জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ খ্রিষ্টপূর্ব (৪৬০-৩৭৭)। হিপোক্র্যাটস্ প্রবর্তিত চিকিৎসা সংবিধানে দুইটি পদ্ধতি পরিস্ফুট ছিল। যথা-

(১) রোগ নিরসনের বিপরীত ধর্মী বস্তুর দ্বারা চিকিৎসা করা।
[এটাই পরবর্তিতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. গ্যালেন (১২৯-২০০, গ্রিস) গ্রহণ করেন]

(২) প্রাকৃতিক ব্যাধি সদৃশ লক্ষণ উৎপাদক ক্ষমতা সম্পন্ন দ্রব্যের দ্বারা রোগীর চিকিৎসা করা।
[পরবর্তিতে এটি অনেক বছর পর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমান (১৭৫৫-১৮৪৩, জার্মান) গ্রহণ করেন]
হিপোক্র্যাটস্ ২য় মতটির প্রতি সর্ব প্রথম সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্যারাসেলসার্স (জন্ম১৪৯৩ মৃত্যু১৫৪১ খ্রিঃ, সুইজারল্যান্ড)।

মাত্রা তত্ত্ব/মাত্রা বিজ্ঞান/ঔষধ শক্তিকরণ নীতিঃ

লর্ড বেকনের প্রবর্তিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার অারোহনীতি এবং আধুনিক বিজ্ঞানের জনক স্যার আইজ্যাক নিউটন এর আবিষ্কৃত ৩য় গতি সূত্রের উপর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক সূত্রটির সমতুল্য। গতি সূত্রটিঃ “প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত ধর্মী প্রতিক্রিয়া আছে।” (Action and reaction are equal and opposite)

হ্যানিমান শক্তিকরণে আনেন যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন- স্থুল মাত্রার চেয়ে সূক্ষ্ম মাত্রাতেই ঔষধের আরোগ্যকারী ক্ষমতা অধিক নিহিত। এরুপে ঔষধের মাত্রার পরিমাণ কমাতে গিয়ে হ্যানিম্যান শক্তিকরণ বা Principle of Potentization আবিষ্কার করেন।

বিজ্ঞানী ডালটন এর মতে- পদার্থকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যে সূক্ষ্মতম স্তরে উপণীত হওয়া যায় তা পারমাণবিক স্তর (Atomic)।
তার ধারণা পরমাণু (Atom) অবিভাজ্য। এই অখন্ডনীয় পরমাণুর সমন্বয়ে পদার্থ গঠিত হয়। প্রত্যেক পরমাণু এক একটি শক্তিকেন্দ্র।
বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম ব্রকস পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন যে, পরমাণুকে বৈদ্যুতিক শক্তির দ্বারা আরও সূক্ষ্ম অংশে বিভক্ত করা যায়। হোমিওপ্যাথি শক্তিকরণে তিনটি সত্য প্রকট-

(১) বিভাজিত ঔষুধ যতো সূক্ষ্ম হোক-না-কেন তার জড় পদার্থ অবিনশ্বর থাকবে।

(২) ঔষধ যতো বেশি সূক্ষ্ম হবে ততোবেশি শক্তিশালী হবে।

(৩) বাঞ্জিত শক্তি লাভের প্রয়োজনে ঔষধ ইচ্ছামত বিভাজিত করা যায়।

মাত্রা বিজ্ঞানে (হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানে) হ্যানিমানের অভিনব নীতি এক বিস্ময়কর উন্নয়ন। এই অাবিষ্কার না হলে ব্যর্থতার কারণে হোমিওপ্যাথি আরোগ্যনীতি বহুকাল আগেই লোকে ভুলে যেতো।
বিজ্ঞানী ডালটনের ও বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম ব্রকস- এর উক্ত সূত্রে শক্তিকরণকৃত বিশ্বে সর্বপ্রথম মানব দেহে ব্যবহার উপযোগী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে একমাত্র তৈরিকৃত “হোমিওপ্যাথি ঔষধ” অন্যান্য প্যাথির (চিকিৎসায়) ঔষধ হতে রোগী বিনা কষ্টে ও বিনা অস্ত্রোপচারে (সার্জারি) যন্ত্রণাদায়ক রোগ হতে তুলনামূলক দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ আরোগ্য লাভের জন্য বিশ্বের অন্যান্য প্যাথির (চিকিৎসাশাস্ত্রে) “হোমিওপ্যাথি শক্তিকরণ” নীতি অনুসরণে ইনজেকশনসহ দরকারী ঔষধ তৈরি হচ্ছে।

হোমিওপ্যাথি ও ডা. হ্যানিম্যানঃ

হোমিওপ্যাথি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি। আজ থেকে দুইশত বছর পূর্বে জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেন। হোমিওপ্যাথি (homeopathy) ল্যাটিন শব্দ homeo -এর অর্থ সদৃশ বা একই রকম এবং pathy অর্থ ভোগান্তি বা অসুখ। তিনি হোমিওপ্যাথির মূলনীতিকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে যে, “সদৃশ সদৃশকে নিরাময় করে” (Like cures like)। ল্যাটিন ভাষায় বলা হয় similia similibus curentur. অর্থাৎ যে ঔষধ সুস্থ শরীরে যে-রোগ সৃষ্টি করতে পারে, সেই ঔষধ অল্প মাত্রায় খাওয়ালে তা একই রোগ নিরাময় করতে পারে। পেশাগতভাবে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী একজন এলোপ্যাথিক ডাক্তার এবং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানসমুহের ইতিহাস নিয়ে যারা ব্যাপক পড়াশুনা করেছেন, তারা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, তিনি ছিলেন পৃথিবীতে আজ পযর্ন্ত জন্ম নেওয়া সর্বশ্রেষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন বিদ্রোহী এবং বৈপ্লবিক চিন্তাধারার প্রবর্তক। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে তিনি বাণিজ্যের পযার্য় থেকে পূণরায় সেবার পর্যায়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কারক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কেবল একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানীই ছিলেন না; একই সাথে তিনি ছিলেন মানব দরদী একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষ, একজন মহাপুরুষ, একজন শ্রেষ্ট কেমিষ্ট, একজন পরমাণু বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসক, একজন অণুজীব বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট ফার্মাসিষ্ট, একজন সংস্কারক, একজন বহুভাষাবিদ, একজন দুঃসাহসী সংগঠক, একজন অসাধারণ অনুবাদক, একজন নেতৃপুরুষ, একজন বিদগ্ধ লেখক, একজন সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তি, একজন পরোপকারী-ত্যাগী মানব, একজন সুযোগ্য শিক্ষক, একজন আদর্শ পিতা, একজন রোমান্টিক প্রেমিক।

আজ থেকে দুইশত বছর পূর্বে হ্যানিম্যানের সময় চিকিৎসা বিজ্ঞান এতই জঘন্য এবং বর্বরতায় পুর্ণ ছিল যে, হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারকে কশাইখানা বলাই যুক্তিযুক্ত ছিল। সেখানে রোগীদেরকে রাখা হতো ভিজা এবং গরম কক্ষে, অখাদ্য-কুখাদ্য খেতে দেওয়া হতো, দৈনিক কয়েকবার রোগীদের শরীর থেকে রক্ত বের করে ফেলে দিয়ে দুর্বল করা হতো, রোগীদের শরীরে জোঁক লাগিয়ে (Leeching), সিঙ্গা লাগিয়ে (cupping) অথবা রক্তনালী কেটে রক্তপাত করা হতো, পায়খানা নরম করার ঔষধ (purgatives) খাওয়ানোর মাধ্যমে অনেক দিন যাবত রোগীদের পাতলা পায়খানা করানো হতো, বমি করানো হতো ইত্যাদি ইত্যাদি। সিফিলিসের রোগীদের প্রচুর মার্কারী খাওয়ানোর মাধ্যমে লালা নিঃসরণ (salivation) করানো হতো এবং এতে অনেক রোগীই কয়েক বালতি লালা থুথু আকারে ফেলতো এবং অনেক রোগীর দাঁত পযর্ন্ত পড়ে যেতো। অধিকাংশ রোগী (চিকিৎসা নামের) এই কুচিকিৎসা চলাকালীন সময়েই মারা যেতো। শরীরের মাংস অর্থাৎ টিস্যুকে গরম লোহা অথবা বাষ্প দিয়ে পুড়ানো হতো (cauterization), গরম সুঁই দিয়ে খুচিয়ে চামড়ায় ফোস্কা ফেলা হতো (blistering), লাঠি অথবা পাথরের আঘাতে শরীরে কৃত্রিম ফোঁড়া-ঘা-ক্ষত সৃষ্টি করা হতো এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘা-ক্ষত মাসের পর মাস বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হতো। মানসিক রোগীদেরকে শিকলে বেধে রাখা হতো, নিষ্টুরভাবে লাঠি দিয়ে তাদেরকে প্রহার করা হতো, কাঠি দিয়ে খোঁচানো হতো, বালতি দিয়ে তাদের শরীরে ঠান্ডা নিক্ষেপ করা হতো এবং আত্মীয়-স্বজনরা দেখতে এলে তাদেরকে জংলী-জানোয়ারের মতো শিকলে বেধে টেনে হিচরে বাইরে এনে দেখানো হতো। উপরে বর্ণিত সকল কিছুই করা হতো মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা বা রোগমুক্তির নামে (যা আজকের দিনে কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে কল্পনারও বাইরে)।

১৭৯০ খ্রিঃ থেকে ১৮৪৩ খ্রিঃ হ্যানিম্যানের মৃত্যু পযর্ন্ত এই দীর্ঘ সময়ে তিনি হোমিওপ্যাথির মুল সুত্রগুলি (aphorism) আবিষ্কার করেছেন, আরো গবেষণা-পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পর্যায়ক্রয়ে তাদেরকে সংশোধন-পরিবধন-পরিবর্তন করেছেন, ঔষধ আবিষ্কার করেছেন, ঔষধের মাত্রাতত্ত্ব (posology) আবিষ্কার করেছেন, ঔষধের শক্তিবৃদ্ধি (potentization) করার প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন, জটিল (chronic) রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, রোগীদের শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি (miasm theory) আবিষ্কার করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁর সমস্ত আবিষ্কারকে তিনটি মৌলিক পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে গেছেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন সংশোধনীর পর অনেকগুলি এডিশন বের করেছেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকরূপে বিবেচ্য এই বইগুলো হলো- অর্গানন অব মেডিসিন (Organon of Medicine), মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা (Materia Medica Pura) এবং ক্রনিক ডিজিজ (Chronic disease)। তাছাড়া লেসার রাইটিংস (Lesser writings) নামে তাঁর আরেকটি মৌলিক গ্রন্থ বিদ্যমান আছে যাতে তাঁর ছোট ছোট সমস্ত গবেষণা প্রবদ্ধগুলি সংকলিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী মানব স্বাস্থ্য সেবায় হোমিওপ্যাথিঃ

একজন হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মানবজাতির প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তার এক বিরাট রহমত স্বরূপ। কেননা তিনি ইচ্ছে করলে মাত্র অল্প টাকায় ঔষধে এমন অনেক জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারেন, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে লক্ষ টাকার ঔষধেও সারানো যায় না। হোমিওপ্যাথি ঔষধে আজ থেকে দুইশত পুর্বেও এমন অনেক রোগ-ব্যাধি সারানো যেতো যা এখনও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিরাময় করা যায় না। এমন অনেক জটিল রোগ আছে যা এক ফোটা হোমিওপ্যাথি ঔষধে সারিয়ে দেওয়া যায় অথচ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে এসব রোগের জন্য যুগের পর যুগ ঔষধ খেয়ে যেতে হয়। সে যাক, প্রথমকথা হলো হোমিওপ্যাথি পৃথিবীর একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যা শতকরা একশ ভাগ বিজ্ঞান সম্মত। পক্ষান্তরে অন্যান্য বহুল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিসমুহের কোনটিই শতকরা একশভাগ বিজ্ঞানসম্মত নয়। এদের কোনটিতে বিজ্ঞান আছে দশ ভাগ আর বিজ্ঞানের নামে গোজামিল আছে নব্বই ভাগ আবার কোনটিতে বিজ্ঞান আছে বিশ ভাগ আর বিজ্ঞানের নামে ভাওতাবাজি আছে আশি ভাগ। একমাত্র শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সকল রোগই সম্পূর্ণ নির্মুল হয়ে যায়।

পক্ষান্তরে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোন রোগই নির্মুল হয় না বরং কিছু সময়ের জন্য চাপা পড়ে যায়। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট-খাটো রোগ চাপা পড়ে কিছু দিন পর বড় বড় রোগে রূপান্তরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সে-সব চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়েরিয়ার চিকিৎসা করলে কোষ্টকাঠিন্য/ পাইলস দেখা দেয়, চর্মরোগের চিকিৎসা করলে হৃদরোগ, বাতের চিকিৎসা করলে ক্যান্সার, মানসিক রোগের চিকিৎসা করলে ব্রেন ড্যামেজ, আলসারের চিকিৎসা করলে ধ্বজভঙ্গ ইত্যাদি ইত্যাদি। আরেকটি অসুবিধা হলো প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ঔষধে মারাত্মক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেখানে সম্পূর্ণ শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার কারণে হোমিও ঔষধের ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম; একেবারে নাই বললেই চলে।

হোমিওপ্যাথি স্বাস্থ্য শিক্ষাঃ

নতুন প্রজন্মের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের হোমিওপ্যাথিকে পেশা হিসেবে গ্রহন করার আহ্বান জানাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো শতভাগ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি হওয়ার কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান খুবই জটিল যা একজন গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী ব্যতীত অন্যদের পক্ষে ভালোভাবে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়। অথচ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কম মেধাসম্পন্নরা হোমিওপ্যাথিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কারণে উল্টো হোমিওপ্যাথির আরো বদনাম বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে সরকারীভাবে হোমিওপ্যাথিতে দুইটি কোর্স বিদ্যমান আছে। তার একটি হলো ডিপ্লোমা কোর্স এবং অন্যটি হলো ডিগ্রি কোর্স। ডিপ্লোমা কোর্সটি সারে চার বছর মেয়াদী এবং ডিগ্রি কোর্সটি ছয় বছর মেয়াদী। ডিপ্লোমা কোর্সটিকে বলা হয় ডি.এইচ.এম.এস. (D.H.M.S.- Diploma in Homoeopathic Medicine & Surgery) এবং ডিগ্রি কোর্সটিকে বলা হয় বি.এইচ.এম.এস. (B.H.M.S.- Bachelor of Homoeopathic Medicine & Surgery)। ডিপ্লোমা কোর্সের চার বছর হলো থিওরীটিক্যাল ক্লাস এবং ছয় মাস হলো হাসপাতালে ইন্টার্নী ক্লাস। ডিএইচএমএস কোর্সকে আরও যুগোপযোগী করতে নতুন পাঠ্যপুস্তক অন্তভুক্ত করে পূর্ণমান বৃদ্ধি করে বর্তমানে পাঁচ বছর থিওরীটিক্যাল এবং এক বছর হাসপাতালে ইন্টার্নী ক্লাস করার প্রক্রিয়া চলছে। পক্ষান্তরে ডিগ্রি কোর্সে পাঁচ বছর হলো থিওরীটিক্যাল ক্লাস এবং এক বছর হলো হাসপাতালে ইন্টার্নী ক্লাস। ডিপ্লোমা কোর্সটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড (BANGLADESH HOMOEOPATHIC BOARD), ঢাকা এবং ডিগ্রি কোর্সটি পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka).

সম্প্রতি বাংলাদেশের আশা ইউনিভার্সিটি ও বিবিসি-বাংলা এর গবেষণা প্রতিবেদন ২০১৫ খ্রিঃ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০% জনগন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছে।

বাংলাদেশে এমবিবিএস’রা হোমিওপ্যাথি কোর্স করছেঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক এম.বি.বি.এস (অ্যালোপ্যাথি) সন্মানীত ডাক্তারগণ শুধুমাত্র ডি.এইচ.এম.এস (হোমিওপ্যাথি) কোর্স করতে পারেন। অনেকে করেছেন ও করছেন এবং কোর্স করে হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সিলেটে জন্মস্থান ও ঢাকায় বসবাসকারী যার পরিবারের স্ত্রী সন্তান সহ সকলেই অ্যালোপ্যাথি উচ্চ ডিগ্রিধারী তাদের মধ্যে

(১) ডা. শেখ ফারুক এলাহী।
এম.বি.বি.এস (সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ), এম.সি.পি.এস (মেডিসিন), এম.পি.এইচ (কমিউনিটি মেডিসিন), এম.ফিল (Med Science)….., ডি.এইচ.এম.এস (হোমিওপ্যাথি),
পি-এইচডি (অধ্যয়নরত-চায়না)
প্রাক্তন রেজিষ্ট্রার, (Department of Obstetrics & Gynaecology) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ। তার সন্তান

(২) ডা. ফাতেমা জোহরা।
পিতা- ডা. শেখ ফারুক এলাহী।

এম.বি.বি.এস পাস। ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) পাস।
এমডি শেষ বর্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

(৩) শেখ মোহাম্মদ সানি।
পিতা- ডা. শেখ ফারুক এলাহী।

এম.বি.বি.এস (ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ। পাস ২০১৫), ডি.এইচ.এম.এস (হোমিওপ্যাথি)….।

(সহ পরিবারের অন্যান্যরা অ্যালোপ্যাথি এমবিবিএস সহ উচ্চ ডিগ্রিধারী হলেও বর্তমানে সকলে হোমিওপ্যাথি ডিএইচএমএস কোর্সকৃত ডাক্তার)

হোমিওপ্যাথি বিরোধি লেখক ও সমালোচকদের প্রতিঃ

কিছু কিছু অ্যালোপ্যাথি ডাক্তার হোমিওপ্যাথি সমন্ধে বিরুপ মন্তব্য করে ফেসবুকে কলাম লিখছে..।
সে সমস্ত লেখক ইন্টারনেট হতে হোমিওপ্যাথি বিরোধি লেখকদের কলাম সংগ্রহ করে তার সঙ্গে নিজের মত কথা লিখে প্রকাশ করে। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে হেও প্রতিপন্ন করে আসছে।

হোমিওপ্যাথি বিরোধী সমালোচনা হোমিওপ্যাথি ঔষধ কাজ করে কিনা?

সম্প্রতি কে বা কোন কুচক্রি মহল ইন্টারনেটে লিখেছে Homoeopathic Medicine “Silicea (সাইলিসিয়া)” এর মধ্য কাঁটা রেখে পরীক্ষা করেছে কাঁটা গুলে যায়নি। কাঁটা মানব শরীরে বিঁধলে শুুধু সাইলিসিয়া ঔষধ কেন লক্ষণ ভিত্তিক অসংখ্য হোমিওপ্যাথি ঔষধ আছে। বিভ্রান্তকর শব্দ “কাঁটা গলে যায়”। বাস্তবে গলে যায়না। কাঁটা মানব শরীরে বিঁধে থাকা স্থান হতে হোমিওপ্যাথি ঔষধ সঠিক মাত্রায় সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগে মানব শরীরে বিঁধে থাকা স্থান হতে দ্রুত বের হয়ে যায়। হোমিওপ্যাথি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগে কাঁটা মানব শরীরের বিঁধে থাকা স্থান হতে বের হয়ে আসে।
অনেক সমালোচক বিভ্রান্তকর ব্যাখ্যা দেয় যে, Silicea (সাইলিসিয়া) ঔষধের মধ্যে কাঁটা রাখলে কাঁটা গলে যাওয়ার কথা। কিন্তু কাঁটা গলে না। তাদের কে ভুল ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছে। বাস্তবে মানব শরীরে ঔষধের ক্রিয়া বা কাজ এবং একটি টেষ্টটিউব বা বোতল বস্তুতে কাজ বা ক্রিয়া করা অন্য জিনিস বা বিষয়। হোমিওপ্যাথি ঔষধ মানব শরীরে কাজ করে তা টেষ্টটিউব বা বোতলে কাজ করেনা। মানব শরীরে কাজ করার জন্যই হোমিওপ্যাথি ঔষধ আবিস্কার হয়েছে এবং প্রত্যেকটি হোমিওপ্যাথি ঔষধ মানব শরীরে পরীক্ষিত হয়েছে।

হোমিওপ্যাথি ঔষধে কাজ করে কিনা? তা জানতে ইন্টারনেট ঘাটতে হবে না। হোমিওপ্যাথি বিরোধিদের মতামত ও কলাম দেখতে হবে না।
বাংলাদেশের স্বঘোষিত তথাকথিত সমালোচকদের সরকারী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর-১৪, ঢাকায় আসুন। জটিল রোগীর কেসস্টাডি দেখুন। অসুস্থতার সময়কার অ্যালোপ্যাথি নামকরা প্রতিষ্ঠানের রোগীর জন্য করা প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট দেখুন ও রোগীকে হোমিওপ্যাথি ঔষধ খাওয়ার পর সেই নামকরা প্রতিষ্ঠানের প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট দেখুন। জটিল ও পুরাতন রোগটি হোমিওপ্যাথি ঔষঞধে ও ভাল মানের ডাক্তারের সহায়তায় সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়েছে। রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ। সম্প্রতি সময় টিভি চ্যানেল সংবাদে রোগীর ভিডিও সহ স্বাক্ষাত ভিক্তিক নিউজ করেছে। অন্যান্য টিভি চ্যানেল করছে।

বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি স্বাস্থ্য সেবায় সাফল্যঃ

বাংলাদেশে অনেক জেলা ও উপজেলা শহরে বেশ কিছু ভালো মানের অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ডাক্তার আছে। যারা প্রতিনিয়ত জটিল ও পুরাতন রোগ আরোগ্য করে আসছেন। তাদেরকে অভিনন্দন।

হোমিওপ্যাথি ডি.এইচ.এম.এস বা বি.এইচ.এম.এস কোর্সকৃত সকল ডাক্তারদের রোগী দেখার ও রোগী আরোগ্য করার মান ভাল নয়। পুস্তকের জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে হয়। রোগী আরোগ্যকে সাফল্য অর্জন করা হলো ডাক্তারের ব্যবহারিক দিক। কোর্সকৃত ডাক্তার দুই এক জনের নিকট রোগ নিরাময়ে বিফল হলে হোমিওপ্যাথি ঔষধ কাজ করে না তা বলা ঠিক না। হোমিওপ্যাথি ঔষধ ভাল কাজ করে। সঠিক রোগে সঠিক হোমিওপ্যাথি ঔষধ নির্বাচনে সেই ডাক্তার ব্যর্থ। সেটা হোমিওপ্যাথির দোষ নয়, দোষ ডাক্তারের। সঠিক রোগে সঠিক ঔষধ নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই ডাক্তারের ব্যর্থতা হোমিওপ্যাথি গ্রহণ করবে না।

বাংলাদেশে অসংখ্য হোমিওপ্যাথি ডিগ্রিধারী ডাক্তারগণ যারা প্রতিনিয়ত জটিল রোগী আরোগ্য করে আসছে।
উদাহরণস্বরুপঃ বাংলাদেশে অন্যান্য জেলা ও উপজেলার মত বগুড়া জেলার, শেরপুর উপজেলার, শেরপুর পৌর এলাকার, জগন্নাথ পাড়ায় “ডাক্তার বাড়ী”তে কয়েকজন হোমিওপ্যাথি ডিগ্রিধারী গভঃ রেজিষ্টার্ড ডাক্তার নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের জটিল ও পুরাতন রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করে আরোগ্য করে আসছে।

নিম্নে ডাক্তার চেম্বারের হোমিওপ্যাথি ডাক্তারগণঃ
(১) ডা. মো. আতিকুল্লা।
এইচএমবি [দি রইস হোমিওপ্যাথিক মেডক্যাল কলেজ, কুড়িগ্রাম, পূর্ব পাকিস্থান (বাংলাদেশ)]
বিএমবি (গোল্ড মেডালিষ্ট ফার্স্টক্লাশ ফার্স্ট) [দি ইর্স্টান হোমিও মেডিক্যাল কলেজ, কুমিল্লা, ত্রিপুরা, পূর্ব পাকিস্থান (বাংলাদেশ)]
ডাক্তার চেম্বারঃ 
ডা. আতিকুল্লা হোমিওপ্যাথি হেলথ কেয়ার
(প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৬৮খ্রিঃ)।

(২) ডা. মো. আবু সাঈদ (আরিফ)।
পিতা- ডা. মো. আতিকুল্লা।

ডিএইচএমএস (বগুড়া হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল)
এমএসএস (এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ)
এমবিএ (উত্তরা ইউনিভার্সিটি)
ডাক্তার চেম্বারঃ 
ডা. আতিকুল্লা হোমিওপ্যাথি হেলথ কেয়ার
(প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৬৮খ্রিঃ)।

(৩) ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু)।
পিতা- ডা. মো. আতিকুল্লা।

ডিএইচএমএস (রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল)
এমএসএস (এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ)
ডাক্তার চেম্বারঃ
ডা. আব্দুস সালাম হোমিওপ্যাথি হেলথ কেয়ার
(প্রতিষ্ঠাঃ ২০০২খ্রিঃ)।

সহ অন্যান্য।

[ হোমিওপ্যাথি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসাঃ নবজাতক, শিশু ব্যাধি, পুরুষ ব্যাধি, স্ত্রী ব্যাধি (সাদা স্রাব, বন্ধাত্ব, স্তন টিউমার, জরায়ু টিউমার, জরায়ু বড় হওয়া..), নাক, কান, গলা, চর্ম, যৌন, অর্শ, বাত, সাইনুসাইটিস, নাকের পলিপাস, এ্যাপেন্ডিসাইটিস, এ্যাজমা, হার্ট, কিডনী, টিউমার ও ক্যান্সার ব্যাধির সহ অন্যান্য ব্যাধির চিকিৎসা করে আসছে ]

হোমিওপ্যাথি সমালোচকদের প্রতিঃ

কত ধরনের জটিল রোগের নাম ও আরোগ্যের তথ্য জানতে চান। এসে দেখে যান। হোমিওপ্যাথি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মুখ হতে শুনুন।
পারলে সমালোচক ও হোমিওপ্যাথি বিরোধি অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারগণ হোমিওপ্যাথি সমালোচনা ও বিরোধিতা না করে আপনাদের জটিল রোগীর প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট সহ রোগীকে হোমিওপ্যাথি অভিজ্ঞ ও দক্ষ ডাক্তারদের নিকট রোগী প্রেরন করুন। কিছুদিন হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগ করার পর পূর্ণরায় প্যাথলজিক্যাল টেষ্ট করান ও পরীক্ষা করে দেখুন রোগ আছে কিনা। অবশ্যই রোগ সম্পূর্ণ আরোগ্য হবে।

হোমিওপ্যাথি বিরোধি ও সমালোচকদের অতিষ্ঠদের কারণে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদের জটিল রোগী হোমিওপ্যাথি ঔষধে আরোগ্যেকারী রোগীর তথ্য সহ প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টের কপি সমূহ ডকুমেন্ট হিসাবে ভবিষতের জন্য সংরক্ষণ করা দরকার।

হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হোমিওপ্যাথি কোর্স গুলোতে শুধু হ্যানিম্যানের অগ্যানন অব মেডিসিন ও মেটেরিয়া মেডিকা, ক্রনিক ডিজিজ পড়ায় না।
হোমিওপ্যাথি কোর্সকৃতদের এনাটমি, ফিজিওলজি, গাইনোলজী, মিডিওফারী, প্যাথলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, সাইকোলজি, হাইজিন, মেডিকেল জুরিস প্রুডেন্স, ফার্মাকোলজি, সার্জারী অসংখ্য অ্যালোপ্যাথি কোর্সের বিষয় অাবশ্যিক বিষয় হিসাবে অন্তভুক্ত ও বিষয় গুলো পাঠদান করায়। আর এসব বিষয় গুলো বেশীর অ্যালোপ্যাথি উচ্চ ডিগ্রিধারী ডাক্তারগণ শিক্ষক হিসাবে পাঠদান করান।

হোমিওপ্যাথি বিরোধী সমালোচনা, হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান কিনা?

সমালোচনা ও বিরোধিতা করতে হলে কয়েকদিনে দুই চারটি হোমিওপ্যাথি মেটেরিয়া মেডিকা বই পড়ে ও ইন্টারনেটে হোমিওপ্যাথি বিরোধিকারীদের মনগড়া লেখা পড়ে এবং রেফারেন্স ব্যবহার না করে সমালোচনা না করে যদি নিজের সৎ সাহস থাকে তাহলে বছরের পর বছর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানে লেখাপড়া করে ডিএইচএমএস এর পর বিএইচএমএস তারপর এমডি তারপর পি-এইচডি হোমিওপ্যাথি বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রি নিন। তারপর সেই চিকিৎসা বিজ্ঞান সমন্ধে সমালোচনা করুন। দুই চারটা হোমিওপ্যাথি বই পড়ে জ্ঞানের মহাপন্ডিত হিসাবে নিজেকে মনে না করে ও জাহির না করে, সেই চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আরোগ্যকলার গভীরে যেতে হবে। কিছু কিছু আন্তজার্তিক অ্যালোপ্যাথি ঔষধ কোম্পানি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. হ্যানিম্যানের জীবনদশা হতে চক্রান্ত করে আসছে। তা নতুন নয়। চক্রান্তকারীগণ একটি পক্ষভুক্ত। বিশাল অর্থ লগ্নিকরে অ্যালোপ্যাথি ঔষধ বাজারজাত ও অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। আজ লক্ষ্য করুন এন্টিবায়োটিকের ভয়াবহতায় বিশ্বমানব সভ্যতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি ভয়াবহতায় মুখে আছে…।

বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে শুধুমাত্র ডায়াবেটিস ঔষধ বিক্রয় ব্যাপারে। অ্যালোপ্যাথি ফার্মেসি গুলো বড় মাপের গ্রাহক হলো ডায়াবেটিস রোগী। এই ডায়াবেটিস গবেষণার নামে বিশ্বব্যাপি কত ডলারের পর ডলার ব্যায় করেছে। কোন কার্য়কর ঔষধ কি আবিস্কার হয়েছে। শুধু গবেষণা চলছেই। প্রতিদিন শরীরে সিরিঞ্জ এর সূঁচ বিধাতে হয়। কি কষ্ট রোগীদের হয়। তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। বলছে ইনসুলিন হরমন বিপাকক্রিয়া বা বিশৃঙ্খলার কারণে ডায়াবেটিস। তাহলে কেন কার্যকর ঔষধ এখনও বের হচ্ছেনা। প্রতিদিন রোগীদের কেন ২/৩ বেলা শরীরে ইনজেকশনের সূঁচ বিদ্ধ করতে হবে। আর কত শতাব্দী গবেষণার নামে জনগণের অর্থের টাকা বিশ্বব্যাপি লুটপাট চলবে। ডায়াবেটিস ঔষধের নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার টাকার ঔষধ বিক্রয়ের ব্যবসা চলবে। ডায়াবেটিস রোগীদের মুক্তি দিন।

ইংল্যান্ড সম্প্রতি হোমিওপ্যাথি বিষয়ে সরকারীভাবে স্বাস্থ্য সেবায় আর্থিক সহায়তা বন্ধ করেছে তাদের স্বদেশী ও আন্তর্জাতিক অ্যালোপ্যাথি ঔষধ উৎপাদনকারী সিন্ডিকেট এর চাপে। হোমিওপ্যাথি অগ্রযাত্রা ও জটিল রোগী আরোগ্যের সফলতা হোমিওপ্যাথি বিরোধি ও সমালোচকগণ সহজে মেনে নিতে পারছেন না। হোমিওপ্যাথি বিষয়ক গবেষণা করতে বিশ্বব্যাপি হোমিওপ্যাথি সহ সব প্যাথির গবেষকদের যৌথ প্রতিনিধি সহযোগে গবেষণা টিম করা। কোন দেশ শুধুমাত্র এককভাবে অ্যালোপ্যাথি ভাবাপন্ন বিজ্ঞানী দিয়ে মনগড়া টিম করে হোমিওপ্যাথিকে অবজ্ঞা করা ও হোমিওপ্যাথি বিরোধি রিপোর্ট কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।
আন্তজার্তিক একটি স্বাস্থ্য সংস্থার কথা বিরোধিকারীগন প্রায়ই বলে। সেই আন্তজার্তিক সংস্থা চলে আমেরিকার কথা মত। আর আমেরিকা প্রশাসন নিয়ন্ত্রন করছে ইহুদিরা…। আমেরিকা অর্থ না দিলে নিদিষ্ট পরিমার চাঁদা না দিলে প্রতিষ্ঠানটির দূরাবস্থা হয়ে পড়ে।
তাদের কারণে আন্তজার্তিক স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু করতে পারছেনা।

স্ব স্ব দেশের সরকার তাদের দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, খাদ্যাভ্যাস সহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে স্ব স্ব দেশে গবেষণাগার ও হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন তথা নিয়মিত গবেষণা করা ও নতুন নতুন পরীক্ষিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ আবিষ্কার করা। সঙ্গে ঔষধের উপাদান, শক্তিকরণ, মাত্রাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা। গবেষণা একটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়মিত কার্যক্রম।

ভারতে হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সরকারী ও বেসরকারীভাবে হোমিওপ্যাথি গবেষণা করে আসছে। হোমিওপ্যাথি আজ শুধু জার্মান দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। হোমিওপ্যাথি আজ বিশ্বব্যাপি।
বাংলাদেশে দ্রুত হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও নিয়মিত গবেষণা করা। সমালোচকদের বিজ্ঞান ভিক্তিক যথাযথ জবাব নিয়মিত দেওয়া। গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশিত হওয়া।

হোমিওপ্যাথি পদ্ধতি ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ আজ আর শুধু জার্মান ও আমেরিকায় উৎপাদন হয় না। বিশ্বের প্রায় দেশেই হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। মেধাবীরা লেখাপড়া করছে। তেমনি বর্তমানে জার্মান, আমেরিকা, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, সুইজারল্যান্ড সহ বিশ্বের প্রায় উন্নত দেশেই আধুনিক কম্পিউটারীজ যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ও মান সম্মত (আন্তজার্তিক মানের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ISO, GMP) হোমিওপ্যাথি ঔষধ উৎপাদন এবং বাজারজাত হচ্ছে।

বাংলাদেশে আন্তজার্তিক মানের GMP সার্টিফিকেট প্রাপ্তঃ “ম্যাক্সফেয়ার এন্ড কোম্পানী লিমিটেড” (হোমিওপ্যাথি ডিভিশন), ঢাকা, বাংলাদেশ ও আন্তজার্তিক মানের ISO সার্টিফিকেট প্রাপ্তঃ “ডিপলেইড ফার্মাকো লিমিটেড” (হোমিওপ্যাথি ডিভিশন), ঢাকা, বাংলাদেশ।

বিশ্বের স্ব স্ব দেশের হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ও গবেষকগণ হোমিওপ্যাথি উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসুন।
জয় হোক বিশ্বব্যাপি হোমিওপ্যাথির।

পরিশেষঃ

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা বিজ্ঞান হোমিওপ্যাথিক কে ১৯৮৬খ্রিঃ প্রগতিশীল ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসি (বর্তমান ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন) এর অর্ন্তভুক্ত করে [বিশ্বব্যাপি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের (গ্রাজুয়েট/স্নাতক/বি.এস-সি অনার্স..সমমান): বি.এইচ.এম.এস ডিগ্রি কোর্স চালু] বিশ্বজনীন মর্যাদা দিয়েছে।

বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিঃ হতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রয়ত্ব বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড (প্রস্তাবিতঃ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কাউন্সিল / বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয়) অধিভূক্ত ও নিয়ন্ত্রিত দেশের প্রায় ৫৬ টি হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল [বিশ্বব্যাপি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের (গ্রাজুয়েট/স্নাতক/বি.এস-সি (পাস) ডিগ্রি সমমান): ডি.এইচ.এম.এস ডিগ্রি কোর্স চালু] গুলোতে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের জন্য সার্জারি, গাইনোলজি, প্যাথলজিসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোজিত হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় রাষ্ট্রে সরকার স্বীকৃত মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা হোমিওপ্যাথি বিষয় নিয়ে কোর্স ও গবেষণা করছেন। ঔষধ প্রস্তুতিকরণে এসেছে আধুনিকতা তথা সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ছোয়া।

হোমিওপ্যাথি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বীকৃত বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় ও ২য় বৃহত্তম বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি (Alternative System) হোমিওপ্যাথি।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগী আরোগ্য ও দ্রুত সুস্থ হচ্ছে এজন্য বাংলাদেশে সকল “সরকারী জেলা সদর হাসপাতাল” ও “সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স” গুলোতে পর্যায়ক্রমে হোমিওপ্যাথি কোর্সকৃতদের “ডা.” (ডাক্তার) হিসাবে “মেডিক্যাল অফিসার (হোমিওপ্যাথি বিভাগ)” পদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে রাজস্বখাতে ও প্রকল্পখাতে নিয়োগ প্রদান করে আসছে। এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর” এ “অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি)” বিভাগ চালু করা হয়েছে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রাকৃতিক ও নিরাপদ এবং দ্রুত আরোগ্যকারী।

“হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিন ও সুস্থ থাকুন প্রতিদিন।”

(মতামত)
(Language: Bangla).

লেখক পরিচিতিঃ

ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু)।
ডিএইচএমএস (রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল);
এমএসএস (এশিয়ান ইউনিভার্সিটি)
গভঃ রেজিষ্টার্ড ফিজিসিয়ান (হোমিওপ্যাথি)

প্রধান সমন্বয়ক,
বাংলাদেশ ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ,
বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *