২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে সহীহ হাদীসঃ
হযরত ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (রাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন হযরত সাইব বিন ইয়াযিদ (রা) থেকে, তিনি বলেন, উমার বিন খাত্তাব (রা) এর যামানায় তাঁরা (সাহাবাগণ সহ অন্যান্যগণ) রামাদান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন।
(হাদীসটি সংক্ষেপিত)
রেফারেন্সঃ
আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী-২/৪৯৬
হাদীসটির পর্যালোচনাঃ
১/ ইমাম নববী (রাহ) তাঁর “আল খুলাসাহ” এবং ‘আল মাজমু’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
আল মাজমু-৪/৩২
২/ ইমাম যায়লায়ী (রাহ) তাঁর ‘নাসবুর রায়াহ’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
নাসবুর রায়াহ-২/১৫৪
৩/ইমাম সুবকী (রাহ) তাঁর ‘শারহুল মিনহাজ’ নামক কিতাবে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
৪/ ইমাম ইবনুল ইরাকী (রাহ) তাঁর ‘তারহুত তাছরীব’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
তারহুত তাছরীব-৩/৭১৬
৫/ইমাম আইনী (রাহ) তাঁর ‘উমদাতুল কারী’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
উমদাতুল কারী-৭/১৭৮
৬/ইমাম সুয়ুতী (রাহ) তাঁর ‘আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
রেফারেন্সঃ
আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ-২৮
৭/ইমাম মুল্লা আলী কারী (রাহ) তাঁর ‘শারহুল মুয়াত্তা’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
৮/ ইমাম নীমাওয়ী (রাহ) তাঁর ‘আসারুস সুনান’ নামক কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
২০ রাকাতের পক্ষের হাদীসটি নিয়ে আলবানী সাহেবের অভিযোগঃ
________________________________________________
আলবানী বলেন,
হাদীসটির বর্ণনাকারী ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (রাহ)কে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (র) বলেছেন, তিনি মুনকারুল হাদীস।
ইমাম যাহাবী বলেছেন, তার রেওয়ায়াতে ইদতেরাব রয়েছে। একবার তিনি বলেছেন, ২১ রাকাতের কথা, আবার অন্যস্থানে তিনি বলেছেন ২৩ রাকাতের কথা। তাই উনার কথা গ্রহনযোগ্য নয়।
আমাদের প্রথম জবাবঃ
__________________________________________________
এ অভিযোগ মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়, তবুও তর্কের খাতিরে যদি মেনে ও নেই, তবে এক্ষেত্রে আমাদের জবাব হচ্ছে,
কোন একটি হাদীসের অর্থ যখন সকলের নিকট গ্রহণীয় হয়ে যায়, তখন সে হাদিসের সনদের বিশুদ্ধতার প্রয়োজন হয় না। যেমনভাবে ইয়াযিদ বিন খুসাইফা (রাহ) এর হাদীস। এ হাদীসের অর্থ এতই গ্রহণযোগ্য যে এর সনদের অনুসরণের প্রয়োজন হয় না।
কয়েকটি দালিলিক উদাহরণ দিচ্ছিঃ
ইমাম খাতীব বাগদাদী “কাযা” সংক্রান্ত মুয়ায (রা) এর হাদীস সম্পর্কে বলেন,
‘আহলে ইলম এ হাদিসের অর্থ কবুল করেছেন এবং এর দ্বারা দলীল প্রদান করেছেন’। যদিও এর সনদ বিশুদ্ধ নয়।
রেফারেন্সঃ
১/আল ফাকীহু ওয়াল মুতাফাক্কিহু
২/আত তালখীসুল হাবীর- ৪/৮৩
৩/আল মুগনী-৯/৫৩
ইমাম সুয়ূতী বলেন, কোন হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ না হলে যদি মানুষ এর অর্থকে কবুল দ্বারা তালাক্কী করে, তবে সে হাদীসকে সহীহ বলে হুকুম দেয়া হয়।
রেফারেন্সঃ
তাদরীবুর রাওয়ী ফী শারহি তাকরীবিন নাওয়ায়ী- ৬০
ইমাম ইবনু আব্দিল বার ‘আল ইসতিযকার’ নামক কিতাবে বলেন, ইমাম বুখারী (রাহ) ‘বাহর’ এর হাদিসকে (সমুদ্রের পানি পবিত্র) সহীহ বলেছেন, অথচ হাদীস বিশারদগণ এর সনদকে বিশুদ্ধ বলেন নি।
রেফারেন্সঃ
আল ইসতিযকার
ইমাম ইবনু আব্দিল বার।
৫/১৫৭
ঠিক একই ভাবে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দীনার হচ্ছে ২৪ কীরাত- এ হাদীসটির অর্থের উপর সকলের ইজমা হওয়ার কারনে এর সনদের পর্যালোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই। এটা গ্রহনযোগ্য।
রেফারেন্সঃ
আত তামহীদ
হাফিয ইবনু আব্দিল বার।
এ নিয়ে অনেক অনেক রেফারেন্স দেয়া যাবে।
** তেমনি ২০ রাকাতের আলোচ্য হাদীসটি ‘মুতালাক্কা বিল কাবুল’ হয়েছে। সকলের নিকট এটার আম গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে।
ইমাম ইবনু আব্দিল বার (রাহ) বলেন, ২০ রাকাতের বিষয়টি সহীহ তথা বিশুদ্ধ।যা উবাই বিন কা’ব থেকে বর্ণিত হয়েছে। এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কোন প্রকারের এখতেলাফ ছিলনা।
***ইমাম তিরমিযি (রাহ) বলেন, হযরত উমার এবং আলী (রা) এবং অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের উপর অধিকাংশ উলামায়ে কেরামগণ একমত হয়েছেন।
এমন কথাই বলেছেন
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রাহ)
ইমাম ইবনুল মুবারাক (রাহ)
ইমাম শাফেয়ী (রাহ), তিনি বলেন, এভাবেই আমি মাক্কা মুকাররামাতে লোকজনকে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত পড়তে দেখেছি।
রেফারেন্সঃ
জামিউত তিরমিযি।
১/শারহুস সুন্নাহ-৪/১২৩
২/আল মাজমু-৪/৩১
৩/মুখতাসারু কিয়ামিল লাইলি ওয়া কিয়ামি রামাদান- ৯৫
৪/ফাতহুল বারী- ৪/২৫৩
***ইমাম ইবনু রাশীদ বলেন,
ইমাম মালিকের দুটি কাওলের একটি, ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ী, আহমাদ, এবং আবু দাঊদ (রাহ) সবাই বিতির ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন।
রেফারেন্সঃ
বিদায়াতুল মুজতাহিদ ।
***ইমাম ইবনু আব্দিল বার (রাহ) বলেন, এটা হচ্ছে জমহুর (অধিকাংশ) উলামাদের মত। এবং আমাদের নিকট ও এটাই চুড়ান্ত রায়।
***হাফিয ইবনু ইরাকী (রাহ) ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,
২০ রাকাতের এ মতটি ই গ্রহন করেছেন ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমাদ এবং জমহুর উলামায়ে কেরাম।
রেফারেন্সঃ
১/তারহুত তাছরীব
২/আল মাজমু-৪/৩১
৩/শারহু মুনতাহাল ইরাদাত-১/২৩১
***ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,
এটা সহীহ সুত্রে প্রমাণিত যে রামাদান মাসে হযরত উবাই বিন কা’ব (রা) মানুষদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন, এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন।এবং অনেক উলামায়ে কেরাম এটাকে সুন্নাহ বলে ফতোয়া দিয়েছেন, যেহেতু উবাই বিন কা’ব (রা) মুহাজির এবং আনসার সাহাবীদেরকে নিয়ে এরকম ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। তখন কেউ এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেন নি।
রেফারেন্সঃ
মাজমু উ ফাতাওয়া-৩২/১১৩
***ওয়াহাবি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহহাব নজদীর ও একই কথাঃ
“উমার (রা) এর যামানায় উবাই বিন কা’ব (রা) এর ইমামতিতে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করা হত”।
রেফারেন্সঃ
১/মাজমু উল ফাতাওয়া আল নাজদিয়্যাহ
২/মুখতাসারুল ইনসাফ ওয়াশ শারহিল কাবীর- ১/১৫৭
***হাম্বালী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনু কুদামা (রাহ) বলেন, ২০ তারাবীহ সালাতের উপর প্রায় ইজমা হয়ে গেছে।
রেফারেন্সঃ
আল মুগনী-২/১৬৭