বেশির ভাগ ভোজ্য তেলে ক্ষতিকর উপাদান ঳ ভিডিও সহ

oil-2আশিকুর রহমান চৌধুরী

আমরা যেসব তেল খাওয়ার জন্য ব্যবহার করি, সেগুলোর বেশির ভাগেই এসিড ও ক্ষতিকর চর্বির উপস্থিতি রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত, যা নানা জটিল রোগের কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্য তেলের ওপর কয়েকটি পরীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

মুনাফার লোভে একটি তেলের সঙ্গে অন্য তেল মেশানো, ফুড গ্রেড পাত্র ব্যবহার না করা এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখার ফলে তা ক্ষতিকর হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমানে যেসব ভোজ্য তেল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কতটা নিরাপদ—সে বিষয়ে মহাখালীর ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে সম্প্রতি বড় ধরনের একটি পরীক্ষা চালানো হয়। তাতে নমুনা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় পরিচিত ব্র্যান্ড ও ব্র্যান্ড ছাড়া সয়াবিন, সরিষা, পাম তেলসহ বেশ কিছু ভোজ্য তেল। গবেষণার ফলে দেখা যায়, ৭৩টির মধ্যে ৩৪টি নমুনায়, অর্থাৎ ৪৭ শতাংশ নমুনা তেলে এসিডিটির পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। আর এসিডিটি তখনই বেশি হয়, যখন তেলে কোনো না কোনোভাবে ভেজাল ঢুকে পড়ে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির প্রধান ডা. মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘হয়তো দুটি তেলের মিশ্রণ করা হচ্ছে অথবা যে পাত্রে করে এটাকে সরবরাহ করা হচ্ছে কিংবা বাজারজাত করা হচ্ছে, সেই পাত্র ফুড গ্রেডের নয়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন তেল সংরক্ষণ করে রাখা হলে সেখানে এসিডিটি বেড়ে যায়।’

ভোজ্য তেলে এসিডিটি বেশি থাকলে তা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অল্প বয়সে চামড়ায় ভাঁজ পড়াসহ বেশ কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় দেখা যায়, সয়াবিনের ১৩ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নমুনার মধ্যে পাঁচটিতে ক্ষতিকর মাত্রায় এসিডিটি রয়েছে। আর সয়াবিনের দুটি খোলা নমুনার মধ্যে দুটিতেই ক্ষতিকর মাত্রায় এসিডিটি আছে।

সরিষার ১৯টি ব্র্যান্ডের নমুনার মধ্যে ১৪টিতে ক্ষতিকর মাত্রায় এসিডিটি আছে। সরিষার পাঁচটি খোলা নমুনার মধ্যে চারটিতেই ক্ষতিকর মাত্রায় এসিডিটি আছে। পাম তেলের দুটি নমুনার কোনোটিতেই ক্ষতিকর মাত্রার এসিডিটি পাওয়া যায়নি।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘ভোজ্য তেলের অবস্থা আসলেই খারাপ। মুনাফার জন্য একটা তেল আরেকটার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে। এতে তেলের অভ্যন্তরীণ কার্বন চেইনগুলো পরিবর্তন হয়ে যায়। যখন কার্বন বন্ডিং পরিবর্তন হয়, তখন পুরো তেলের চরিত্রই পরিবর্তন হয়ে যায়। এভাবে ভোজ্য তেলের মান পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে।’

সম্প্রতি খাবার তেলের ওপর আরেকটি গবেষণা চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ। সেখানে দেখা গেছে, প্রায় ৪০টি তেলের নমুনার মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ তেলে ক্ষতিকর চর্বি মাত্রাতিরিক্ত মেশানো হয়েছে, যা সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নীলুফার নাহার বলেন, ‘কোনো কোনো তেল আছে অনেক ভালো, কোনো কোনো তেল তেমন ভালো নয়। কিছু তেল দেখা যায়, যেটা ভুল উপাদানের মিশ্রণ বেশি। যে চর্বি থেকে সাবান বানানো হয়, সেগুলো খাবার তেলে মেশানো হচ্ছে।’

এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, বেশি তাপমাত্রার তেলে কোনো কিছু যেন রান্না না করা হয়। এক তেল বারবার ব্যবহার না করতে পরামর্শ দেন তাঁরা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *